২১ মার্চ’২০২৫ রোজ শুক্রবার কবি সেলিনা খাতুন এর উদ্যোগে এক ইফতার এর আয়োজন করা হয়। রোজার সময় সাধারণতঃ আমি কোনো প্রকার দাওয়াত দেয়া এবং নেয়াটাকে এড়িয়ে চলি। নিজের মতো করে রোজার সময়টা কাটাতে ভালো লাগে। কিন্তু কবি সেলিনা খাতুনের আহ্বানকে এড়িয়ে যাওয়া আমার জন্যে চ্যালেঞ্জিং। দাওয়াত দেয়ার সময় আপাকে অনুরোধ করেছিলাম, ঈদের পর আয়োজন করতে। আপা মৃদু ধমকে বললেন, ঈদের পরে আবার হবে, এখন আসো।

মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই যেভাবেই হোক এই ইফতার আয়োজনকে এড়িয়ে যাবো। ২১ তারিখ সকালে কবি সেলিনা খাতুন আপার ফোন। ইফতার আয়োজনের কথা মনে করিয়ে দিলেন। এরপর না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার সাধ্য কি আর থাকে?

রেডি হয়ে চলে গেলাম কবি সেলিনা খাতুনের ম্যারিগোল্ড হাই ইস্কুলে। অনেকদিন পর দেখা। আপা ব্যতিব্যস্ত ইফতার আয়োজনে। আপাকে জড়িয়ে ধরে তার স্নেহস্পর্শকে অনুভব করি। উপস্থিত আছেন বাংলা কবিতার আসরের বাংলাদেশ এডমিন কবি কবীর হুমায়ূন, কবি খবির উদ্দিন, কবি জাহিদ হোসেন রঞ্জু, কবি মোজাম্মেল হোসেন, কবি লিটন, কবি ফরিদ উদ্দিন এবং কবি জাকির হোসেন বিপ্লব।

কবি সেলিনা খাতুনের বিশাল আয়োজন। খেজুর, পানি, জুসসহ আলুর চপ, পেঁয়াজু, ছোলা মুড়ি, জিলাপী এবং সর্বশেষে বিরিয়ানী। কবি সেলিনা খাতুন একাই সব আয়োজন করেছেন। আসলে কবি সেলিনা খাতুনকে যত দেখি ততই মুগ্ধ হই। আপা ঠান্ডা মাথায় প্রচুর পরিশ্রম করতে পারেন। এবং তার আয়োজন থাকে খুব গোছানো।

আমরা সবাই একসাথে ইফতার শেষ করি। প্রতিটি খাবার অত্যন্ত সুস্বাদু। মোটামুটি ভুড়িভোজ সেরে সবাই মাগরিবের নামাজ আদায় করে নিলাম। তারপর সবাই একসাথে বসলাম। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শুরু হয় কথাবার্তা। স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় উঠে আসে সাম্প্রতিক দেশের চলমান পরিস্থিতি। কেউ পক্ষে, কেউ বিপক্ষে। আলোচনায় উত্তপ্ততার আঁচ পাওয়া দেয়।

সর্বজন শ্রদ্ধেয় কবি খবির উদ্দিন কৌশলে কবিতার প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দেন। কবিদের আসরে কবিতা হবে না তাই কি হয়? শুরু হলো কবিতা পাঠ। আসরে উদ্ভূত আলোচনার উত্তপ্ততা নিমিষেই হারিয়ে যায় কাব্য সুধার ফল্গুধারায়। বেশ অনেকদিন পর বাংলা কবিতার আসরের কবিদের কবিতা পাঠে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে পুরো পরিবেশ।

অনেকদিন পর কবিদের এই ছোট্ট মিলনমেলায় খুব মিস করছিলাম আমাদের কবিতার আসরকে। বাংলা কবিতা ডট কমের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কবিতাকে ভালবাসা কিছু মানুষ হয়ে উঠেছেন আত্মার আত্মীয়। জাত-পাত, ধর্ম সীমানা ভুলে আমরা এমন এক সঙ্ঘে পরিণত হয়েছি যে এই সঙ্ঘ সুখের জুড়ি মেলা ভার।

কবি সেলিনা খাতুনকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এই উদ্যোগ নেয়ার জন্যে। শুধুমাত্র কবিতা লিখলাম আর পোস্ট করে চলে গেলাম এমনটি না হয়ে যদি মাঝেমধ্যে নিজেদের মধ্যে বাস্তব দেখাশোনার উদ্যোগ নেয়া হতো তাহলে আমাদের বন্ধনগুলো আরো দৃঢ় হতে পারতো। আর এর মধ্য দিয়ে আমাদের আত্মাও হতো পরিতৃপ্ত। কেন যে এমনটি হয় না এসব ভাবনার মধ্যে দিয়েই শুনতে থাকি কবিতা।

এক সময় শেষ হয় কবিতা পাঠ আর আমরা কাব্য সুধা আস্বাদনের সুখময় অনুভূতি নিয়ে বিদায় নেই সবাই।