ক্রেস্ট বাণিজ্য নিয়ে কবি সর্দার আরিফউদ্দিন এর লেখা পড়লাম, পড়লাম অনেক মন্তব্য এবং অন্যদের নিজস্ব আলোচনা। বিতর্কে জড়ানোর জন্যে নয়, নিজস্ব অবস্থান তুলে ধরার মাধ্যমে বাস্তব চিত্রটি সবার সামনে নিয়ে আসতে আমার সামান্য প্রয়াস।
পরম প্রভূর কৃপায় যাদবপুরে অনুষ্ঠিত আয়োজন থেকে অদ্যাবধি যে কয়টি প্রোগ্রামে আমার যাওয়ার সুযোগ ছিলো সবগুলোতেই আমি অংশ নিয়েছি। এটি আমার সৌভাগ্য। বরাবরই যেমন বলি তেমনি বলছি সত্যিকারের কবি বলতে যা বোঝায় আমি তার ধারেকাছেও নেই। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করবেন আমি কাউকে "কবি" বলে পারতপক্ষে সম্বোধন করি না। আপা, ভাই, দাদা, দিদি অথবা নাম ধরে সম্বোধন করি। এটির কারণ আমি নিজে যেহেতু কবি নই এবং কবি হওয়ার কোন যোগ্যতাও অর্জন করতে পারি নি সেহেতু কবি পরিচয়ের ভেক ধরে আসরে আপাতত প্রবেশ করতে পারলেও শেষ দশা হবে সেই কাকের মতো। না হতে পারবো কাক সমাজের, না হতে পারবো ময়ূর সমাজের।
কাঁচা হাতে দু চার লাইন লিখতে পারার উসিলায় বোদ্ধা কবিদের রাজ্যে ঢুকে অনেকগুলো সুন্দর মনের মানুষ পেয়ে যাওয়ায় বারবার সেখানে মন ছুটে যেতে চায়। যেখানে যেতে পারি সেখানে আন্তরিকতার সাথেই উপস্থিত হই। কাঁথিতে আয়োজিত কবি সম্মেলনে যাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিলো, আয়োজকের সাথে কথাও হয়েছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাস্তব কারণে যেতে পারি নাই। যেতে না পারায় মনের ব্যথা নিয়ে আসরের মাঝে পড়ে ছিলো আমার প্রাণ। এমনটি কিন্তু কবিতার জন্যে হয় নি, হয়েছে সুন্দর মনের মানুষগুলোর টানে। যেদিন কাঁথিতে প্রোগ্রাম চলছিল সেদিন আমার অফিস আমার আবেগ/পাগলামি দেখেছে। পুরোটা সময় আমি অনলাইনে উপস্থিত থেকেছি দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবো বলে। আমি নিজে একটি ক্রেস্ট চেয়ে নিয়েছিলাম আমার আবেগী/পাগল মন নিয়ে। আমার কাছে ক্রেস্টটা স্রেফ ক্রেস্ট ছিলো না, ওটাকে ছুঁয়ে আমি আমার সেই প্রিয় মানুষগুলোকে ছোঁয়ার, তাদের সান্নিধ্যের অনুভূতি পেতে চেয়েছি। আমি সেটা পেয়েছিও।
আমি একটু ঠোঁটকাটা চরিত্রের মানুষ। যা মনে আসে তাই বলে ফেলি। ভালো লাগাটা, মন্দ লাগাটা ঠাস করে বলে ফেলি। এতে কেউ কেউ আমাকে অপছন্দ করেন। তো যেহেতু ঠাস করে বলে ফেলা আমার অভ্যাস, তাই আমি একপ্রকার জোর খাটাই আমার জন্যে ক্রেস্ট বানাতে।
দ্বিতীয়তঃ বাংলাদেশে আয়োজিত আন্তর্জাতিক কবি সম্মেলনে থাকতে পারি নি কারণ সেটি ছিলো ওয়ার্কিং ডে। যেহেতু পরের গোলামী করে খাই, সেহেতু গোলামের কোন স্বাধীনতা থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। মনিবের অনুমতি না মেলায় আমি সেদিনের আয়োজনে থাকতে পারি নাই।
এখন বলুন আমার দোষটা কোথায়?
পরিশেষে -
(১) চরমপন্থী না হই আমরা, মধ্যমপন্থায় থাকি।
(২) সম্মাননাকে কোন প্রতিযোগীতায় ফেলবেন না, এটা স্রেফ ভালবাসায় থাকুক।
(৩) যে সব মেধাবী কবি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন তারা বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় নিজেদের প্রমাণ করুন, দয়া করে এখানে প্রতিযোগিতা টেনে আনবেন না, তাহলে আমি ধনেপ্রাণে মারা পড়বো, আমার ময়ূরের লেজটি খসে পড়বে।
(৪) আমরাও সচেতন থাকবো যাওয়ার মতো বাস্তব পরিবেশ তৈরী না হলে অহেতুক আয়োজককে "হ্যা" বলবো না। নিতান্তই দু একজন শেষ মুহুর্তে ব্যর্থ হলে তার জন্যে একটু সদয় হবো।
হাতজোড় করে মিনতি করছি, কেউ ক্রেস্ট ডাস্টবিনে ফেলার কথা বলবেন না। কারণ এটি স্রেফ ধাতু কাঠে তৈরী বস্তু নয়, এর সাথে আত্মার বন্ধনের ছোঁয়া জড়িয়ে থাকে।
ভালো থাকবেন সবাই, এই অর্বাচীনের উপর কেউ রাগ করবেন না।