'চিঠি দিও'
গদ্য কবিতা
..........................................................
একখানা কাগজ দিও,
সামান্য কিছু লিখো,আমাকে জানতে চেয়ো,
                                             কেমন করে বাঁচি!
কোন গ্রহে থাকি।

সেখানে জীবনের স্বাদ কেমন!
চলন্ত বগি থেকে পড়ে যায়া কিশোর,
দুর্গমগিরি সেই জনজীবন কেমন, কোন হিংস্রের
বাস সেখানে, মানুষ বাঁচে কি করে একলা এক দ্বীপ।

যেমন তেমন লিখলে লিখে দিও
কতটা মত্ত হলে নিজেকে ভুলে।
             এই শরৎ কেমন করে কাটে-লিখো,
খুব গভীর করে লিখতে হবেনা শিউলি
কেমন করে কাটলো দুর্স্বপ্নের চব্বিশ বছর?
জানিও, জানতে চেয়ো,
কতটা মেঘ জমলে সূর্য আড়ালে থাকে যুগ যুগ
কতটা বেদনা জমলে বুক নুড়ি হয়।

                   এত অলিক- প্রেম,
কি করে সামাল দিলে?
সাত আসমান প্রেমের বিশালতা তো ছিলো!
          লীন হয়ে গেলো কোন যাদুর কাঠিতে?
          স্বপ্নের তাজমহলে শাজাহানের উপমায়
সম্রাট বানাতে- তুমি ওমর সমাধি হবে প্রেম,
তোমার অশ্রুতে সিন্ধু জন্ম হয়েছে পৃথিবী
           প্রাসাদ কি করে হয় গহনে?

               তারপর  গেলো এত শরত- বসন্ত।
কোকিল গান করলো কৃষ্ণচূরায়
শিমুলের ডালে ডালে রক্তিম ঠোঁট তুমি
               মাতাল বাতাসের গানে গানে তুমি এসো
অলস দুপুরে সেতারের সুরে হয়ে হয়ে,
আমি যেন আলো মুষ্টি করে ধরবার মত
           যনো মরুর দেশে উঠ হয়ে তোমার
                              স্মৃতিবহর টেনে টেনে চলছি।

বাইশ বছর কোন পত্র পাইনি,
                      তবুও কেটেছে প্রতিক্ষায়।
ভেবেছিলাম ডাকপিয়ন ঠিকানা হারিয়েছে,
নয়তো ট্রাফিক জ্যামে আটকাপরেছে
তারপর বুজলাম শিশুকালে থেকে আছি,
যেমন থাকলে 'আত্মবিশ্বাস' বলে।

শরতের দারুণ রজনী -
                 আদোবৃষ্টি আদো বলাকা আকাশ
মেঘমাল্লা-আদোজোছনা মৃদু বাতাস,
                দোলনচাপা-জুঁই-মাধবী লতা-কেয়ার
রুপ-সৌরভ, যেন তুমি হাতছানি দাও।
                     তোমার  অবয়ব- চুলের গন্ধ
জুঁই কে লজ্জায় পেলে,
                তোমার হাসি মল্লিকার ডাগায় ফুটেছে
ঠোঁট মাধুবী ফুলের পাপড়িতেও
              জারুলের সবুজে তুমি বেগুনি রংঙে
  চেনা জামা পড়া।

তুমি হতো জানোনা আজকাল শহরে,
সন্ন্যাসী-বৈরাগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে
              তাদের গল্প শুনি,--
আমাদের গল্পে মিলে যায়,
                           তবে কি আমরাও তাই?
কংক্রিটের শহরে বৈরাগী! বিস্ময়কর! না?
                 দেখতে খুব মানুষের মত,
কিন্তু ভেতরটা একটা অগ্নিসাগর,
চোখজোড়া কি করুন প্রেমে ভরা,
বিধ্বস্ত  ভারি মিছাইলের হাঘাতে শক্ত নগরী,
         তবুও দেখতে মানুষের মত- হাসে- গায়-
দাড়ায় কারো পাশে খুটি হয়ে, দেখতে মানুষের মতই,
রাতের শহরে প্রিতিটা দালানে প্রত্যাক ঘরে
        প্রায়াইসবৈরাগী ভাবের আভাস মেলে।

               একখানা কাগজ দিও।
           খুব বেশি কিছু লিখতে হবেনা।-
            প্রেম নাকি হাজার ভুলের উর্ধে?
তবে কি আমি বেঁচে আছি  ঝিনুকে মুক্তার মত?
একটু লিখে দিও সাদা কাগজে-জীবনে তোমার?
        সেই সত্য আমি খুঁজি- অনেক ভুলের উর্ধে,
সেই সত্যের জন্মাতৃ হয়ে একটি প্রমান চাই
একখানা কাগজে তা লিখে দিও,
             লিখে দিও সিন্ধু রচয়িতা অশ্রুতে তোমার।

দু আঁখি হিমালয় থেকে নেমে এসে হয়েছে যমুনা
ঐ আঁখি কি করে অন্য স্বপ্ন দেখবে?একটু লিখে দিও,
        যে নয়ন কুয়াশারহীম সকাল হয়ে থাকে
            কি করে তা এত লম্বা পথ পারি দেবে?
জানতে চেও আমায়।

একখানা কাগজ দিও, কিছু একটা লিখে দিও,
সেই কাগজের ভাঁজে ভাঁজে নয়নের
একটু কাজল মেখে দিও,
                    তোমার চুলের জলে ভিজিয়ে  দিও,
কাগজের জমিনে কিছু লিখে না হয় না দিও,
              তোমার আলতো হাতে মুড়িয়ে দিয়ো,
তোমার ঠোঁট থেকে একটু রং নিয়ে তর্জনীর ছাপ দিও
              মুখের লালায় খামখানা জুড়ে দিও।
.......................................................................
                           ঢাকা বাংলাদেশ
               উৎস্বর্গ- কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্
                   তারিখ ঃ ০১/০৯/২০২৪ ইং