আমি এসেছি ;এসেছি আমি পাথরমূর্তী কাঁদাতে
প্রকৃষ্ট আকাশটাকে প্রকম্পনে নত করে দিতে
কিশোরীর হাতের পুতুলের বুকে প্রাণ দিতে
ভূপৃষ্ঠের স্তরে থেকে নক্ষত্রে-নক্ষত্রে চন্দ্র-সৌর্য্যে
চির যাবতীয়গামী প্রভুশূন্য এক সত্ত্বা হয়ে
এসেছি আমি ;আমি এসেছি ।
বয়োবৃদ্ধের চোখের ছাঁই মণিতে হারিয়ে খোঁজা
পুনঃ জ্যোতির্দৃষ্টি রশ্মি ঝিলিকের রৌদ্র ছুঁড়ে দিতে
পথঘোলা পথিকের হতাশার হাতের মুঠোয়
অঙ্গুরীর ইশারায় স্বর্ণসংবাদ পুরে দিতে
আঁধার প্রদেশে চির অমৃত সকাল চোখে নিয়ে
পৃথাবীর পাশে পাশে বিধি বিদ্রোহের কালোকীট
ঈগলের নখ পায়ে হ্যাঁচকা আঁচরে তুলে নিতে
এসেছি আমি ;আমি এসেছি ।
বারবার অমরের ছবিতে মরে যেতে এসেছি
হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান হয়ে আমি এসেছি
ঘড়ির কাঁটায় এসে বিরতি হেসেছে অট্টহাসি
ক্যালেন্ডারের পাতাটা হয়েছে সুতীব্র হয়রান
আমার পায়ের শব্দে অক্লান্ত না থামার গন্তব্য
যেখানে মৃত্যু ডেকেছে ,যেখানে অবশেষ হয়েছে
সেখানে নতুন জন্ম ,নতুন উত্পত্তি হয়ে
এসেছি আমি ;আমি এসেছি ।
স্বামীহারা বিধবার ওষ্ঠে বাঁকা চাঁদ হাসি হেসে
সরল সিঁথিতে পুনঃ রক্ত বিজলী সিঁদুর হয়ে
মা হারা ঐ সন্তানের নাকে ঘুমপাড়ানীর ঘ্রাণে
নগরীর নাক চেপে অক্সিজেন প্রসিদ্ধ এসেছি ;
সীমারের বাহুরাঙা খঞ্জরের প্রতিশোধ হয়ে
ফোরাতের প্রতিবন্ধী স্তব্ধ চাপা ঐ রক্ত কান্নার
মহাসেন জলোচ্ছাস ,বিধাতার নিকৃষ্ট গজব
কিংবা এজিদের অভিমুখে অভিসম্পাত এসেছি
কারবালার নিরীহ আকন্ঠে জেগেছি সিংহী-ব্যাঘ্র গর্জনে
এসেছি আমি ;আমি এসেছি ।
নিয়মের চেয়ে আরো নিয়ম অঙ্গুলী নখে আজ
নিশ্বাসের দগ্ধ গন্ধে ভস্ম করে দেব পৃথিবীকে
উল্কার অশ্রদ্ধ গতি হয়ে পিছ করি মঙ্গলকে
ছায়ার শব্দের মত সূর্যের বিপক্ষে করি যুদ্ধ
শত 'খাইবার' শত 'বিশ্বযুদ্ধ' শত 'পানিপথ'
হাতের মুঠোয় রেখে কাগজের মত করি দলা
সামুদ্রিক হাঙরের দাঁত করি দুর্বিপাকে ক্ষয়
অহঙ্কৃত গোলাপের মুখে ছুঁড়ি বিদগ্ধ এসিড
ময়ূরের পালকের ঝাপটায় তুলি মহাঘূর্ণি
বিরাম চিহ্নের মত থামাবো অসিদ্ধ রাজনীতি
অস্নিগ্ধ রোষ্ট্টনির্মিত প্রাচীর করেছি জীর্ণ-শীর্ণ
এক বিরল সত্ত্বায় প্রথম কিংবা পুনরায়
এসেছি আমি ;আমি এসেছি ।
রফিক শফিক সালামের রঞ্জিত বুক এসেছি
'কালো রাত্রি' আঁধারের পেছনে উজ্জ্বল স্পর্ধা নিয়ে
নেকড়ের বিপরীতে নেকড়ের নির্মম মুখোশে
সন্ত্রাসের বিপরীতে সন্ত্রাসী লম্ফ তুলে এসেছি
রাজাকার শামসের বুকে বিষ পা মাড়াতে জন্মেছি
নিঃষ্পাপ বিশ্বজিতের শেষ নাভিশ্বাস ফুঁসে উঠি
ধর্ষিতার ভস্ম বুকে বাঁচার হ্লাদ হয়ে জেগেছি
বাতাসের অবয়বে মিশে আছি প্রকৃতির সাথে
এই বুঝি মসজিদে এই বুঝি মন্দির ,গীর্জায়
সুশ্রাব্য ঘন্টার শব্দে ;গীতা ,বাইবেল ,কুরআনে
এসেছি আমি ;আমি এসেছি ।
অবশেষে প্রেম হয়ে প্রীতি নিয়ে হেসেছি হিংসায়
এখানে আজরাঈল কেঁদেছে ,ঝর্ণার গতি এঁকে
ইশরাফিল থমকে যায় রহস্যের যাদুছলে
মিশরের নীলনদ গর্জে ওঠে পাষানের চোখে ;
নর্তকীর ঘুঙুরের নৃত্যে ,বারাঙ্গনার অন্তরে
সুবিশুদ্ধ পবিত্রতা ,যবনিকা নামাতে এসেছি ;
অশ্রীলতার উলঙ্গ নাভিতে কালো বোরখা নিয়ে
কলঙ্কিত প্রকৃতিতে সতীত্বের আবরণ নিয়ে
অন্যায়ের টুটি চেপে সমীচীন সত্যনিষ্ঠা নিয়ে
আচানক বিজলীর শব্দ ফেঁটে কম্পনে এসেছি ;
অক্টোপাসের চাইতে শ্রেষ্ঠ হ্রদয় বুকে ধরেছি
অন্ধকে ত্যাগের বস্ত্রে দুই চোখ বিলাতে এসেছি ;
বটবৃক্ষের গৌরব মাড়িয়ে দিয়েছি পদপৃষ্ঠে
চোখের সূক্ষ আড়ালে বরফের মত সফেদকে ,
পাপলব্ধ নির্ভুলকে কলঙ্কিত করতে রেগেছি
দারিদ্রকে পেটে ধরে হয়েছি সুমহা দার্শনিক ।