কবিতার অলঙ্কার বলতে সাধারনত শব্দ আর ভাবের খেলাই বোঝায়, যা কবির কলমের প্রতিটি পরতে পরতে জীবন লাভ করে এবং সাহিত্যের এই বিশেষ ধারাকে করে তোলে আরো সজীব ও প্রাঞ্জল ।

কবিতায় ভাব খেলা করে শব্দের গাঁথুনির মাধ্যমে । সেই শব্দের গাঁথুনি কে অলঙ্কারের ভাষায় যেখানে শব্দালঙ্কার নামে অলঙ্কৃত করা হয় অপরদিকে ভাবের খেলাকে বলা হয় অর্থালঙ্কার ।

অলঙ্কারে সবচেয়ে বিশাল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে এই 'অর্থালঙ্কার"। সুপ্রাচীনকাল থেকে একটি সাহিত্য ধীরে ধীরে নানানভাবে বিকাশ লাভ করেছে তার সাহিত‌্যিকদের হাত ধরে । যার ফলে অর্থালঙ্কারের আলোচনাও বেড়েছে দিনকে দিন ।

আমি কোন ব্যাকরনবিদ নই এবং ব্যাকরন লিখতেও বসিনি, বরং ব্যাকরনের প্রচলিত ধারার কিছু সংক্ষিপ্ত আলোচনা করতে গিয়ে একজন ভাষাপ্রেমিক হিসেবে অর্থালঙ্কারের মূল বিষয়গুলো তুলে ধরার অভিপ্রায় জানাই মাত্র ।

কবিতার ভাবের খেলায় বা অর্থালঙ্কারে সাধারনত পাচঁটি বিষয় খোজা হয়ে থাকে -
১. সাদৃশ্য, ২. বিরোধ, ৩. শৃঙ্খলা, ৪. ন্যায়, এবং ৫. গূঢ়ার্থ ।

১. সাদৃশ্যঃ অর্থালঙ্কারের এই পর্যায়ে কোন কিছুকে অন্য কিছুর দ্বারা বা বৈশিষ্ট্যের দ্বারা তুলনা করা (উপমা/রূপক) , সন্দেহ করা (উৎপ্রেক্ষা), ভুল করা (ভ্রান্তিমান) হয় । এছাড়া অসম্ভবকে সম্ভব ভাবা (সমাসোক্তি) হয় ।

২. বিরোধঃ এ পর্যায়ে ভাবের বিরোধ খোজা হয়ে থাকে । সেটা হতে পারে - বিপরীত অর্থের সংযোগে (বিরোধাভাস), কারন ও কাজের মধ্যে (বিষম), কারন ছাড়া কাজ হলে (বিভাবণা), কারন সত্ত্বেও কাজ না হলে (বিশেষোক্তি) অথবা কারন/কাজ ছাড়াই কিছু ঘটলে(অসংগতি) ।

৩. শৃঙ্খলাঃ কবিতার ভাবে যদি কারন, কাজ পর্যায়ক্রমে আসতে থাকে এবং তার ফলে আবারও কারন বা কাজের উৎপত্তি ঘটতে থাকে তবে এই শৃঙ্খলাবোধকে 'কারণমালা' নামে আখ্যায়িত করা হয় ।
আবার একই শব্দ যখন বিভিন্ন 'পদ' হিসেবে আসে তখন তা 'একাবলি' । কিন্তু বাক্যের অন্ত্যে তথ্য আসলে তা যেন 'সার' ।
( ভাবের খেলায় কী মজার শৃঙ্খল!! )

৪. ন্যায়ঃ অর্থালঙ্কারের ন্যায় খোজা মানে কবিতার ভাবের যৌক্তিক (অর্থান্তর) বা অযৌক্তিক (কাব্যলিঙ্গ) কারন খোজা ।

৫. গূঢ়ার্থঃ সবচেয়ে দীর্ঘ আলোচনার এ বিষয়টি কিছুটা জটিল, তাই এখানে প্রশ্ন থেকেই যায় । তবুও কবিতায় যা লেখা থাকে ভাব বিচারে যদি তার বিপরীত অর্থ বোঝায় তাহলে অর্থালঙ্কারের গূঢ়ার্থ খোজার এই ধারাটিকে 'ব্যাজস্তুতি' বলা হয় ।
এছাড়া এমনও হতে পারে, কবিতার ভাবে কোন কিছুকে প্রতিষ্ঠা করা ও তার সাথে আরো কিছুকে প্রতিষ্ঠা করা (অর্থাপত্তি), খুব অল্প সংকেত দেয়া (সূক্ষ), দার্শনিক বক্তব্য তুলে ধরা (স্বভাবোক্তি) ইত্যাদি ।

অলঙ্কারে অর্থালঙ্কার নিয়ে আলোচনার কমতি নেই । কবিতার ভাবই নানান ভাবে এই বিষয়টিকে করেছে সবচেয়ে মাধুর্যমণ্ডিত । এরপরও আশা রাখা যায় এই সংক্ষিপ্ত আলোচনাটি সবার মন কেড়েছে।

(সমাপ্ত)