বসেছে আজ বটের ছায়ায়--
রথ যাত্রার মেলা!
সকাল থেকেই বদল হল--
ফুরিয়ে এলো বেলা!
সূর্যি পাটে আঁধার ঘনায়--
ভীষণ রকম কালো!
রঙিন রঙিন তারার দেশে--
গ্রামটি যেন আলো!
জোনা'ই জ্বলে আঁধার নীলে--
ঝিঁ'ঝিঁ ডাকে সুরে!
পেঁচার চোখে বর্ষা নামে--
হেঁটে আনেক দূরে!
ব্যাঙের ডাকে একলা রাতে--
মন বসেনা ঘরে!
হরেক রকম কথার ভীড়ে--
পড়ছি যেন জ্বরে!
চাঁদের ফাঁকি আকাশ নীলে--
মেঘে ঢেকে তারা!
নদীর বুকে মরা স্রোতে--
পুষ্প হয়েছে মনমরা!
ঘাসের আগায় শিশির রেখা--
ভাঙন ধোয়া জলে!
কচি বুড়োই তাল মিলিয়ে--
পায়ে পায়ে চলে।
সিক্ত মাটি জমা জলেই--
চলবে কেমন চাকা?
মন বসেনা ঘরে আমার--
তাইতো এসে দেখা!
হাঁটু কাদায় স্নানের মেলায়--
জটলা জমাট লোকে!
রথের মেলা ভিড়ের ঠেলায়--
কনুই দিয়ে ঠোঁকে!
লোকমুখে আজ জয় জগন্নাথ--
হাঁকছে জোরে জোরে!
বৃষ্টি ফোঁটায় কান্না ধুয়ে--
আনন্দ আজ উচ্চস্বরে!
খুশির জোয়ার বইছে পথে--
হরেক রকম ফুলে!
রথের মেলা দেখছি ঘুরে--
বাদল বেলা ভুলে!
তালের ভেঁপু বাজিয়ে অপু--
হোন্নি হয়ে চলে!
আচ্ছা করে রথের মেলা--
বসেছে বটের তলে!
ঘড়-ঘড় ঘড় শব্দ তুলে--
কাঠের চাকা ঘোরে!
দড়ি টেনে জয় জগন্নাথ--
হাঁকছে জোরে জোরে!
দুঃখ ভুলেও পথেই শিশু--
হাসছে ফুলের মতো!
সুগন্ধী আজ মাখো মাখোই--
ঢাকছি মনের ক্ষত!
ঢাকের কাঠি পড়ছে জোরে--
মেঘ তালে তালে!
দড়ি টেনে গ্রাম্য পথেই---
রথের চাকা চলে!
পুষ্প রথে আছেন প্রভু--
সারথী দুটো ঘোড়া!
পুরনো মোটা কালো দড়ি--
আস্ত যেন জলধড়া!
হাজার দুয়েক মানুষ ভিড়ে--
সুযোগ পাইনে মোটে!
পূণ্য ছোঁয়ায় পাপ ধোয়াবে--
এই আশাতেই ছোটে!
অবাক চোখে তাকিয়ে দেখি--
এগিয়ে কাছে রথ!
ইচ্ছে হল আমিও দেখি--
পায় যদি পথ!
বেলুন বাড়ি পেরিয়ে যেই--
দড়িতে দিলাম টান!
বৃষ্টি ফোঁটা ভিজিয়ে সেই--
করিয়ে দিল স্নান!
ভেজা শরীর তুলোর মতো--
চুপসে গেলাম বেশ!
ভিড়ে মাঝেই চোখের নীলে--
আছড়ে এলো কেশ!
সবুজ বরণ নকশি গড়ন--
রাঙা হাসি মুখে!
উর্বশী, অপরুপা তন্বী অনন্যা--
লাজুক হাসি ঠোঁটে!
নেমেছে আজ মায়াপরি যেন--
হাঁটছে নগর পথে!
এদিক ওদিক উড়ছে যেন--
রঙিন প্রজাপতি বেশে!
পথের ভোলা পথেই পড়ে--
বটের ছায়ায় মেলা!
করুণ রাগে আগুন লাগে--
আসে যখন বিদায়বেলা!
আজ রথযাত্রা, মহা লোকারণ্য--
পড়েও গেছে ধুমধাম!
আজ মহাউল্লাসে লুটিয়ে পথে--
ভক্তরাও করছে প্রণাম!
রথ ভাবে আমিই দেবো--
পথ ভাবে আমি!
মূর্তি ভাবে আমিই দেবো--
হাসেন যেন অন্তর্যামী!