সত্তরে জলোচ্ছ্বাস

রুদ্র মূর্তি নিয়ে ভয়াল জলোচ্ছ্বাস ধায় সত্তরে, কৈশোরে,
নির্দয় বায়ুর তীব্র গতি ঘরবাড়ি বৃক্ষরাজি ফেলে উপড়ে।
আকাশের চিৎকার ধ্বনি চারিদিকে দামাল মায়াহীন বর্ষণ,
জল স্থল শূন্য থেকে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, ঝরে লাখো প্রাণ।
গণহত্যায় মেতে উঠে ত্রিদেব সঙ্গমে উপকূলে!
কারো নিস্তার নাই, সাঁড়াশি আক্রমণে দিশেহারা সকলে।
লন্ডভন্ড জনপদ সাগর যেন লোকালয়ে উঠে আসে,
দৈত্যকার সমুদ্র ঢেউয়ের তাণ্ডব জলে, উদরপূর্তি অকুলে  ভাসে।
শরৎ বাবুর ঢেউ সম্রাট লীলায় বাঁচতে চিৎকার নিজ জীবন,
স্রোতের তোড়ে আসা জড়বস্তু ধরি, পাষণ্ড উর্মির সাথে লড়ি প্রাণপণ।
এই শেষ যাত্রা! ভাবি, ফিরবো কি আর মায়ের কোলে?
রুদ্র প্লাবনে প্রায় অচেতন প্রকৃতি দেয় বেড়িবাঁধে ফেলে!
রাতভর প্রাণঘাতী মহাপ্লাবন আগমন প্রাতের অরুণ,
আশেপাশে আহাজারি গগনে মিলায়ে স্বজনহারা ক্রন্দন।
এমন দুর্ভাগ্য কারো, বংশের দীপ জ্বালাবার নেই কোন জন!
মা-বাবা হারা কেউ ভ্রাতা-ভগ্নি হারা,লাশের স্তুপে
খোঁজে  বুকের ধন।
বায়ুতে লাশের গন্ধ ;কোথাও নেই একটু নির্মল সমীর,
বেঁচে থাকা জিন্দা লাশ!হারানো পেতে অপেক্ষায় অধীর!
মৃত জীব জন্তুর ভাগাড় জনপদ, যেন এক ভূতুড়ে হাওড়,
সত্তরের জলোচ্ছ্বাস উপকূলে সর্বনাশ ব্যথাচিত্র মানুষের।
খোলা আকাশ তলে চাতক পাখি বনে স্বজন আশে,
পশুপাখি খাবলে খায় লাশ, আর না ফিরে আসে।

   রচনাঃ ১২ নভেম্বর, ২০২৪।
  (১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে জলোচ্ছ্বাসে জানমাল হানি স্মরণে।)