সব সম্ভবের দেশে বলে খুব ছোটবেলা একটা গল্প শুনেছিলাম নাকি অন্য কোথাও কোন প্রসঙ্গে কথাটি শুনেছিলাম মনে নেই। তবে কথাটি আরেকবার স্মরণ এবং প্রমাণ করলো বাঙলা কবিতার আসরের অগ্রজ এবং সকলের শ্রদ্ধেয় কবি অনিরুদ্ধ বুলবুল। ১১ই আগস্ট তারিখের বাঙলা কবিতার মাসিক আসরের ঘোষণা দেয়ার আগে কবি অনিরুদ্ধ বুলবুল ফোনে জানালেন এবারের আসরের আসর কবি আমাকে করতে চান।
আমি আকাশ থেকে পড়লাম। এ কী করে সম্ভব! আমি কেবল শিক্ষানবীশ হিসেবে আসরে পা রাখলাম, এখনো লেখার কোন যোগ্যতাই অর্জন করতে পারলাম না; আর আমি কিনা হবো আসর কবি এত এত মেধাবী আর অগ্রজ কবিদের মধ্য থেকে! খুব বিনীতভাবে অনুরোধ করলাম তাঁকে আমাকে যেন এভাবে বিব্রত না করা হয়। কারণ আমি মোটেই এটার যোগ্য নই। তিনি খুব আন্তরিকতা নিয়ে আমাকে বললেন সেটা আমাদের বুঝতে দেন। অগত্যা শ্রদ্ধেয় কবির উপরই ছেড়ে দেই।
১১ আগস্ট শনিবার নির্ধারিত সময়ের কিছুটা পরে পৌঁছালাম। সবার কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চেয়ে নিলাম কারণ আমার এক নিকটাত্মীয় অসুস্থ্য বিধায় তাকে দেখতে যেতে হয়েছিল এবং সে কারণে আমার এই বিলম্ব।
অসাধারণ এক সন্ধ্যার আয়োজন করেছেন কবি অনিরুদ্ধ বুলবুলসহ তাঁর সহযোগীরা। সবার মধ্যে বাড়তি একটা উৎসাহ দেখা গেল আসরের প্রথম মাসিক পত্রিকা “আলোর মিছিল” প্রকাশনাকে কেন্দ্র করে। একে একে আসছেন আসরের সব নক্ষত্ররা আর আমি মনে মনে স্রষ্টাকে স্মরণ করছি এনাদের সামনে আমাকে আসর কবির আসনে বসতে হবে ভেবে।
যা হোক সকলের উপস্থিতির প্রেক্ষিতে নির্ধারিত সময়ের কিছুটা পরে আসর শুরু হলো। শ্রদ্ধেয় এবং মুক্তমনা কবি মোজাম্মেল হোসেনের সঞ্চালনায় আরেক গুনী কবি শ্রদ্ধেয় জালাল উদ্দিন মুহাম্মদের সভাপতিত্বে আসরের কার্যক্রম শুরু হয়। আসর কবি হিসেবে আমি স্বরচিত কবিতা পাঠ করি। এর পরেই শুরু হয় গুনী কবিদের প্রতিভা দর্শন। ক্ষুদে কবি তাহমিদ এবং রোহানের আবৃত্তি ছিল অসাধারণ। জে আর এগ্নেসের কবিতা আবৃত্তি, ছোট গল্প পাঠ এবং গান সকলকে মুগ্ধ করেছে। প্রত্যেক কবি আবৃত্তির শুরুতেই বলছেন তাঁরা আবৃত্তি জানেন না, তাই তাঁরা আবৃত্তি না করে কবিতা পাঠ করছেন। কিন্তু আবৃত্তি শুরু হওয়ার সাথে সাথে আসরে নেমে আসে নীরবতা। অত্যন্ত মনোগ্রাহী আবৃত্তি করেছেন সবাই। আমি বসে বাসে ভাবছি কত বিনয়ী এনারা।
অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি সময়ে শ্রদ্ধেয় কবি অনিরুদ্ধ বুলবুল নিয়ে এলেন হাত ভরে আলোর মিছিল। আহা কি অপরূপ সে দৃশ্য! যখন সবাই হাতে নিয়ে ফটোসেশনের জন্য দাড়ালেন তখন মনে হচ্ছিল অনেকগুলো মোমের আলো জ্বলছে। এই প্রকাশনাটি নিয়ে দুটি কথা না বললেই নয়। আমার জানামতে কবি অনিরুদ্ধ বুলবুল তাঁর নিজস্ব অর্থ মেধা সময় শ্রম ব্যয় করেছেন আলোর মিছিলে আমাদের সামিল করার জন্য। কবি মনিরুজ্জামানও অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন কবির সাথে থেকে।
বিষয়টি উল্লেখ করার কারণ আমরা কবির শ্রম মেধা এবং সময়ের কোন মূল্য দিতে পারবো না, পারবো না কোন প্রতিদান দিতে। কবি অনিরুদ্ধ বুলবুল যে এই আসরের জন্য কতটা নিবেদিত প্রাণ তা তাঁর এই ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো দেখেই বোঝা যায়। যা হোক মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। আমরা কবির মেধা শ্রম সময়ের ব্যাপারে কিছু না করতে পারলেও আর্থিক কিছু দায়িত্ব কিন্তু নিতেই পারি। আমাদের সামার্থ্য অনুযায়ী আমরা যদি প্রত্যেকে অন্তত পাঁচটি করে প্রকাশনা নগদ মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে নেই তাহলে আমার বিশ্বাস আলোর মিছিল সগর্বে এগিয়ে যেতে পারবে।
আসর শেষে আমাকে অনুভুতি ব্যক্ত করতে বলা হলো। সত্যি কথা বলতে তখন আমি আর শব্দ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কোন শব্দে আমি এই ভালবাসার অনুভূতি ব্যক্ত করবো? আমার মতো একজন শিক্ষানবীশকে তাঁরা এতটা সম্মানিত করলেন, এ কত বড় মনের হলে সম্ভব তা শুধু অনুভবের বিষয়; প্রকাশের নয়। একদিকে শব্দ সংকট, অন্যদিকে এই উদার গুনী আর মহানুভব মানুষগুলোর ভালবাসা; সব মিলে আমি কিছুটা আবেগাপ্লুত।
যার জীবন প্রশাসনের কিছু গৎ বাঁধা নিয়ম আর সংসারের গন্ডীতে আবদ্ধ তার এই আসরে জায়গা করার নেপথ্যে কাজ করেছে আসরের আরেক গুনী এবং অগ্রগামী কবি ফারহাত আহমেদের অনুপ্রেরণা। আর আসরে আমাকে ধরে রেখেছেন একদল সুন্দর আর উদার মনের মানুষ। যারা প্রত্যেকে নিজ যোগ্যতায় যোগ্য এবং অত্যন্ত সম্মানিত। আসলে সম্মানী মানুষই পারে অন্যকে সম্মান জানাতে।