একটা জিনিস ভেবে দেখেছি—
আমরা বাড়ি থেকে যতটা শিক্ষা পাই,
তার থেকে বেশি পাই বাইরে থেকে,
দুর্নীতি থেকে, মানুষের আচরণ থেকে,
চারপাশে যা হচ্ছে তা থেকে।
সরকার জনগণের টাকা চুরি করে
তা দিয়ে নিজের পেট চালায়,
গড়ে তোলে বড় বড় অট্টালিকা,
খরচ করে নিজ স্বার্থের, ভোটে জেতার পেছনে।
এই সরকার থেকে আমরা শিখি
পরীক্ষায় অন্যের লেখা চুরি করে
অ্যানসার শিট কমপ্লিট করা
পাশ করার জন্য, সবাইকে পিছনে ফেলার জন্য।
রাস্তাঘাটে, সোশ্যাল মিডিয়ায়, বিভিন্ন জায়গায়
তরুণ তরুণীরা ব্যবহার করে অকথ্য ভাষার কিছু শব্দ
কখনো মজার ছলে, কখনো প্রতিবাদ করতে।
ওদের থেকে আমরা শিখি
ক্লাসে কেউ না থাকলে মজার ছলে গালাগালি দেওয়া।
ছেলেরা সবসময়ই গালাগাল দিতে ভালবাসে,
কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে তা হয় না।
সংবাদমাধ্যম দেখে, সংবাদপত্র পড়ে
আমরা প্রতিদিনই খবর পাচ্ছি—
এখনো "রেপ কালচার", "থ্রেট কালচার" শেষ হয়নি।
কিশোরীরা, মহিলারা, তরুণীরা আজও ধর্ষিতা হচ্ছে
কিছুটা কিশোরের হাতে, বেশিটা তরুণের হাতে।
সেই ধর্ষকদের থেকে আমরা শিখি—
প্রেমের সম্পর্ক টিকছে না? ভালবাসা হারিয়ে গেছে?
চলো, মেয়েকে খুন ধর্ষণ করো।
রাস্তাঘাটে মাঝে মধ্যেই ঝগড়া হয়—
দুর্ঘটনা ঘটলে,
কেউ কারোর গায়ে হাত তুললে,
কেউ কাউকে ধাক্কা দিলে।
তাতেই আমরা শিখি
রাস্তাঘাটে যা ইচ্ছে তাই করে নিজের নাম বরবাদ করা।
রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে শাসক দলের নেতৃবৃন্দ
শুধু বলে চলে একের পর এক মিথ্যে কথা, বাজে কথা।
জনগণ হয় ক্ষুব্ধ, করে সমালোচনা।
তবু এ রোগ সারে না।
এই নেতাদের থেকে আমরা শিখি
সত্যিটাকে আড়াল করে সবাইকে মিথ্যে কথা বলে
নিজের জান বাঁচানো, পার পেয়ে যাওয়া।
শিক্ষাব্যবস্থায় রয়েছে এক বড় স্ক্যাম—
অযোগ্যরা নেতা-দাদাদের চটি চেটে চাকরি পায়,
যোগ্যরা হতভাগ্য, জীবন তাদের অন্ধকার।
এই সিস্টেম থেকে আমরা শিখি
চটি চাটা, দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়া, বেআইনি কিছু কাজ করা।
এখনকার টাইমে
মনের কথা বলতে শুধু "আই লাভ ইউ" হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দুঃখ, স্ট্রেস, হতাশা— এসব কিছুই না।
তাই, কেউ প্রেম করলে আমরা শিখি
"যা, বলে দে তোর মনের কথা" বলতে।
(এরকম অনেক উদাহরণ আছে।)
সুতরাং,
বদলে যাই আমরা, বিগড়ে যাই আমরা।
আর মা-বাবারা বলে:
"কিছু শেখাতে পারলাম না রে!
এটা আমাদের ব্যর্থতা।"
তারা হতাশ হয় আমাদের পরিবর্তনে—
যেন তারা চায়
সন্তান জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ভালো মানুষ হবে,
কখনোই তার চরিত্র বদলাবে না।
মানুষ যত বড় হয়, ততই হয় পরিবর্তিত।
বড়দের চরিত্র বদলালে আমরা কেন থাকব অপরিবর্তিত?
আমরা কি মানুষ নই?
তবে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার সঠিক মানে কী?
তবে সমস্যা হল—
আমরা তাদের ঠিক বলতে পারি না—
"তোমরা আমাদের যতটা শিক্ষা দিয়েছো,
তার থেকে বেশি শিক্ষা তো আমরা পাই
বাইরে থেকে, সময় থেকে।
তাতে আমাদের কী দোষ?
ভুলচুক কিছু আছে কি?"
বলো, তোমরা কী বলবে।
(০৬/০৯/২০২৪)