যে মানুষটা ঘরে ফিরতে চেয়েও ঘরে ফিরতে পারেনি
অথবা সে ফিরতে চেয়েও পথ খুঁজে পায়নি
কিংবা কোথাও তার ঘর নেই
আপনজন নেই
আত্মীয় স্বজন বলতে যা কিছু বুঝায় তেমন কেউই নেই
এই পৃথিবীতে সে কেবলই ধুলোবালির মতো ভেসে বেড়াচ্ছে।
সে ধীরে ধীরে ভাসছে,
আপনা আপনি ভাসছে, ঝড়ের টানে ভাসছে
তাকে নিয়ে এই পৃথিবীর বুকে কোনো কথা নেই
আলাপ নেই আলোচনা নেই আলোড়ন নেই
নেই কোনো করুণার বাণী
সভ্যতার পথ যাত্রায় সত্যতার উন্মোচন নেই
আছে তো আছে কেবল উপড়ে ফেলার কথা ঝেড়ে ফেলার কথা
যেমন কথা হয় উড়ে আসা ধুলোবালিকে ঝেড়ে মুছে শাপ করার ব্যাপারে।
সে মানুষটা উদ্বাস্তু হয়ে ঘুরে বেড়ায় পথে প্রান্তরে রাস্তায়, ফুটপাতে, স্টেশন চত্বরে বস্তিতে; আনাগোনা থাকে সংসদ ভবনের আঙ্গিনায়, গলির অন্ধকারের অনিয়মে
সে ঘুরঘুর করে খাবারের দোকানের আশেপাশে
হাসপাশ করে খাবারের আশায়
যেখানে ইচ্ছে ঘুমিয়ে পড়ে
সে ঘুমায় গ্রীষ্মের তপ্ত ফুটপাতে
শীতের ঝিম ধরানো হিমশীতল রাস্তায়
তার মনোবল এতোটাই শক্ত যে তাকে ভাঙ্গতে পারে না
তাকে ভাঙ্গতে পারেনা কোনো বৈরী আবহাওয়া।
পৃথিবী তাকে প্রিয়জন দিতে পারে নি, তাই তার কোনো পিছুটান নেই
কেননা, জন্ম লগ্ন সম্পর্ক তাকে কোনো ঘর দিতে পারেনি
সে জননীর স্নেহ হয়তো কখনো কখনো পেয়েছে
জানা হয়নি জনক কে, জনকের স্নেহ কেমন
জনক কিভাবে হাসে, কিভাবে সে হাসায়
জনক কিভাবে কোলে তুলে নেয়
জনকে কিভাবে মুখে খাবার তুলে দেয়
জনক কিভাবে আদর করে কাছে ডাকে
জননীর কণ্ঠ প্রতি প্রশ্নে অবনত থেকে অবনত হয়েছে।
এতোকিছু নেই জেনে ও তার মনোবলে বয়ে চলে দৃঢ়তার জয়জয়কার
তাকে কেউ ভাঙ্গতে পারে না
সে নুড়ে যায় না
সে হেরে যায় না।
মানুষটা কিংবা মানুষগুলো বন্ধন শূন্য শূন্যতার মধ্যেই বেঁচে থাকে;
এই সত্যিতে চরম সত্যি এই যে
পৃথিবীতে শূন্যতার থেকে বড়ো কোনো সত্য নেই সত্যতা নেই
কোনো পৌরুষের বীর্যে তার জন্মসূত্রের কথা সত্যি
জননীর গর্ভে ধারণের কথা সত্যি
জননীর প্রসব বেদনার কথাও মিথ্যে নয়
সত্যি এ ও সে যান্ত্রিক নয়; শিরায় উপশিরায়,
প্রতিরক্ত ধমনিতে বইছে দুটো নরনারীর রক্তের ধারা
তবুও বেজন্মার নামক শব্দের মিথ্যাচার তাকে সহে যেতে হয়।