'শ্রাবণের মৃত্যু বিষাদ অঞ্জলি'

কত দিন তোমাকে নিয়ে লেখা হয়না অঞ্জলি
শ্রাবণ শেষ হয়ে বিদায়ের ঘন্টা বাজিয়ে বাজিয়ে যায়
ব্যাঙ্গ করে যায়, গোখরা-ফঁণি তুলে যায় ঢেও এর মত
বৃষ্টি হয়ে হয়ে ঝরে তবু আকাশ কালো মেঘে হয়ে থাকে,
বিকেলের আকাশে রক্তাক্ত আল্পনা লেপটে থাকে
কদমের রেণু শুভ্রতা চোখের ক্লান্তি বাড়িয়ে বিষাদ এনে দেয়
শাপলার পাপড়িতে জমেছে লাল গাঢ় রক্ত

নিশিতের গভীর ভয়ানক ডাক ভেসে আসে পুত্র হারা
কোন জননীর বিলাপের সুরে
রাতের সব সময়টা আমার জন্য অপেক্ষা করে
তোমার মত রাত জাগা পাখিরা-আহত হয় আমার নিরবতায়, আমার নিশ্চুপতায়
তবু গায় গান রাতজাগা  প্যাঁচা, নিশিবক, বাদুর,
নিজের জায়গায় বসে রাতবিরাতে বিলাপ করে
ডাকে যেন সাইদ-মুক্ত'দের আত্মা,

ছায়া হয়ে ঘুরে আমার চার পাশে কি যেন!
এখানে সেখানে শুনা যায় শোকের শ্বাস
যেন বুক ধড়ফড় হয়ে মুচড়িয়ে যায়
এর মধ্যে তোমার ভাবনা-এলোমেলো ভাবনা
জানি না কেন তা হয় এমন,
এমন সোনার শ্রাবণ যায় চলে
তবু তুমি আমার মধ্যে না পাবার ব্যাকুলে ঢেউ তুলনা
আলো মেলে রাখে চাঁদ, চাঁদের বিমূর্ত বেলি গন্ধ মাখা
আলোর প্রেম আমায় মুগ্ধ করেনা
সরেনা দৃশ্য কালো কলংকিত শ্রাবণে উত্তাল রণ,
বৃষ্টি ধূয়ে গেছে মায়ের কলিজারন সন্তানের রক্ত,
গরম রক্ত শ্রাবণের বৃষ্টিতে লীন হয়ে গেছে প্রাণের স্তুপ

কিছু ফুল ফুটে আর ঝরে তবু শুভাস ছড়ায়
যেন বিষের শুভাস, উম্মাদ করে আমায়,
লজ্জিত করে আমায় সন্তানদের সম্মুখে,
কি শ্রাবণে এসেছি আমারা দেখছি,
ইতিহাস-নরকের খনী দেখছি...

কিছু কল্পনা আমাকে দেখায় পথ,
কোন ভাবনা আমাকে মঙ্গল এনে দেয়,
আমি কোন পথের পথিক হবো
কার গুলিতে নিহত হবো আমি
আমার বিবেক আমাকে বিধ্বস্ত  করে
সেই বসন্তের বছরে যেখানে আমি স্বপ্ন-
খেলা করে শিশুর মত আমিতে
হাসে শিশুর মত,কাঁদেনা কেবল কোন পাগলীর মত
কঠিন পাথুরে বুক করেছি, আমি কাঁদিনা কেবল,
চোখের পানি পড়েনা কেবল,
এমন সোনার শ্রাবণ চলে গেছে
বৃষ্টির মত করে রক্ত হয়ে হয়ে

চৌমুহনী স্বপ্নে আমি আর বিভোর থাকি না তোমাতে
এই শ্রাবণে অঞ্জলি আমার স্বাদের অঞ্জলি
বিরহের মাঝে থেকে কোন অলিক মহে রাখিনা তোমাতে
কি অসুখ হলো আমার! কি কাল যম ভর করলো মস্তকে
আমি তো সাগরের নাবিক হইনা এখন অঞ্জলি
তবুও আমি ভেসে ভেসে কুল হারালাম
এই শ্রাবণের রক্ত সৈকতে আমার পালে ভর করেছে
অনিলের উল্টো দ্বিক, আমার ডিঙির বৈঠা ভেঙেছে

নিশ্চয়ই  আমি  মাথা মোটা মর্দ্দ-নির্বোধ নইলে আমি কেন লিখছিনা মাস গত হয়ে গেলো শ্রাবণের
পুড়ছিনা তোমার বিরহ প্রেম অনলে
তোমার দেয়া সব যন্ত্রণা বিরহ বেদনা নব্য গণহত্যার
দৃশ্য ঢেকে রেখেছে আমার পুরাতন কষ্ট সাগার
তাই আমি দুঃখীত অঞ্জলি
তোমাকে নিয়ে বিলাপ করছেনা এই শ্রাবণে দগ্ধ হৃদ

এই কালো কাল যম শ্রাবণ নিয়ে মত্ত হয়ে
তোমায় ভুলে থাকি
আমার যেন সহসায় শ্রাবণ খন্ডিত করছে
হাসছে কৌতুহলে,
আমি তোমাকে টিপ পড়াবো শ্রাবেন
লালে গোধূলির সাত রঙ,কিন্তু  শ্রাবণ কলংক এখন
আমি তোমাকে শাপনালর ফুল দেবো যা হয়েছে শিমুল লালে ছেলেদের বুকের  রক্তে
আমি তোমাকে কদমের রেণু দেবো যা হয়েছে
আমার নয়ন খীণের ঝাপসা সরশে ফুল

অঞ্জলি আমাকে তুমি একমুটো অভয় দিও
আমি যেন পার করতে পারি এই যাত্রা
আমার সাথে আছে আমার কচি শিশুরা,
আমার পথের দ্বিকে চেয়ে থাকে, ঘরে ফিরে এলে
হাতের দিকে তাকায়-খাবার খুঁজে
আমি শ্রাবণের সব প্রেম ভুলে গেছি,
কারন আমি দেখেছি বর্বর গণ হত্যা নব শ্রাবণ
আমি শামুখের মত মুখ বন্ধ করে থাকি
না  হাসি, না কাদি,না কোন অনুভূতি-বিরবির করি
আমি যেন দেখছিলাম আমার শিশুদের করুন ভবিষ্যত
আমি ধাবিত করছি ঐ আয়না ঘরে ঐ মরন সেলে

অঞ্জলি আমাকে মাপ করো আমি তোমাকে
নিয়ে আর হয়তো লেখবোনা কোন দিন,
আমার কোন বিরহ নেই আর,
আমার কোন বিষাদ নেই তোমাকে ঘিরে
কারন আমি তার থেকে হাজার লাখ
বিষাদ দোজোখে নিক্ষেপ হয়েছি নিজে থেকে
এই শ্রাবণের আগুনে
আমি তোমার সব হাসি ভুলে গেছি
সব ভালোবাসায় ফেঁসে গেছি
তুমি আমায় ছাড়িয়ে দিও
কারন আমি মৃত্যু দেখছি,
গণমৃত্যু!  আমাকে সব উল্লাস উপহাস করে
সব হাসি তিরস্কার করে আমি এমন শ্রাবণ দেখছি
অঞ্জলি  তোমাকে না পাবার কোটি বেদনা ছাড়িয়ে
গেছি, এই শ্রাবণের বেলা অবেলার মৃত্যু খবরে