জুলাইয়ের ডায়েরি

একটা শ্বাস নেবার দিন ছিলো পাঁচজুলাই,
‘সাঙ্গ হয়েছে মৃত্যু খেলা,
পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটছে গণভবন প্রান্তে।

কুলুফ দেয়া ঘরের দরজা খুলে দিলাম,
আওয়াজ আসছে আনন্দ মিছিলের,
স্বাধীন-স্বাধীন বলে জয় গানে ধ্বনিত পরিবেশ,
একটা বন্দিপাখীর কথা শুনলাম, ’পরবাসে
ছিলো ষোল বছর রোজ মৃত্যু কামনা করা ছিলো
তার ধ্যানস্বৈরশাসকের,  

সোনার দেশ সোনার মানুষ কয়লা হয়েছে যেই সাধকের বালাখানায়,
একটা বন্দি পাখির কান্না শুনেছি , ‘নির্বাসনে ছিলো,
আমি স্ববাসেই ছিলাম কারন আমিতো এক পয়াসার পুরুষ,
আমার বকবকানি কারকি আসে যায়!
একটা গর্ভবতী হরিণীর চারপাশে ছিলো হায়না,
নেকড়ের দল, কোথায় পসব করবে অনাগত সাবক!
সে মুক্ত এক ঘাসের নীড় পেলো,
তার গর্ভভার কমে গেলো, একটা স্বপ্নের খেলা
চোখে খেলতে লাগলো,
পাঁচ জুলাই সারা দিন সার রাত ছিলো মুক্তির দিন,
রক্ত খেলা বন্ধের দিন,
আয়না-ঘরের সকল কবুতর এক এক করে
আকাশে ডালা মেললো, শ্বাস নিলো।

মায়েরা ছেড়ে দিয়েলো কোলের শিশুদের ,
‘বলছিলো- হায়নার ভয় নেই জংগলের আদিবাসী তুমি।
তুমি স্বাধীন বানরপুত্র, নাচো,লাপাও,
স্বাধীন তুমি, তুমি মুক্ত, গাছে গাছে ফুলের সৌরভে
তুমি সব পরাধীনের গ্লানি ভুলো।

বাদুড়ের মত ঝুলে থাকো, ইচ্ছে মত জীবন সাঁজাও।
জুলাইয়ের ডায়েরী ষোল বছরের এক ইতিহাস,
রক্তে, এই পাঁচজুলাই কেনা অনেক জীবনের বিনিময়ে,
নতুন স্বপ্নের,নতুন দিগন্তের, এক উজ্জ্বল ইতিহাসের নাম।
আবার ফুটবে শাপলা শ্রাবণের জলে,
ভরবে নদী যৌবনে, রূপালী মা’ইলিশ ডিম দেবে।
আকাশে আসবে নয়া আলোর সোনালী বর্ন
রেণু হয়ে আসবে তা ঘরে।

খাচা থেকে বেড়িয়ে আসা সিংহ আবার গর্জন দেবে,
সব শুয়োরের দল গর্তে ডুকবে,
শালিকের হলদে ঠোঁটে দেখবো নববধূ শাড়ী হলুদসন্ধ্যা,
ঘুঘু বসবে এক যোড়া ডিম নিয়ে নিজের নীড়ে।
নিজের দাবি নিজের দেশে,
স্বৈরাচার এর গুলিতে ঝড়বেনা আর কোন ফুল,
রক্ত জলে লাল হবেনা সাগার,
গুলির শব্দে হেহুশ হবেনা নিরীহ প্রাণী ,
অথিতি পাখিরা অবাদে আসবে বাংলার রূপ বাড়াতে।

সোনাসোহাগে থাকবে নুন ভাতে ঘরে ঘর,
মোটা কাপড়ে এই বাংলা কুঁড়ে ঘর,
হাসবে খেলবে স্বাধীনতা ,‘শহীদদের দেয়া জুলাইয়ের  
এই ইতিহাসে,সমতা ফেরবে সকলের দুয়ারে,
বৈষম্যের দেঢ় শ্লোগানে আর মরবেনা বাংলা,
ভাসবেনা রোহিত সাগরে নগর-পল্লী।  

এত রক্ত দেখেছে, ‘সমাপ্তি দিয়েছে জুলাই পাঁচ,  
এত লাশ দেখেছে বাংলা, ‘থামিয়েছে জুলাই পাঁচ,
এত বন্দী আয়না ঘর দেখেছে , ‘ভেঙেছে জুলাই পাঁচ।

পাঁচ জুলাই আমরা না পেলে দেশ রক্ত
খেলার কতনা সমুদ্র রচিত হতো,
প্রতিটি ঘর হতো আয়না-বন্দীকারা,
বাংলা হত কৃত্রিম মেধা,হতো আদালত ইচ্ছের খেলা।
কোন দিন অন্ধকার কাটিয়ে, ‘ভোর হতোনা,  
কোন দিন ব্যথা পেল, ‘’কাঁদবারও অধিকার হতোনা,
কোটা নিয়েছে আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তান,
নিয়েছে গোলাপের রক্তনির্যাস,
জুলাই থাকবে মানুষের বুকে স্মৃতির ডায়েরি হয়ে।