এই বিগত বছর ধরে
আমাদের বলা হয়েছে—
"ছাত্ররাই আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ।"
কিন্তু এখন —
এই ব্যাপারটা কি সত্যি?
এখনকার ছাত্ররা দেশের ভবিষ্যৎ নয়,
ওদেরই ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলা হয়,
     ওদের শিক্ষা নিয়ে খেলা হয়।



শিশুরা যখন ছোট হয়,
তখন
ওদের মা-বাবা-পরিজনরা সকলেই চায়—
ওরা মানুষের মতো মানুষ যেন হয়।
কিন্তু হায়—
এখন ওরা মানুষ রইলো না।
ওরা বন্ধুদের ভালবাসে না —
ওদের সাথে মারপিট করে।
মা-বাবারা ওদের বলে—
"বন্ধুদের সাথে মারপিট করবে না।
ওদের বড়দের মতো করে ভালবাসবে।"
কিন্তু কেউ কি শোনে কারোর কথা?



আবার, এমনটাও হচ্ছে—
বারোটা বছর ধরে যা শেখানো হয়েছিল ওদের,
এখন ওরা সবকিছুই ভুলে গেছে।
আর ভুলে গেছে ইংরিজিটাও।
কেউ যদি ওদের
বাংলা/হিন্দি থেকে ইংরিজিতে অনুবাদ করতে বলে,
ওরা তা পারে না।
যদি জিজ্ঞেস করা হয়—
"‘আমি জল খাই’—
এই বাক্যটিকে ইংলিশে translate করো,"
ওরা বলবে—
"I ‘eat’  water",
"I am ‘khaunga’"

— "‘আমি খাই’—
এই বাক্যটিকে ইংলিশে translate করো।"
— "I ‘eeta khaunga’"....

আমরা এতে হাসতে পারি,
কিন্তু — এটা তো খারাপ জিনিস।
দেশের জন্য এটি দুর্ভাগ্যজনক।

GK-এর কথা বলি —
যদি প্রশ্ন ওঠে—
"বিজ্ঞানের জনক কে?"
ওরা বলবে — "মোদী।"
স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী!
ভাবতে পারছেন?
মোদী-ই নাকি শুরু করেছিলেন —
বিজ্ঞান, অঙ্ক, সাহিত্য, সোশ্যাল সায়েন্স।
বলতে ইচ্ছে হয় —
"বাঃ মোদীজী বাঃ!!"



এভাবেই আমরা বিশ্বসেরা হওয়ার লক্ষ্যে পৌঁছোচ্ছি।
এভাবেই আমরা আগে বাড়ছি —
ব্যাপারটা দেখে ঘেন্না করে, আবার হাসিও পায়।
আমার হাসি পায় ছাত্রদের শিক্ষার ব্যাপারে।
(যদিও আমিও এক ছাত্র)
হে অভিভাবকগণ, হে শিক্ষকগণ,
এবার আপনারাও হাসুন।
আপনারা শুধু শুধু ওদের বকছেন, মারছেন।
এবার একটু তো হাসুন।
ওদের ওপর হাসুন "হা-হা" করে।
হাসুন হাসুন,
মন খুলে হাসুন।



এ সব কিছুর জন্য দায়ী কে/কারা?
দায়ী হল দুটো জিনিস—
সময়, আর শিক্ষাব্যবস্থা।
বলা হয়—
"সময় মানুষকে অনেক কিছু শিখিয়ে দেয়।"
কিন্তু
সময়ের সাথে সাথেই আমরা ভুলে যাই
পুরানো সেই শেখা জিনিসগুলোর কথা।
বিশেষত— ভারতের ইতিহাস।
আমরা ভুলে গেছি
চাণক্য, সম্রাট অশোকদের কথা।
আমরা ভুলে গেছি
কলিঙ্গ যুদ্ধ, পলাশী যুদ্ধের কথা।
আমরা ভুলে গেছি
মৌর্য, পাল, চোল—
এইসব সাম্রাজ্যগুলির কথা।
আমরা মোঘলদের ইতিহাস, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস
সবচেয়ে বেশি করে পড়েছি।
তাই এখনো জানি এসবের কথা।
এখন এসবের আগে
আমাদের পড়ানো হয় বিদেশী ইতিহাস —
ফরাসি বিপ্লব,
রুশ বিপ্লব,
ইউরোপীয় জাতীয়তাবাদ।
হয়তো এমনটা হবে ভবিষ্যতে —
আমরা ইংরিজির পাশাপাশি
ভুলে যাব
মোঘল ইতিহাস, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস।
ইতিহাসের এই অধ্যায়গুলি প্রদান করে
আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা।
সময় যত এগোয়, ততই
এঁরা পুরোনো জিনিসগুলোকে বাদ দিয়ে দেয় ইতিহাস থেকে,
আর সাহিত্যে ভালো ভালো গল্প-কবিতা।
ক্লাস নাইনে আমরা পড়েছিলাম
রবীন্দ্রনাথের গল্প-কবিতা (একটি করে)।
এবার ক্লাস টেনে
সেই রবীন্দ্রনাথকে বিতাড়িত করা হয়েছে সাহিত্য থেকে —
"আফ্রিকা" কবিতা, এবং "মানুষের ধর্ম" প্রবন্ধ—
দুটোই বাদ।
ক্লাস নাইনে এমনটা ছিল না।
আর বাদ দেওয়া হয়েছে
বিভূতিভূষণ, নজরুল, শরৎচন্দ্রকেও।



সময় যত এগোয়,
শিক্ষাব্যবস্থা পাল্টে যায়,
       মানুষও পাল্টে যায়।
তাই, শুধু ছাত্রদের ওপর হাসাহাসি নয়,
চাই শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে "ধিক্কার"!
এটা না পাল্টালে কিন্তু ভালো হবে না।


(১০.০৬.২৩)