(কয়েকটি কথা:
মালদায় বৃষ্টি পড়েছিল বিকেল পাঁচটা থেকে। তখন অতটা ঝমঝমিয়ে পড়েনি। আমি বৃষ্টির আওয়াজ পেয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বারান্দায় এসে দেখেছি— বৃষ্টি পড়ছে। একটু পরে সেখান থেকে বেরিয়ে জানলার কাছে চেয়ারে বসে লিখতে শুরু করেছি। দ্বিতীয় স্তবকটি লিখেছিলাম সাড়ে পাঁচটায়। তখনই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছিল। তারপর সন্ধে ছটায় থেমে গেছে। এই সময়ে আর কোনো পুরোনো কথা মনে করতে পারিনি। শেষ স্তবক লিখতে গিয়ে একটু বিরতি নিই। আবার বৃষ্টি পড়তে শুরু করে ৬:২৪-এ। কিছুক্ষণ পর আবার ঝমঝমিয়ে পড়ে, এখন ৬:৬২-তে মৃদুভাবে পড়ছে। বাজ পড়েছে একবারই।
যতক্ষণ বৃষ্টি পড়েছে, ততক্ষণই লিখতে লিখতে মনে ভিড় করেছে কিছু কথা। সবকিছু তো মনে থাকে না, তাই সব কথা লেখা হয়নি।
কাগজ নৌকো ভাসানোর কথা বলতে গিয়ে যে সময়ের মহামারির কথা এখানে বলেছি, সেটা ২০২১ সাল। তারপর নর্দমা, স্কুলের ও বাড়ির কথা ২০১৬-১৭ সালের। এই কথাগুলোই এতক্ষণে মনে পড়ছিল। তারপর আর না।)

বৃষ্টি তো শুধু জলবিন্দু নয়,
যেন কত স্মৃতি বয়ে আনে।
বৃষ্টি পড়তে দেখলে, "বৃষ্টি"
শব্দটা শুনলে হই আনমনে।
জানি না কেন,
তবু যেন
এই বৃষ্টি হয়ে ওঠে সার্থক।
একটু পুরোনো কথা তবে হোক।

এখন বৃষ্টি পড়ছে দেখো কেমন ঝমঝমিয়ে।
কালও হয়েছে বৃষ্টি। সময়টা যাচ্ছে জমিয়ে।
বারান্দায় জল পড়ছে, ভিজছে কত সব।
এখন হঠাৎ বাজছে মনে তাথৈ তাথৈ রব।
বলে ফেলি পুরোনো কথা এবার
যা কিছু মনে পড়ে বারবার
হাজারবার!
কী বলব আর?

তিন বছর আগে কলকাতার রাস্তা
যখন ভেসেছিল বৃষ্টির জমা জলে,
আমি তখন ভাসিয়েছিলাম কাগজ
নৌকা, দুলতে দুলতে গেছিল চলে।
তখন তো ছিল বিশ্বগ্রাসী কোভিড—
নিয়ে এসেছিল তার দ্বিতীয় প্রবাহ,
তবু মৃত্যুভয়ের মাঝে আনন্দ ছিল—
সেভাবেই সময় কাটিয়েছিল কেহ না কেহ।

তারপর আর কী? সেই ছোটবেলায়
নর্দমার উপরেই "হাঁটি হাঁটি পা পা"—
একবার পড়েও গিয়েছিলাম সেই নর্দমায়—
তারপর কী হয়েছিল, যাবে না বলা।
আবার কচি দুটো হাত দিয়ে হাওয়ায়
উড়িয়ে দিতাম যত বালি আর ধুলো—
কেউ একজন বলত, "করিস না এটা।"
লিখতে লিখতে মনে আসছে স্মৃতিগুলো।

মাঝে মাঝে বন্ধুদের প্রতি রাগ হলে
মনে হত, বদলে দিই নিজের নাম।
করতাম কান্নাকাটি, ফেলতাম কত জিনিস,
বেশিরভাগ সময়ে অত্যন্ত রাগ করতাম।
তখন তো বাবার সঙ্গে সুর করে
বাংলা পড়তাম, পারতাম না অঙ্ক,
ভালো রেজাল্ট পেতাম না, নম্বরও ভালো
ছিল না, পরিবারে এনে দিতাম কলঙ্ক।

বৃষ্টি থেমে গেছে, আমার এখন যত
পুরোনো কথা ছিল বাকি, তার কিছুই
মনে আর পড়ছে না, লেখা যাচ্ছে না আর
অত বেশি, এখানেই শেষ করতে চাই।
আবার পড়ছে জলবিন্দু, একটু কম করে,
গ্যাসের আলো জ্বলে উঠেছে। এখন
সন্ধে হয়েছে, তবু আকাশ হচ্ছে সুন্দর।
আজকের মতো থাক— বারবার বলছে মন।


(30/06/24)