(যে কথাগুলো আমরা বলতে পারি না অথবা বলতে ভয় পাই, মূলত সেই সব না বলা কথাগুলোর কিছু কিছু উদাহরণ এখানে দেওয়া আছে।)
১
মাননীয় অভিভাবকগণ,
আপনারা শিশুদের যে মারধর করছেন,
আপনারা শিশুদের যে বকা দিচ্ছেন,
ওদের অন্যের সাথে তুলনা করছেন,
ওদের মনে ছড়াচ্ছেন কঠিন চাপ আর ভ্রান্ত ধারণার বিষ,
একবার ওদের একটু জিজ্ঞেস করুন তো,
ওরা আসলে কী চায়?
ওরা চায় না আপনাদের এই অত্যাচার সহ্য করতে।
ওরা চায় না আপনাদের মতো করে বাঁচতে।
ওরা চায় একটু স্নেহ, ভালবাসা, পূর্ণ স্বাধীনতা।
ওরা চায় মানুষকে ভালবাসতে।
ওরা ভালবাসারই কাঙাল হয়ে বাঁচে।
রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং বলেছিলেন,
"এই বয়সেই (১৩-১৪ বছর)
স্নেহের জন্য কিঞ্চিৎ কাতরতা মনে জন্মায়...
স্নেহ করতে কেউ সাহস করে না,
কারণ সেটা সাধারণে প্রশ্রয় বলিয়া মনে করে।"
আপনারা বোঝেন না ওদের জীবনের মর্ম।
আপনারা জানেন না ওরা সত্যি কী চায়।
আপনারা জানেন শুধু শিশুহত্যা, শিশুধর্ষণ করতে।
আপনারা মা-বাপ হওয়ার যোগ্য একেবারেই নন।
আপনারা নেতা, গুণ্ডাদের মতনই শয়তান।
এই সময়ে দাঁড়িয়ে এখন
নিজেকে সন্তান বলে মানতে এত লজ্জা করে।
আপনাদেরও লজ্জা থাকা দরকার।
পাপের বোঝা আপনাদের বইতে হবে।
পথে বসতে হবে আপনাদের।
ধিক আপনাদের! ধিক!!!
২
বলতে পারো,
প্রতিযোগিতায়, স্কুল কলেজের বেঞ্চে বসতে
ছেলে মেয়েদের কেন আলাদা করা হয়?
কারণ —
এ সমাজ ছেলে-মেয়ে সম্পর্ক মানে না,
দেখতে চায় না, বিশ্বাস করে না।
বোঝে না —
ওরা ভালবাসার কাঙাল।
ওরা ভালবাসতে চায়
প্রেমের গানে, চুম্বনে, আলিঙ্গনে, শরীর ছোঁয়ায়।
এ সমাজ নারী পুরুষদের খোঁজখবর রাখে,
কিন্তু ছেলে মেয়েদের হৃদয়ের কোনো খবর রাখে না।
মনে করে— "বালাই ষাট।"
কেন যে এরকম হয়ে থাকে?
কেন যে এরকম চলে?
সমাজ নিজেই বোঝে না।
৩
কথায় বলে,
গান মানুষের অন্তরসত্ত্বা,
গান মনে শান্তি আনতে পারে
কথায়, সুরে, কণ্ঠে।
আমার প্রশ্ন—
"কী ধরণের গান আনন্দ দেয়?
প্রতিবাদী গান?
প্রেমের গান?
নাকি rap?
Cringe যত গান?"
এখন সব গান যে ভালো হয়, তা নয়।
বেশিরভাগ গান মনে, কানে ছড়ায় বিষ।
শুনে শুনে মগজ আগুনে জ্বলে,
কান পেকে ঢোল।
সেসব গানের মানে বোঝা ভার।
সুরের মাঝে খারাপ যত beats...
যা লিরিক্স...
বলে বোঝানো দায়।
সময় যত পাল্টেছে, সবই বদলেছে।
গান কিন্তু বাদ যায় না।
গান এখন কিছুটা অমৃতে, কিছুটা বিষে ভরা।
তবু মনে প্রশ্ন জাগে —
"কী ধরণের গান শান্তি আনে?
প্রতিবাদী গান?
প্রেমের গান?
নাকি rap?
Cringe যত গান?"
৪
ছেলেরা,
তোমরা মেয়েদের ইমপ্রেস করতে এত শো অফ করো—
ছাপরি ড্রেস, ছাপরি হেয়ারস্টাইল, ছাপরি মুখের ভাষা।
এসবেই বুঝি মেয়েরা ইমপ্রেস হয়?
একটু পরে প্রেমে পড়ো, প্রেমের গান গাও, চুম্বন করো।
অনেক পরে — ঘটে বিচ্ছেদ, খাও ধোঁকা।
তারপর ডিপ্রেশনে চলে যাও।
অথচ সেই তোমরা মেয়েদের ওপর অত্যাচার করো—
এদের ধর্ষণ করো, গালি দাও, গায়ে হাত তোলো।
এটা কি তোমাদের ভালবাসার নমুনা?
মেয়েদের ধোঁকা খাওয়ানোর শর্টকাট?
এই তোমাদের প্রেম? হিরোগিরি?
সত্যি, you deserve our respect.
স্যালুট তোমাদের।
আর মেয়েরা,
তোমাদের আর কত বয়ফ্রেন্ড পছন্দ?
যাদের তোমরা ভালবাসো, যারা তোমাদের বয়ফ্রেন্ড,
তাদের সাথে কি এক মুহূর্তেও থাকা যায় না?
এক মুহূর্তের জন্য ভালবাসা যায় না তাকে?
না।--- অন্য যে ছেলেদের পছন্দ,
তাদেরও বয়ফ্রেন্ড করে তুলতে হবে
পুরোনো বয়ফ্রেন্ডদের ছেড়ে দিয়ে।
আর সেই তোমরা আবার
ছেলেদের মুখের ভাষায় অপমানও করো,
তাদের স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে কথা বলো,
তাদের খারাপ বলো।
এভাবেই একের পর এক ছেলে ডিপ্রেশনে চলে যায়,
আত্মহত্যা করতে সক্ষম হয়।
কারোর ভুলে গেলে চলবে না —
আমরা ছেলেরাও হৃদয় থেকে অত্যাচারিত।
মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের কথাও মুরুব্বিরা বলুক—
আমরা চাই।
মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদেরও স্থান থাক পাঠ্যবইয়ের পাতায়—
আমরা চাই।
আমি ছেলে মেয়েদের রাগে ভেঙে দিতে চাই না
এইসব না বলা কথা বলে।
আমি শুধু শোনাই ওদের সম্পর্ক-বিচ্ছেদ কাহিনী,
যা মুরুব্বিরা যুগে যুগে অবহেলা করে চলেছে।
৫
আমি সবসময় শুনি—
পড়াশোনায় মন থাকে না তো কোনখানে থাকে?
মাঝে মাঝে ভাবি—
মন যায় 'হযবরল'-র জগতে,
বাস্তব জগতে,
আবার ভবিষ্যৎ জগতে,
যার জন্য মানুষের এত আশা, এত কথা।
এসবের কথা ভাবতে ভাবতে
আমি যেন হারিয়ে যাই নিজের বাড়ির জগৎ থেকে।
ফিরতে ইচ্ছে করে না। করবেও না।
মাঝে মাঝে কবিতার কথাও ভাবি।
সে তিন বছর ধরে আমার ভালবাসা, আনন্দের উৎস।
অনেক বছর ধরে আমি চাই কবিতার মাঝে হারিয়ে যেতে
সব কাজ, সব ভাবনা ফেলে।
চাই কবিতার ঠোঁটে চুমু খেতে,
কবিতাকে আলিঙ্গন করতে।
জানি সে কখনোই আমাকে ছেড়ে যাবে না।
আমিও যাব না।
(২৪/১১/২০২৩)