আধুনিকতার খরশানে আজ বিস্মৃতি অতল গর্ভে মিশে যাচ্ছে গ্রামবাংলা স্মৃতিবিজড়িত কিছু গল্পকথন ! আহ্ কি যুগ ছিল সেইদিন ! জ্যোৎস্নার আঁধারে বাড়ির উঠোনে মাদুর পেতে গোল হয়ে বসে পরিবারের লোকের সাথে কত আজগুবি আলাপচারিতা হত । গল্পের কথক হিসেবে থাকতেন দাদি, দাদা, মা এবং আরও ছোটো-বড়ো ভাই-বোনেরা । কখনও কখনও বাবা এর সাথে সঙ্গ দিতেন ! গল্পের আড্ডা আরও বেজায় জমে ওঠত । ধর্মীয়গল্প, রাজা-রানির গল্প, বাঘ-ভালুকের গল্প, জ্বীন-ভূতের গল্পে আড্ডার মোহ আরও দুর্নিবারে জমে ওঠত !

কোনো কোনো গল্পের আগ্রহ তেমন বেড়ে উঠত যেমন করে গল্পের কথককে জোরদমে আরও একটি গল্প শোনার জন্য বারবা অনুনয়-বিনয় করতাম । অবশ্যই খুব বেশি আনন্দ লাগত যেটার অনুভূতি হয়তো মুখের দ্বারা প্রকাশ করা প্রায় অসম্ভব । আবার কোনো কোনো গল্পে দুঃখ-বিষাদে ছেয়ে যেত মন । হয়তো সেটা কোনো গরীবের আর্তনাদ কিংবা মূলত কাঁদার মতই গল্প । আবার কোনো গল্পে ভয়ে গায়ের রক্ত হিমশিম খেয়ে ওঠত ! যেমন - ভূত-প্রেত কি'বা আরও হরেক রকম অলৌকিক গল্প ৷ এককথায় শৈশবের এক অসাধারণ অনুভূতি ! হারিয়ে যাওয়া এই গল্পকথার স্মৃতিগুলো মনের মধ্যে অব্যক্ত রূপে আজীবন গেঁথে থাকবে ।

গ্রামবাংলাতে সেই শৈশবের রূপকথাগুলো কখনও আবার ফিরে আসবে না । আর বর্তমান যুগেও এসবের কোনো চালচলন আর নেই । সবাই নিজে নিজে হাতের নাগালে মোবাইল টিপে টিপে একান্তে কত গল্প জমাচ্ছে ! কিন্তু নেই সেই স্মৃতিমাখা আস্বাদন ! নেই সেই রঙ্গ ও রস ! নেই সেই জমিয়ে উঠা পরিজনের সাথে আলাপন ! কালের বিবর্তনে সামাজিকীকরণের এই রূপটা অচিরেই ছন্নছাড়া হয়ে নিঃসঙ্গতায় পরিণত হয়ে যুবসমাজকে একান্ত ভাবনার নেশায় মোহিত করছে ।

এর থেকে অনুধাবন করা যায় বর্তমান যুগের সাথে সঙ্গত রেখে এর সবচেয়ে বড়ো উপকারিতা হচ্ছে সামাজিকীরণ (Socialization) যেটা বর্তমান নতুন শিক্ষা নীতিও এর উপর বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে । শৈশবে এধরণের আলাপচারিতা থেকে সামাজিকীকরণের অনুভাবটা খুঁতখুঁতে ফুটে ওঠত । বাচ্চাদের মন-মানসিকতার সর্বদা হাস্যজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ থাকত । একাকিত্বের ভাবনা থেকে দূরে সরে সামাজিক ভাবে মিশে থাকাটা এক মানবিক গুণ । কিন্তু বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় পরিজনের সাথে সেই আড্ডা অনুষ্ঠানে কেই সঙ্গ দিতে চায় না বা এই রেওয়াজটাও নেই ! হয়তো আধুনিকতার এই অতিরিক্ত বাড়-বাড়ন্ত আমাদেরকে গ্রাস করে বসে আছে । পরিণামটাও বেশ ভালো হবে বলে আশা রাখা যায় না....!!

@মামনুর_ফকির