হরষ-বারি-ধারা ঝরিছে ভুবনে,
বিরহে মগন হয়ে কেন কাঁদিছ উঠানে?
চারিদিকে দেখ চাহি তব হৃদয় মেলিয়া
হরষ-অমৃত-রস উঠিছে উচ্ছলিয়া,
নিত্যরবি দিগন্তে-ঢোলে সিঁন্দুর ছড়ায়ে;
বিরহ ভুলে নিজ সিঁথি লহো রাঙায়ে
নূপুর লহো, বধূ, তব চরণ ভূষিতে,
কুঞ্চকেশে কমল লহো নিজ মাধুরী রচিতে।
দেখ দেখ, সখী, দেখ ওই সুদূরে;
হরষে গুঞ্জনে ওড়ে চঞ্চল মধুকরে
ক্লান্ত হইয়া বৃক্ষে নিজমধু পানকরে।
নিশুতিগগনে শশী পত্রমাঝে দোলে
উজ্বল করে সোহাগীকাঁকন তব আপনবেদনা ভুলে।
প্রদোষে-দ্বীপ জ্বলে সুদূরে ওই কুটিরে
আঁধারে দেখি তব কাজল-আঁখি-তীরে;
গম্ভীর তেজস্বী মেঘ ত্যাগিছে বারি বরষে
উষ্ণ ললাটে তব শীতলধারা পরশে।
এসো সখী, বসো তবে; বলি কিছু কথা
কোমলহৃদয়ে কভু আনিও না ব্যাথা,
এই বিশ্বমাঝে-ধরাধামে
ব্যস্ত সবাই আপনকামে,
ভুবনে অখিল সরোবরে
মনে রাখে কে-কাহারে?
তুমি চাও প্রকৃতিরে পেতে,
প্রকৃতি সাজে আপনি মেতে
তুমি-আমি চরাচরে কেবলই সৃষ্টি
গভীরচিত্তে ভাব মেলিয়া তব অন্তরদৃষ্টি;
ব্যাথিত হইও না কালচক্র দেখে,
বর্তমানেরে লইয়া জীবন কাটিও সুখে।
বিরহস্রোতে বহিও না মোটে
ইহলোকে, এইভাবে জীবন যাক না কেটে।।