মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী,
শুরুতে আপনাকে জানাই
প্রণাম, শ্রদ্ধা, ইনশাল্লাহ, খোদা হাফিজ, হালেলুইয়া।
আপনি আমাদের মহারাণী।
বাংলার সমস্ত ভার আপনার হাতে।
প্রকল্পের মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করা,
কোন দিন, কবে থেকে কবে অবধি
সরকারী-বেসরকারী সংস্থাগুলোয় ছুটি থাকবে—
এসব কিছু কেবল আপনিই ঠিক করেন।
আমরা বাংলার সকল নাগরিক
আপনার কথা মতো চলি।

কাল একুশে জুলাই —
আপনাদের কাছে এক স্মরণীয় দিন —
ওদিন তৃণমূলের শহিদ দিবস বলে
সরকারী-বেসরকারী স্কুলগুলোয় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে আমার স্কুলে কাল অনলাইন ক্লাস হবে।
একুশে জুলাই আসছে বলে
শহরের আকাশের নীচে,
অলিগলিতে, আনাচে-কানাচে
মাইকে মাইকে বাজছে
"জয় মা-মাটি-মানুষের জয়" ধ্বনি,
"খেলা হবে! খেলা হবে!" ধ্বনি।
পোস্টারগুলো নজর কাড়ছে,—
ঠিক‌ দুপুর বারোটার সময় হবে শহিদ স্মরণ।
সারা কলকাতা কালকের দিনটার জন্য অপেক্ষা করছে,
দেখতে চায় আপনাকে ধর্মতলার মঞ্চে দেখতে।
বেশ, খুব ভালো।

তবে, যে জন্যে আপনাকে এই কবিতা,
সেটা বলে ফেলি।
আজকের দিনে
মহান এই শহিদ দিবসের জন্য উন্মাদনার মধ্যে
কয়েকটা প্রশ্ন আছে আপনার কাছে।
আমি প্রশ্নোত্তরের আশায় থাকতে চাই।

প্রথম প্রশ্ন—
আমাদের শহিদ দিবস পালিত হয়
শহীদদের সম্বন্ধে দু-চারটে কথা বলে,
তাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে গান গেয়ে, কবিতা পাঠ করে।
কিন্তু আপনাদের শহিদ দিবস তো একেবারেই অন্যরকম।
আপনারা তৃণমূলের নেতাগণ
শহিদদের সম্বন্ধে কথা না বলে
শুধু দলের কথা বলেন,
আর বিরোধী দলগুলোকে দোষ দেন অনুন্নয়নের জন্য।
এ কেমন শহিদ দিবস বলুন তো?
একুশে জুলাইয়ের বিশেষ দিনটাতে
"শহিদ স্মরণ" কথাটার কি কোনো মানে নেই?
এ কেমন শহিদ স্মরণ?

দ্বিতীয় প্রশ্ন —
আপনাদের উদযাপিত এই দিনটাকে যে
"শহিদ দিবস" বলা হয়,
এখানে শহীদ কারা?
আমরা কাদের শহিদ হিসেবে জানি?
ভগৎ সিং, সুখদেব,
চন্দ্রশেখর আজাদ, ক্ষুদিরাম, সূর্য সেন —
যারা নিজেদের জন্যে নয়,
বরং দেশের জন্য আত্মবলিদান করেছিলেন।
কিন্তু আপনাদের শহিদগণ—
বন্দনা দাস, মুরারী চক্রবর্তী, রতন মণ্ডল,
কল্যাণ ব্যানার্জী, বিশ্বনাথ রায়, অসীম দাস,
কেশব বৈরাগী, শ্রীকান্ত শর্মা, দিলীপ দাস,
রঞ্জিত দাস, প্রদীপ দাস, মহম্মদ খালেদ, এবং ইনু—
এঁরা তো কেবল আপনাদের জন্যই
পুলিশের মার খেয়ে প্রাণ দিয়েছিল।
এঁরা কি "দেশের" শহীদ?
এঁরা কি সত্যিকারে শহীদ?
আমার তো মনে হয় না।

তৃতীয় প্রশ্ন—
বলুন তো মহাশয়া,
একুশে জুলাই দিনটার এমন কী গুরুত্ব আছে,
যে সরকারী-বেসরকারী দপ্তরগুলোয়/সংস্থাগুলোয়
ছুটি ঘোষিত হয়?
মানুষ কি এই দিনটার ইতিহাসের ব্যাপারে জানতে আগ্রহী?
একদমই না।
আমি যতদূর জানি —
উনিশশো কত সালে (ঠিক মনে নেই আমার)
মহাকরণের সামনে আপনাদের মিছিল হয়েছিল বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে।
পুলিশ ওই মিছিলে অংশগ্রহণকারী নেতা/প্রার্থীদের দিকে
রাইফেল তুলেছিল, লাঠি দিয়ে পিটিয়েছিল তাদের।
কিন্তু এটা তো স্বাভাবিক।
হতেই পারে।
এই ইতিহাস নিয়ে আপনারা কেন এত গর্ব করেন?
এত সামান্য একটা ঘটনার জন্য ছুটি ঘোষণা করতে হয়?
এ কেমন দিনকাল?
কোনো রাজ্যে তো এরকম হয় না।

চতুর্থ ও শেষ প্রশ্ন—
যে ধর্মতলায় আপনারা শহিদ স্মরণ করেন,
সেই ধর্মতলা কত কিছুর নীরব সাক্ষী হয়েছে!
চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন,
তাদের চাকরির দাবীতে রাস্তায় দিনরাত বসে থাকা।
কিন্তু আপনি তাদের কোনোরকম চাকরি দেননি।
ওরা এখন আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে,
বাইরের রাজ্যে যাচ্ছে চাকরির খোঁজে।
অথচ সেই ধর্মতলায় আপনারা বিপুলভাবে
শহিদ স্মরণের, এমনকি দলের বিপুল জয়ের উন্মত্ততায় মাতেন।
আমাদের কথা কি একটুও ভাববে না আপনাদের সরকার?
আপনারা কি সত্যিই ভুলে গেছেন,
যে আপনারা গণতান্ত্রিক দেশে বাস করছেন,
তাই আপনাদের সরকার গণতান্ত্রিক থাকা উচিত?
মানুষের ইচ্ছে পূরণ করা উচিত?
উল্টে আপনারা স্বৈরতন্ত্র চালাচ্ছেন,
মানুষকে নিয়ে খেলছেন।
কেন আপনারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারছেন না?
কেন আপনারা ক্ষমা চাইছেন না?
কেন আপনারা নিজেদের ভুল শুধরাতে পারছেন না?
আপনাদের শহীদরা সহজেই আত্মমর্যাদা হারিয়েছে।
ফলে তাদের কথা আপনাদের একটুও মনে থাকে না।
মা-মাটি-মানুষ, বাংলা মা
আপনাদের একদিন নিশ্চয়ই অভিশাপ দেবে।
আপনাদের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।
আপনাদের ভুল বুঝে নিতে হবে,
নিজেদেরকেই দোষ দিতে হবে,
অন্যদের নয়।


(২০.০৭.২৩)