অপূর্ব।        
               তোমার উড়ন্ত খোলা চুলের ছোঁয়া
                        কতোদিন পাইনি জানো?
               সেই প্রেমের অবগহনের বসন্তের ছবি,
                        তুমি মনে আনো বা না আনো;
               ব্যস্ত পৃথিবীতে আঁধারের গ্রাসে
                        আশার বসতি যখন বিষাদে ঢাকা,
               মনে পড়ে আজো এই ক্যাম্পাসের কথা
                        যেখানে আমাদের পদচিহ্ন রাখা।

সাথী।          
               ওমা,মনে পড়বেনা পাগলামি সেই দিন,
                        মনটা আজো উশখুশ করে,
               হৃদয়ের গহিনে বাজে বীণ।
                        পড়ন্ত বিকেলে হেলে পড়া আলোর সাথে
              এখনো আসি এই স্মৃতির জায়গায় বারে বারে।
                        সেই যে তুমি হারিয়ে গেলে একাত্তরের রাতে,
          তারপর তোমাকে কতো খুঁজেছি এই বাংলার দ্বারে দ্বারে।

অপূর্ব।  
              তাই!আহ!!শান্তি পেলাম,
                       জীবনের বালুকা বেলায় দাঁড়িয়ে;
              আবার এলাম এই বটতলায়
                       আর তুমি কথার তুবড়ি দিলে ছাড়িয়ে।
              জানো,পারকিনসন্স রোগে যেনো
                       চেপে ধরেছিলো মোর গলা,
              কতোবার মনে এসেছে তোমার শেষ আদর
                       হয়নি কাউকে বলা।

সাথী।
             বিয়ের পর প্রথম পূর্ণিমা রাতে
                       দাঁড়িয়ে ছিলাম ছাদে একা;
              কতোবার ভেবেছি আমার সাথে তুমি
                       চাঁদ হয়ে দিবে দেখা।
              ভোরের নরম আলোতে খুঁজি
                       সোনালি সেই দিনগুলি;
              সে স্মৃতি আজো আছে হৃদয় পটে
                       কী করে যাই ভূলি!!


অপূর্ব।
              যা হবার না তা ভেবে
                       কী লাভ বলো সাথী?
             অনুতূতির এ কথার ছলে
                       গভীর থেকে শুধু গভীরতর হবে রাতি।
             আমার যৌবনের প্রথম সিঁড়িতে
                       বুকের ক্যানভাসে আঁকা তোমার ছবি,
             ছাড়িয়ে যায় সব কল্পনা
                       যা বুঝাতে পারবেনা বর্ণনায় কোনো কবি।

সাথী।
            আমি জানি তোমার চোখের জলে
                      ভেসে বেড়ানো স্বপ্নের ঢেউ,
             কথা বলে একা একা
                      তার খোঁজ রাখেনা কেউ।
             তারপর বলো, “কোথায় ছিলে
                      একাত্তরের পরে?
             বাবা আমাকে বারবার বলতো,
                      অপূর্বের প্রাণ গেছে ঝরে।
             তাই----------

অপূর্ব।
            তাই কী?বিয়ে করলে,
                      ডুবে গেলে সংসারের মায়াজালে;
             স্বামীর হাত ধরে চলতে থাকলো দিন
                      আর আমাকে ভুলতে থাকলে তালে তালে।
             এই তো,তাইনা?

সাথী।
            তোমাকে আমি কী করে
                     ভূলি বলো?
             প্রতিটি দিনের আলো বলে,
                     সাথী তুমি চলো।
             যেখানে তোমার রক্ত আছে জমে,
                     সেখানে না এসে বলো প্রিয়,
             ঘরে রবো কী করে থেমে?
                     তাইতো প্রতিদিন এ বটমূলে আসি
             স্বপ্নপূরণের আশায়;
                     প্রতিদিন ফেলি চোখের জল,
             বুঝাতে পারবো না ভাষায়।

অপূর্ব।
            একাত্তরের পরে কোথায় ছিলাম?
                    কেনো?সোনালী সবুজ দেশে?
            রাজপথ ছেঁড়ে গাঁয়ের মেঠোপথে
                    পাগলের বেশে।
            খুঁজেছি স্বাধীনতা, খুঁজেছি সুখ;
                    মুক্তযোদ্ধাদের চোখে।
            দেখেছি সেথায় কেমনে মরে
                    সোনালী সন্তানেরা মরে ধুঁকে ধুঁকে।
            দেখেছি সবুজ দেশে
                    কালো থাবার রক্তাত্ত চিহ্ন;
            কতো প্রাণ যে তারা নিয়েছে
                    আমি তো অতি নগণ্য।

সাথী।
           হ্যাঁ,তাইতো;ওরা কেড়ে নিলো
                   লাখো শহীদের জীবন বাসনা।
           কেড়ে নিলো আমার অপূর্বকে,
                  একবার তুমি দেখোনা
           দেখবে সাদা কাপড়ে মোড়ানো
                  আমার ছেঁড়া হৃৎপিণ্ডের নিঃশ্বাস,
           ভুলতে পারেনি এখনো তোমায়
                  অপূর্ব, তুমি করো বিশ্বাস।
           হায়েনাদের ছবলে আমিও যে হয়েছি
                  নিষ্ঠুরতার বলি।
           কেঁদেছি কতো রাত একা একা
                  কিন্তু তোমায় নিয়ে আমার স্মৃতিতে পড়েনি এতোটুকু পলি।


অপূর্ব।
          থাক্ না ওসব কথা
                 আশার সাগরের ঢেউ;
          মিছে মিছে বাড়বে ব্যথা,
                 জেনে ফেলবে কেউ।
          আকাশে হেলান্ দিয়ে ঘুমানো পাহাড়
                 আর কী হয়েছে দেখা?
         এখন তো দু’জন আছো,
                 নওতো একা একা।




সাথী।
        আমার সে তো অনেক আগেই গেছে চলে
                 তোমাকে হয়নি বলা!!
         এরপর একমাত্র মেয়েকে নিয়েই
                 ছিলো মোর পথচলা।

অপূর্ব।
       আচ্ছা, হায়েনাদের কথা বলতেই তুমি
                 চমকে উঠলে কেনো?
         বিষাদে নুয়ে পড়া মুখ
                 তোমাতে দেখলাম যেনো।

সাথী।
        কই?না তো!এমনি এমনি
                 মুখের খেলা হলো বৈকি;
         দেখি তোমার মাথার চুল, ওমা, সবই তো পাকা!
                 এত্তো তাড়াতাড়ি!এসব কী দেখি!

অপূর্ব।
         সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে
                  যেদিন আমরা গিয়েছিলাম চট্রগ্রামে,
         বাস যাচ্ছিল সাপের বেগে
                  তুমি ছিলে ডানে আর বামে;
         সেইদিন এভাবে আমার মাথায়
                  হাত রেখেছিলে তুমি,
         মনে পড়ে তোমার সেই সব কথা?
                  আমি দিয়েছিলাম তোমায় চুমি।

সাথী।
        হুম, মনে পড়ে।ওহ্,জিজ্ঞেস করলেনা?
                  আমার মেয়ে কী করে?
         জানতে চাও বা না চাও
                  আমি বলি শোনো, সেও গেছে মরে।
         সন্ত্রাসীদের ধর্ষণে তার চোখে
                  নেমেছিলো বর্ষণের ঢল,
         বলেছিল বারে বারে
                  মারে আমায় নিয়ে চল্।
         যেথায় আছে ঘুমিয়ে একাত্তরের
                  ধর্ষিত নারী।
         সেথায় ঘুমিয়ে দে আমায়
                  তাড়াতাড়ি।
         হাঃ হাঃ হাঃ....,হায়রে দেশ;
                  স্বাধীন হলি ঠিকই জালেমদের কাছ থেকে,
         কিন্তু সারা দেশে একী আজব
                  পশু দিলি রেখে!!
         অপূর্ব,পৃথিবীটা কেমন জানি
                  নাগর দোলার মতো ঘুরছে,
         এ দেহে নীরব কবিতার রঙ্গ
                  কেনো বারে বারে মরছে।

অপূর্ব।
         সাথী,তুমি কোথায় গেলে?
                  আমায় একা ফেলে?
      খবরের কাগজে তোমায় দেখে বুকের ভিতর দাপাদাপি করে
                  বিদায় বেলার বাতাস
         স্বাধীন দেশে চারিদিকে এখনো
                 কেনো এতো ত্রাস?
         জেগে ওঠ্ ওরে হতভাগা জাতি,
                 জেগে ওঠ্ বীরের বেশে;
         নতুবা তোরে ফাঁসিতে ঝুলাবে
                 শোষক শ্রেণী এসে।


সাথী।
         এসো অপূর্ব, এসো নতুন দেশে;
                 এসো সাদা কাপড়ে মোড়ানো বেশে।
         আমি সাথী আছি এই জমিনে মিশে
                 আসো তুমিও মরণ হাসি হেসে।





রচনাকাল-।১৪।০২।২০১০;রাত-১.০০;পাবনা।