মা অঙ্কটা ঠিক তেমন একটা বোঝেনা।
একটা রুটি চাইলে দুটো নিয়ে আসে।
মা সত্যিই অঙ্কটা তেমন একটা বোঝেনা।
কোথাও যাওয়ার সময় কুড়ি টাকা চাইলে--
মা পকেটে পঞ্চাশ টাকা ঢুকিয়ে দেয়।
মা তো ইংরেজিটাও ঠিকঠাক বোঝে না!
আই হেট ইউ বললেও তো মা--
না বুঝেই ভালোবেসে বুকে টেনে নেয়।
মা বরাবর আগাগোড়াই একটু বেশি মিথ্যেবাদী,
না খেয়েও দিব্বি বলে, -- খেয়ে নিয়েছি।
পেটে ক্ষুধা থাকার সত্ত্বেও মা দেখি--
নিজে না খেয়ে প্রিয় খাবারটা ঠিকই,
আমার জন্য যত্ন করে তুলে রাখে।
মা বোধহয় একটু বড্ড বেশিই বোকা--
সারাজীবন কলুর বলদের মতো মা রান্নাঘর,
আর ভালো মন্দের পিছনেই কাটিয়ে দিল।
অথচ মা'ই তো আমার পোষা চোর।
বন্ধুদের সাথে আমি পিকনিকে যাব বললে--
মা তো রাতেই বাবার পকেট কেটে,
টাকা চুরি করে আমাকে দিয়ে দেয়।
মা যে আমার ভীষণ, ভীষণ নির্লজ্জ--
মাকে আমি কতবার বলি আমার জিনিষে,
তিনি যেন আর হাত না দেয়।
তবুও দেখি মা তো নির্লজ্জের মতো--
এলোমেলো পড়ে থাকা সমস্ত জিনিষ গুলোকে,
নিজের হাতেই যত্নে গুছিয়ে তুলে রাখে।
মা যে আমার বড্ড বেশিই বেহায়া--
আমি কথা না বললেও জোর করে,
আমার কাছে মা এসে বেহায়ার মতো,
গায়ে পড়ে আমার সঙ্গে কথা বলে।
রাতে ঘুমের ঘোরে আমি চিৎকার করলেই --
দরজা দিয়ে উঁকি মেরে দেখে যায়।
মায়ের আমার কোন সাধারণ জ্ঞানই নেই!
আমার প্লেটে মা খাবার কম দেখলেই --
চিৎকার করে আলতো বোকা দিয়ে বলে--
খোকা আজ এতো খাবার কম কেন?
এই বলেই প্লেটটা ভর্তি করে দেয়।
এতো খাওয়ার পরেও তো মায়ের চোখে
আমি যেন কতদিনের না খাওয়া ছেলে।
মা আমার একটু দায়িত্ব জ্ঞানহীনও বটে--
কোমরে ব্যথা, গাঁটে ব্যথা, পিঠের ব্যথায়
মা আমার ধুঁকে ধুঁকে মারা গেলেও
কখনো যে কোনো ওষুধের কথা বলেনা।
অথচ আমার সামান্য একটু সর্দি কাশিতেই ,
মায়ের কাছে সেই দিনটা কেমন যেন--
ওলটপালট হয়ে যায়, ডাক্তার, হাকিম, বৈদ্য!
এক এক করে মা আমার ঘরে,
সব রকম টোটকার কারসাজি করে বসে।
মা আমার মান্ধাতার আমলের একবারে সেকেলে
অনেকের মায়ের মতো আমার মা যে,
দামী দামী শাড়ি গহনা পরতে পারেনা।
কাঁধেও যে লম্বা ভ্যানিটি ব্যাগ ঝুলিয়ে,
স্মার্টফোন হাতে নিয়ে মা ঘুরতে যায়না। সারাদিন খালি ওই মায়ের রান্নাঘর, আর--
আমাদের জন্য ভালোমন্দ কথা চিন্তা করেই
পুরোনো হয়ে সারা জীবনটা কাটিয়ে দেয়।
এরপরেও মা তো আমার চোখে স্বার্থপর--
নিজের সন্তান ও স্বামীর জন্যই মা,
দুনিয়ার সব কিছু ত্যাগ করতে পারে।
পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ জিনিষ বোধহয় মা।
তাই বুঝি আমরা অকৃতজ্ঞ জারজ সন্তান,
নাহলে তাঁদের এতো কষ্ট দিই কীভাবে?
কই তবু তো তাঁদের পরিবর্তন হয়না।
অথচ একটু বড় হয়ে গেলেই আমরা--
আমাদের জীবন থেকে দূরে বৃদ্ধাশ্রমে রাখি।
তবুও তো মা আমাদের বোকার মতোই--
ভগবানের দ্বারে আমাদের জন্যই প্রার্থনা করে।