প্রতিটি ভাষাই হওয়া উচিৎ অলঙ্কৃত , এবং একটি ভাষাতে বৈচিত্র্য আসেও ঠিক সেভাবেই । বাংলাভাষার বৈচিত্রময়তা তার প্রতিটি পদক্ষেপে সমানভাবে লক্ষ্যণীয় । যেখানে এ ভাষার বয়স অন্যান্য প্রভাবশালী ভাষার তুলনায় অনেক হিসাব পেছনে , সেখানে এই ভাষারই সাহিত্য বৈচিত্র্য তুলনামূলক অনেক অনেক অগ্রগামী ।
বাংলাভাষার কবিতায় অলঙ্কারের মাধুর্যতা একের পর এক এ ভাষাকে দিয়েছে সমৃদ্ধি । আর এই সমৃদ্ধধারা দেখলে দেখা যায় অলঙ্কার দু'ভাগে বিভক্ত - ক)শব্দালঙ্কার, ও খ)অর্থালঙ্কার ।
এর মধ্যে শব্দালঙ্কারকে সাধারনভাবে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায় -
১) অনুপ্রাস
২) যমক
৩) শ্লেষ
৪) বক্রোক্তি
৫) পুনরুক্ত বদ্যভাস
এছাড়াও আরেক ধরনের শব্দালঙ্কারকে অনেকে গণনা করে থাকেন -
৬) ধ্বন্যুক্তি

১) অনুপ্রাসঃ
একই ধ্বনি বারবার আসাকে বলা হয়ে থাকে অনুপ্রাস । যেমনঃ
কাকী কী কাঁদে ,
কুট্টি কাকা কুশলে -
কুঁচকে কাশে !
এখানে "ক" ধ্বনির অনুপ্রাস ঘটেছে , এবং বারবার একই ধ্বনি আসার কারনে বাক্যে এসেছে মাধুর্যতা ।
আবার আরেকটি উদাহরণ দেখা যাক -

ছল করে বল দেখি ;
কোন গাছে থাকে নেকি ,
চোখ বড় , নাক কাটা -
পেত্নী ।

আন দেখি কান ধরে ,
চড় দেব এত জোড়ে ,
ভেঙে যাবে গালে থাকা -
থুতনি ।

উপরের দুটি স্তবকের মধ্যে যদি আলাদা গণনা হয় তবে প্রথমটি স্তবকটিতে "দেখি" আর "নেকি" এর মাঝে এবং দ্বিতীয় স্তবকটিতে "ধরে" আর "জোরে" এর মাঝে অন্ত্যানুপ্রাস ঘটেছে ।
যদি দুটিকে একই সাথে গণনা করা হয় তবে "কাটা" এর সাথে "থাকা" এবং "পেত্নী" এর সাথে "থুতনি" এর অন্ত্যানুপ্রাস ঘটেছে ।
আবার "দেখি" আর "নেকি" এবং "ধরে" আর "জোরে" এর মধ্যে ঘটেছে বৃত্ত‌্যনুপ্রাস ।
তবে যেহেতু  "কাটা" ও "থাকা" এর অবস্থান স্তবকের অন্ত‌্যে নয় তাই এদেরকেও বৃত্ত‌্যনুপ্রাস বলা যায় ।
আবার যদি একেবারে সত্যিকার অর্থেই বৃত্ত‌্যনুপ্রাস বলতে হয় তবে এখানে "ছল করে" এর সাথে "কোন গাছে" এর বৃত্ত‌্যনুপ্রাস ঘটেছে । কারণ এখানে "করে" এবং "গাছে" শব্দ দুটির "এ" ধ্বনির অনুপ্রাস লক্ষ্যণীয় ।

(চলবে)