আমার যখন এই আসরে পথচলা শুরু, সে সময়ের কথা। তখন আসরে নিয়মিত কবিদের একটা তালিকা দেখাতো (১০-১২ জনের মতো)। বিরতিহীন ভাবে ৩০ দিনে ৩০টি কবিতা প্রকাশ করলে নামের আদ্যক্ষরের জৈষ্ঠতা অনুযায়ী সেই কবির নাম নিয়মিত কবি তালিকায় উঠে আসতো। প্রথম ৩০ দিনে ৩০ টা কবিতা প্রকাশের পরে যখন আমার নাম সেই তালিকায় উঠে আসলো তখন সে-কি আনন্দ। সিদ্ধান্ত নিলাম, একবার যখন নিয়মিত’র তালিকায় নাম চলেই এসেছে, তাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হবে-এই মনোবৃত্তি নিয়ে বিরতিহীন ভাবে কবিতা প্রকাশের নেশা চেপে বসলো ঘাড়ে। আমার যেহেতু রিজার্ভে বেশি কবিতা লেখা ছিল না, সামান্য যে কয়টা ছিল সেগুলোও প্রকাশিত হয়ে গেছে- এখন কী করা? তাই সারারাত জেগে জেগে লিখতাম, যেমন করেই হোক নিয়মিত তালিকা থেকে নাম যেন বাদ পরে না যায়! সে সময় গাজীপুরে আমি একটা ছোট-খাটো চাকুরী করতাম, অফিসে থাকতে হতো ১৬-১৭ ঘন্টার মতো। সেই সকাল ৬টায় অফিসে আসতাম, বাসায় ফিরতাম রাত ১০টার পরে। খাওয়া-দাওয়া সেরে শুরু হতো লেখালেখি। এমন সময়ও গেছে সারারাত ঘুমাইনি। খুব কষ্ট হতো তখন...। এমন সময়ই আসরের একজন কবি আমার কষ্টকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিলো! যেনো কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা! একদিন সে তার একটি কবিতা প্রকাশ করে কবিতার নিচে লিখে দিলোঃ
‘আজ আমি খুব খুশি, দীর্ঘ কয়েক বছর আগে হারিয়ে যাওয়া আমার কবিতার খাতাটি আজ পুরনো জিনিস পত্রের মধ্যে খুঁজে পেয়েছি। সেখান থেকেই আজকের এই কবিতাটি দিলাম’।
কবিতাটি আমি পড়লাম। অসাধারণ কবিতা। তখন আমি কবিকে মন্তব্য করে জিজ্ঞাসা করলাম যে, ঐ পুরনো খাতাতে কতগুলো কবিতা আছে? কবি জানানো-অনেকগুলো। সেদিন থেকেই সেই কবির সাথে আমার হিংসের দিন শুরু! আহা, আমি সারারাত না ঘুমিয়ে আবোল-তাবোল কি ছাই লিখছি, আর এই কবি এখন থেকে সারারাত নাক ডেকে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এমন অসম্ভব সুন্দর সুন্দর কবিতা দিতে থাকবে-এটা কী সহ্য করা যায় বলুন! সেই থেকে প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে আমি তাকে হিংসে করা শুরু করলাম তার লেখা প্রতিটি কবিতায় মন্তব্য করে করে। সে এক মধুর হিংসার স্মৃতি...
এখন পর্যন্ত তার সাথে আমার হিংসে চলছেই। সেই হিংসে বন্ধুত্বের, সেই হিংসে ভালবাসার, সেই হিংসে সব কিছুর উর্দ্ধে এমন এক সীমাহীন ভালো লাগার সম্পর্ক যা আমি ছিন্ন করার কথা ভাবতেই পারি না। শ্রদ্ধা ও স্নেহের সেই হিংসে চলুক তার সাথে অনন্তকাল....
আমার সেই হিংসে করা শ্রদ্ধেয় কবিটির নাম প্রিয় কবি ‘পরিতোষ ভৌমিক (অমায়িক কবি)’। আমার কবিতাগুলোতে তার অভিভাবক সুলভ স্নেহময় মন্তব্য সব সময়ই অনুপ্রাণিত করে আমায়। আমার সেই প্রিয় কবিটি ভালো থাকুক, সুস্থ্য থাকুক, অনেক বড় প্রতিষ্ঠিত কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক-এটিই কামনা আজ।