(Based on "পথের পাঁচালী"
উপন্যাসের দুর্গা টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল ও বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছিল। কিন্তু চলচ্চিত্রে যিনি দুর্গার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, সেই উমা দাশগুপ্ত ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন, গত ১৮/১১/২০২৪ তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছিলেন। এই দিক থেকে কবিতায় দুর্গাকে ভিন্ন রকমভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আর অপুর ভূমিকায় যিনি অভিনয় করেছিলেন, সেই সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় এখনো বেঁচে আছেন। তাই সেই চরিত্রকে উপন্যাসের মতোই উপস্থাপন করা হয়েছে।
দুর্গার আত্মার শান্তি কামনা করি।)
কী রে অপু? কেমন আছিস?
তোর মা-বাবা, তোর ঘরসংসার কেমন চলছে?
এখনও বুঝি তুই দারিদ্রের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিস।
কী আর করা যাবে বল?
লোকে যতই বলুক আমাদের দেশ ধনী হচ্ছে ধীরে ধীরে,
গরীবী এখনো আছে।
যাক গে সেসব কথা।
তোর কি মনে আছে সেই দিদিটার কথা?
সেই দুর্গা?
যার সঙ্গে তুই বাগানের আম কুড়োতে গিয়েছিলি
আর বৃষ্টি যখন পড়েছিল,
তখন দুজনে মিলে ছড়া আবৃত্তি করেছিলি "বৃষ্টি তুই থেমে যা" বলে?
যার সঙ্গে তুই কাশবনে ছুটে এসে রেলগাড়ি দেখেছিলি?
সেই রেলগাড়ি থেকে বেরিয়েছিল এত্তা বড়া বড়া ধোঁয়া।
তুই কত কিছু করেছিলি দুর্গা দিদির সঙ্গে,
মনে আছে তো?
তখন তুই ছোট ছিলি।
এখন তুই বড় হয়েছিস।
নিশ্চয়ই তুই লেখাপড়া করছিস দারিদ্রের মধ্যে থেকে।
আর নিশ্চয়ই তুই দিদিকে ভুলে যাসনি। বেশ।
আজকে যে খবর তোকে শোনাব,
সে খবর অত্যন্ত খারাপ, বেদনাদায়ক।
আমি জানি, তোরও খারাপ লাগবে, তবু খবরটা শোন।
তোর সেই দিদি আজকে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।
বিশ্বাস হচ্ছে না? মনে হচ্ছে এটা মিথ্যে?
না রে! এটা সত্যি!
দুর্গা দিদির ক্যান্সারে মৃত্যু হয়েছে।
খারাপ লেগেছে না শুনতে?
আমারও খারাপ লেগেছে এ খবর শুনে।
খারাপ আমাদের সবার লেগেছে।
তবু, এটাই পৃথিবী, এটাই সময়, এটাই জীবন।
বড় হয়েছিস অপু।
বেশি দুঃখ না করে তোকে ব্যাপারটা বুঝতে হবে।
তবেই তুই জীবনে এগোতে পারবি
অর্থনৈতিক দুরবস্থাকে পিছনে ফেলে।
বড় হতে হতে মানুষ অনেক কিছু ভুলে যায়।
কিন্তু তুই বোধহয় ভুলে যাসনি তোর ছোটবেলা, তোর দুর্গা দিদিকে।
ভুলে যাস না কিন্তু, নইলে স্বর্গ থেকে দিদি খুব রাগ করবে!
দিদি হয়তো আর ফিরে আসবে না।
তুই হয়তো আর তাকে ফিরে পাবি না,
কিন্তু তোর মন জুড়ে থাকবে সে।
তুই শুধু চেষ্টা কর তাকে ভুলে না যাওয়ার।
আমরাও যেন দুর্গাকে ভুলে না যাই,
ভুলে না যাই অপু-দুর্গা সম্পর্ক আর সেই উপাখ্যান,
যা কবে তৈরি হয়েছিল।
(১৮/১১/২০২৪)