পৃথিবীর তাবত দীর্ঘ নি:শ্বাস জমা হয় এই বৃদ্ধাশ্রমে।
নিদ্রাহীন বিষন্নতা ভর করে মননে- মগজে।
শীতলতা ধেয়ে আসে শরীরের রক্ত কনিকায়।
স্বপ্ন জয়ের পথে সাফল্যের চুড়ায় উঠে দেখি।
ভাংগা আকাশ সূর্য রশ্মিতে পুড়ে অগ্নি তামরি ভূমি।
সারা জীবনের ঝরে পড়া শরীরের নোনতা ঘামের ভেতর সাতার কাটি।
অথচ আরাম আয়েশ তুচ্ছ করে কত কষ্ট যত্ন করে করেছিনু লালন পালন।
আশা-শেষ জীবনে একটু আরাম আয়েশ না হোক।
একটু স্নেহের ছোয়া ঔরসের হাসি খুশি জীবন।
পড়শির সাথে কুশল বিনিময়
সুখ,দু:খের কথোপকথন।
শেষ নি:শাসের সময় সবাইকে হৃদ্যতার বিদায় নেয়া।
ফুটবে ফুল অলি গুঞ্জন স্বর্গের হাতছানি ।
এসব আকাংখা এখন বেদনার তুষের অগ্নি।
অশ্রুতে নিভে না থেকে থেকে জ্বালিয়ে করে নি:শেষ।
তবু অভিশাপ আসে না এটুকু শুভ কামনায় মন পায় প্রশান্তি।
স্বজনের বিয়োগের শোক হয়তোবা ভোলা যায়।
কিন্তু জীবিত ঔরশের দুরত্ব অবহেলার যন্ত্রণা মেনে নেয়া দুরুহ।
অথচ ওদের কোন অমংগলে পোড়া দিল হুহু করে কাদে।
জীবন হয়ে উঠে ধুসর বিবর্ণ।
মনে পড়ে আপন ঔরশেরা সাথে রাখতে অপারগতা প্রকাশ,
ভংগুর হৃদয়ে এক নিশীথে গৃহত্যাগ।
ঘুরেছি পথে পথে বিষন্নতার বিষ পানে।
দেখেছি অগ্নির ভেতর পুস্পের হাসি।
ক্রমাগত ক্ষুধায় খুদ্র থেকে খুদ্র পাকস্থলি ষড় রিপুর গতি মন্থর।
চিকিতসা শুন্য অসুস্থতায় রক্ত বমি
কুকুর বিড়ালের সাথে মিলে একান্ত মৌনতায়
তবু দেখেছি সেথায় অগ্রজের প্রতি প্রীতি ভালোবাসা।
ভূখা পেটে অন্ন ভাগাভাগি ভক্তি শ্রদ্ধা
অবশেষে বৃদ্ধাশ্রমে-এখানে বিমূঢ় ব্যাথাতুর ইট পাথরের গাথুনি পলেস্তারা খসা শেওলায় আচ্ছাদিত প্রতিটি জীবন কাহিনী।
বৃদ্ধাশ্রমে সেবা পেয়ে ভালোই আছি,এখানে সবে সবার দু:খ ভুলে হাসি, খেলি,থাকি এবাদতে।
তবু বুকের ভেতর খালি খালি যেন শুন্য খাচার ভেতর শুন্যে বসবাস।
তবে! একি প্রকৃতির প্রতিশোধ ?
নাকি সময়ের দাবি সভ্যতার চালচিত্র,
বার্ধ্যকে গিলে শরীর শোক বিচ্ছেদে বারে রোগ বিষন্নতার ছাপ স্পষ্ট
অতৃপ্ত আত্মা গন্তব্যে যেতে অধীর আগ্রহে পথ চেয়ে থাকে।