প্রথমেই,
মেয়েদের জীবন খুব কঠিন হয়।
(শুধু "খুব কঠিন" নাকি "কঠিনতর"?)
একটি মেয়ে যখন নবজাতক হয়,
সে আনন্দ ফুর্তি করে বাঁচে,
ভাবে— জীবন তার খুব সহজ, খুব ভালো।
কিন্তু যখন সে বড় হতে শুরু করে,
তার চুল লম্বা হতে শুরু করে, স্তন গড়তে শুরু করে,
তার জামাকাপড়ের ধরণ বদলায়
তখন সে বুঝতে শুরু করে—
না, জীবন তার সহজ মোটেই নয়,
যেমনটা সে ভাবতো ছোটবেলায়।
প্রতিটি মেয়েদের জীবন খুব কঠিন থেকে কঠিনতর হয়।
পরিণত বয়সে তারা যখন একা একা হাঁটে রাস্তাঘাটে,
বা একটু জিরিয়ে নেয় রাতে,
তখন তাদের মনে হঠাৎ জন্ম নেয় ভয়—
নিরাপত্তাহীনতার ভয়, পরাধীনতার ভয়।
চারপাশে ঘুরে বেড়ানো কয়েকটা "ছেলে" হায়না এগিয়ে আসে
তাদের পরিণত ঐ শরীরের গোপন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ছুঁতে,
তাদের ধর্ষণ করে খুন করতে।
বড় হওয়া মেয়েটার মা-বাবা চিন্তা করে,
"মেয়েটা এখনো বাড়ি ফিরছে না? কী ব্যাপার?"
যখন তারা জানতে পারে— তাদের সন্তানকে খুন-ধর্ষণ করা হয়েছে,
তখন...

তারপর,
ভিন্ন ধর্মের মানুষদের (বিশেষত হিন্দু মুসলিমদের) জীবন খুব কঠিন হয়।
সারা দেশে হিন্দুত্ববাদের রাজনীতি, হিন্দু আধিপত্যবাদের বিষ।
মনে করা হয়— "এটা হিন্দুস্তান,
তাই ভারত কেবল হিন্দু রাষ্ট্র,
এখানে অন্য কোনো ধর্মের মানুষের বাঁচার অধিকার থাকতে পারে না।
প্রয়োজনে মুসলিমদের মেরে ফেলো, খুন করো
আর আমিষ খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ করো।"
মুসলিমরা এমনি এমনিই খুন হয়না, খুন হয় সন্দেহে।
এক মুসলিম মায়ের প্রশ্ন— "মুসলিম হলেই কি মেরে ফেলা যায়?"
কিন্তু অন্যদিকে
হিন্দুরাও খুন, নির্যাতিত হয় মুসলিমদের হাতে।
খুনের বদলা খুন— এসব দেখে মনে হয়
ভারত কোনো হিন্দু রাষ্ট্র নয়, মুসলিম রাষ্ট্রও নয়,
এটা হল খুনের রাষ্ট্র,
যেখানে তুমি খুন করলে তুমি খুন হবে।
হায় আমার ধর্ম! হায় আমার জন্মভূমি!

ছেলেরাও কিন্তু নির্যাতনের শিকার হয়।
তবে সে নির্যাতন হয় মানসিক।
যত তাদের বয়স বাড়ে, ততই একটু একটু করে গ্রাস করতে থাকে
নিরাপত্তাহীনতা, অবসাদ, আত্মহত্যার চিন্তাভাবনা।
স্কুল, কলেজ, হস্টেল যেখানে সেখানে
একটি পরিণত বয়সের ছেলে সাক্ষী হয় ragging-এর।
তবে বর্তমান সুশীল সমাজ
পুরুষ নির্যাতন নিয়ে ততটা ভাবে না,
যতটা নারী নির্যাতন নিয়ে ভাবা হয়।
এছাড়াও, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে
ছেলেদের মনে জন্মায় এক অদ্ভুত প্রেমের বোধ পছন্দসই মেয়েদের প্রতি।
তবে সে প্রেম বেশিদিন টিকতে পারে না।
কিছুদিন পর সেই পছন্দসই মেয়েটি অভিনয় করে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে
অন্য কোনো ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যায়।
(পালিয়ে যাওয়া নিয়ে সমাজে খুব মাথাব্যথা)
এটাই বেশিরভাগ ছেলেদের অবসাদের কারণ।
এই অবসাদের অসহ্য যন্ত্রণায় আত্মহত্যা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।

সুতরাং,
প্রতিটি মানুষের বেঁচে থাকা মানেই
ভয়, পরাধীনতা, নিরাপত্তাহীনতা, দুঃখ-যন্ত্রণা।
লোকে বলে, বেঁচে থাকা সুন্দর, জীবন সুন্দর।
এটাই কি বেঁচে থাকার সৌন্দর্য? মনে হয় না।
তাই, "সুন্দরের মন খারাপ, মাধুর্যের জ্বর"।


(০৫/১০/২৪)