প্রিয় কবি, তুমি কি আজ চলে গেলে
নারী, রমণী, রানা, হেলেন-কে ছেড়ে?
তোমার জন্মভূমি জুড়ে এখন দারুণ ‘অগ্ন্যুৎসব’
ধর্মীয়, রাজনৈতিক আগ্রাসনের।
প্রেমের অগ্ন্যুৎসবের প্রাক্কালে তুমি হেলেনকে বলেছিলে,
"জানো হেলেন, আগুন দিয়ে হোলি খেলায় দারুণ আরাম
খেলবো দু'জন এই শপথে
এসো স্ব-কাল শুদ্ধ করি দুর্বিনীত যৌবনেরে।"
আজ হেলেন নিঃস্ব হলো,
হোলি খেলা আর হবে না।
হেলেনের যৌবন কাঁদছে এখন,
কারণ তুমি এখন হয়ে গেলে ‘ধ্রুবতারা’।
তুমি স্বৈরতান্ত্রিক শাসকের চোখে চোখ রেখে
সাহস করে বলতে পেরেছিলে—
"নিউট্রন বোমা বোঝো
মানুষ বোঝো না"
এখন তোমার দেশের যা অবস্থা,
(অথবা, "এখন পৃথিবীর যা অবস্থা,")
তাতে কোনো ‘হেলাল হাফিজ’ কি আর জন্ম নেবে?
শাসকরা কি আর মানুষ বুঝবে?
তোমার দেশ যখন জ্বলছে ক্রোধের আগুনে,
তখন তুমি এই বিভীষিকাময় রাতের আকাশে
হয়ে গেলে ‘ধ্রুবতারা’।
তুমি কথা রেখেছিলে,
"এবার রানা তোমায় নিয়ে আবার যুদ্ধে যাবো
এবার যুদ্ধে জয়ী হলে গোলাপ বাগান তৈরি হবে।"
রানা আজ নিঃস্ব হল।
এই যুদ্ধে এখন আর কেউ নেই তার পাশে।
সে এখন শোকের কাছে করে দিয়েছে ‘অস্ত্র সমর্পণ’।
‘অন্যরকম সংসার’ তবুও হাসে, সে নির্লজ্জ।
তুমি কি মৃত্যুর কাছে করে দিলে ‘অস্ত্র সমর্পণ’?
"তোমাকে আজ সেই আমি কারাগারে
সমর্পণ করে, ফিরে যাচ্ছি ঘরে" ব'লে
সেই অস্ত্র— কলমকে তুমি কবিতার খাতার উপর ফেলে রেখে
চলে গেলে নদীর ওই পারে?
তুমি ছিলে নারীপ্রেমী।
এতদিন নারী ও রমণীহীন ছিলে বলেই ছিল
"দুঃখের আরেক নাম হেলাল হাফিজ"
সেই তুমি আজ নারী-রমণীদের দুঃখ দিয়ে গেলে!
হৃদয়টা গেল কাঁচের মতো ভেঙে!
এই মিথ্যে প্রেমের দুনিয়ায় এখন
তোমার মতো প্রেম আর কোথায় পাওয়া যাবে বলো?
তুমি তোমার দেশের যৌবনের জন্য লিখেছিলে
‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’—
"এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়"
তুমি ছিলে যৌবনের আদর্শ শিক্ষক।
কিন্তু আজ সেই যৌবন শোকাতুর সেই শিক্ষককে হারিয়ে।
এই শ্রেষ্ঠ সময়ে এখন তাদের হাতে হাতে জ্বলন্ত মোমবাতির মিছিল
এবং মুখে মুখে তোমার লেখা কবিতা।
কিন্তু এই মিছিল কখনো থামবে না তাদের জন্য।
তুমি কবিতার কসম খেয়ে কবিতার জন্য জীবন দিয়ে গেলে।
কবিতা তোমার প্রেম, তোমার দ্রোহ।
সে কখনো ভুলবে না তোমাকে।
অশান্ত বাংলাদেশ গর্বিত হবে তোমাকে পেয়ে,
তোমাকে মনে রাখবে,
তৈরি করে রাখবে তোমার জন্য সমাধি।
আর আমরা পাঠকরা সংরক্ষণ করে রাখব
তোমার প্রেম-দ্রোহের পাণ্ডুলিপি।
শুধু দুঃখ নয়,
অমূল্য রতনের আরেক নাম হেলাল হাফিজ।