আদরিনী
     তপন কান্তি দাশ

বাড়ির, সবার ছোট মুনা,
চৌকাট ‘পরে দাঁড়িয়ে থেকে
বাবাকে সে যাচ্ছে বকে,
“যাচ্ছো কোথায় বাড়ী থেকে ?
মানতে হবে এখন থেকে
আমার আদেশ নামা “।

বাবা, অবাক হলেন তখন ,
নিজেরমাথায় চিন্তা এলো
মেয়ে, কখন বড় হলো
মায়ের শাসন মেয়ে নিলো
স্নেহের সুরে বলে দিলো
কথা, শুনতে হবে এখন।

সেই, ছোট্ট সোনামণি ,
বাবার কাছে মনে হয়
ছেলে-মেয়ে বড় নয়
লোকে যখন ডেকে কয়
মেয়ে তোমার ছোট নয়
বাবার, হুশ ফিরে তখনি।

মেয়ে, হয়ে গেল মা ,
মায়ের যত আদর পায়
ছোট্ট শিশু বোকার ন্যায়
বাবার ‘পরে ফলাতে চায়
আদর মাখা শাসনটাই
যেমন, করতো নিজের মা ।

যখন, মেয়ে ছোট ছিল ,
বাবার চোখ টিপে দিয়ে
মিছিমিছি হাসি দিয়ে
পাশে শুতো পুতুল নিয়ে
কানে সুড়সুড়ি দিয়ে
ঘুম, অনেক ভেঙ্গে ছিল ।

বাবা, কাজে যখন যেতো ,
মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে
টিফিন বক্স নিজে ভরে
দাঁড়িয়ে থেকে চৌকাট ‘পরে
মুখটা দিতো মুখের ‘পরে
তখন, একটা চুমু দিতে হতো।

সেদিন, ফিরে কি আর পাবে,
ছোট্ট ঠোঁটের আপ্পু দেওয়া
কোলের উপর বসে যাওয়া
থালার থেকে কেড়ে খাওয়া
হাত পেতে টাকা নেওয়া,
বলতো, ফেরত নাহি দেবে ।

বাবা, স্বপ্নে দেখতে পায় ,
প্রকৃতির নিয়ম মেনে
কোন এক শুভক্ষনে
আনন্দ তার কায় মনে
সুন্দর এক পাত্রের সনে
মেয়ের’ বিয়ে হয়ে যায় ।

বাবার, চোখ ঝাপসা হয়ে যায় ,
হেলান দিয়ে কেদারাতে
বসে, ভাবে বলে দিতে
কোথাও হবেনা যেতে
আমার এই বুক হতে
স্মৃতি তখন শাসক হয়ে যায়।

স্বপ্ন, যখন ভেঙ্গে গেল ,
দাঁড়িয়ে দেখে মাথার ‘পরে
মেয়ে বাবার হাতটি ধরে
বলল তখন করুন সুরে
ছিলে তুমি ঘুমের ঘোরে ?
বাবা সম্বিত ফিরে পেল।

বাবার, হৃদয় ভেঙে যাবে ,
রেখে ছিল যতন করে
হৃদয়ের সেই মনিটারে
মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে
মুক্ত করে ও দিলে পরে
মনের ব্যথা মনে থেকে যাবে ।