জীবনটা আজ বড় ক্লান্ত, বড় একাকী, বড় বেমানান,
হয়তো আর হাতে গোনা কয়েকটা দিন তারপরেই এই আছি এই নেই!
প্রতিটা রাতের প্রহরে প্রহরে যখন ক্রমাগত মৃত্যুর সাইরেন বেজে উঠে,
তোমাদের ব্যস্ত শহরের ইট পাথরে মোড়া দানবীয় করিডোরগুলো,
তখন হাঁ করে গিলে খায় সবুজের যৌবন-জৌলুস!
জানো তো পায়েল আমি কিন্তু তখনও নরক যন্ত্রণার শেষ সিঁড়িতে বসে,
দু-চোখ ভরে দেখি বুনিয়াদির স্বপ্ন আর সৃষ্টি সুখের উল্লাস,
আনমনে খুঁজে চলি পরিবর্তন, বিবর্তনের সুপ্ত লাভা!
বহুকাল তো হল ফিরিঙ্গিদের বিতাড়িত করে আমরা এ দেশকে স্বাধীন করেছি!
কোনদিন কী আমরা নিজেদের নিজেরা স্বাধীন করতে পেরেছি ?
বাঁচার তাগিদে দু-মুঠো অন্ন আর বেআবরু ঢাকতে একফালি মোটা কাপড়,
কোনদিন কি খেটে খাওয়া মানুষগুলোর দস্তানায় পৌঁছে দিতে পেরেছি?
রোজ রাতে আঁধার গলিতে দলিত হতে দেখি পণ্যের দরে নারীদের সম্ভ্রম,
গোলাপের বিছানায় শাসন বারণের লাল চোখ দেখিয়ে,
শিরার খাঁজে খাঁজে ঢালতে দেখি দেহের শুভ্র অধিবিষ!
পায়েল তুমি জানতে চেয়েছো না আজ কেন আমি ডুমুরের ফুল হয়ে গেছি?
কেন আমি সকলের থেকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছি ?
কেন আমার উজ্জ্বল উপস্হিতিতে নীলচে আভাসের মাখামাখি ?
আমি কি আজ আর প্রেম, বিরহ, প্রতিবাদী কবিতার শব্দজালের বুননে,
আগুনঝরা দোয়াত দিয়ে কাগজের বুকে তোমার নামে আচড় কাটি?
আজ আর তোমাকে আমার মনে পড়ে কিনা ? -- তুমি জানতে চেয়েছো না!
আচ্ছা তুমিই বলো স্মৃতির দহন যন্ত্রণা কি ভুলে যাওয়া এতোটাই সহজ ?
আমাদের সম্পর্কের সুতোটা কি এতোটাই ক্ষীণ, এতোটাই মলিন,
যে সামান্য দেহ মোমে জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যাবে সকল সুখ স্মৃতির গুঞ্জন ?
জানো তো পায়েল আমি যখন রোজ রাতে জানলার আর্শিতে কান পাতি,
তখন শুনতে পাই নগ্ন সভ্যতার বুকে বীভৎস করুণ ভয়ার্ত মানুষের আর্তনাদ!
আর আঙুলের ফাঁকে জ্বলে ওঠা জোনাকির আলো দেখে বড় ভয় হয়,
এই বুঝি সমস্ত ঝিঁঝিদের মুখে পটি মেরে ওরা শান্ত করবে ওদের,
প্রতিবাদের অগ্নিযজ্ঞে জল ঢেলে নামিয়ে আনবে বিষাদের ছায়া,
মিশরের মানুষীর বুক থেকে মুক্ত ছিন্ন করে ওরা ঢেলে দেবে,
আমার স্ফটিক স্বচ্ছ নীল গেলাসের জলে আর এঁকে দেবে ব্যর্থতার গ্লানি,
জানো তো পায়েল আজ নিজেকে মানুষ বলে পরিচয় দিতে বড় লজ্জা হয়,
তাই রঙিন চাদরে মুখ ঢেকে কাপুরুষের মতো পালিয়ে বাঁচি,
এই বুঝি একটা পরিবর্তন, বিবর্তনের সুপ্ত বীজ অঙ্কুরিত হয়ে মহিরুহে পরিণত হয়,
এই আশায় আজও নরক যন্ত্রণার শেষ সিঁড়িতে বসে,
দু-চোখ ভরে দেখি বুনিয়াদির স্বপ্ন আর সৃষ্টি সুখের উল্লাস!