আমরা ভেসে চলেছি যুগের স্রোতের তালে তালে-আমাদের জীবনের মত স্বপ্নের গড়া রাজ্য-সম্রাজ্যগুলি মিশে গেছে মাটির পবিত্রতার সাথে-কত জাতি মিশে আছে মাটির কণায় কণায়-রাস্তায় রাস্তায় তার রূপের,তার পরিকাঠামোর,তার রঙের কত পরিবরতন হয়েছে। তাই বাংলা ভাষা ও বাঙলী জাতিকে জানতে গেলে আধুনিক কাল থেকে ফিরে যেতে অতি প্রাচীনকালে-কেমন ছিল আমার বাংলা মা ও তাঁর সন্তানের মুখের ভাষা।
ভারতের ভাগ্য পরিবরতনের সঙ্গে সঙ্গে তার ছোটবড় প্রত্যেকটি রাজ্যের পরিবরতনের ঘটেছে। বাংলা ভূমিরও ইহার ব্যতিক্রম ঘটেনি। শাসন কাজের সুবিধার জন্য ভারত সম্রাটগণ বিভিন্ন যুগে বাংলার বিভিন্ন অংশ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। তাই এর সীমা রেখা নিদিষ্ট করা মুস্কিল ছিল। তবে যদি সাহিত্য-ভাষা জাতির মেরুদন্ড হয় বা মানসমুকুর হয় এবং ভাষাই যদি অবলম্বন বা মাধ্যম হয় তাহলে একথা সবীকার করতে হবে যে বিশাল সীমা- পরিসীমা জুড়ে চিরকাল ধরে বাঙলীর ভাষা-সাহিত্যের যে সৌধ বনিয়াদ গড়ে উঠেছে সেটিই হল বাংলার আসল রূপসীমা বা সীমারেখা। তাই লক্ষ করলে দেখা যাবে যে-যে-উত্তরে তুষারধারী হিমালয়,ভুটান,সিকিম,নেপাল; উত্তরে ব্রহ্মপুত্র নদের সীমা; উত্তর-পশ্চিমে ভাগরথীর সুবিশান সমভূমি। পূবে গারো-খাসিয়া-জয়ন্তিয়া-ত্রিপুরা-চট্টগ্রাম পরবতশ্রেণী; পশ্চিমে রাজমহল-সওতাল পরগণা-ছোটনাগপুর-মানভূম-ময়ূরভঞ্জ-অরণ্যসীমা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপ সাগ র-এই হল বাংলা মায়ের সীমা-যেখানে তাঁর সন্তানের বসবাস।
২৪।০৪।২০১৭
আমরা বাঙালীরা যেখানে বসবাস করি-নাম তার ‘বাংলা’। প্রাচীন কালে এর বিশেষ কোনো নাম ছিল না। ইহা কয়েকটি সীমা,জনপদ বা অঞ্চলে ভাগে বিভক্ত ছিল এবং প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা নামে পরিচিত ছিল। ব লা যেতে পারে উত্তরে গৌড়,পুন্ড্র,বরেন্দ্র;পশ্চিমে রাঢ়,তাম্রলিপ্ত;দক্ষিণ-পূবে বাঙ্গাল,সমতট,হারিকেল ইত্যাদি। পরে এই অঞ্চলগুলি বড়ো দেশে পরিনত হয় ইহার নাম হয় ‘বাংলা’। ‘বঙ্গ’ বা ‘বাঙ্গাল’ থেকে ‘বাংলা’ নামের উৎপত্তি।
চলবে--------
সংগ্রহ-বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস-(প্রাচীন)-