সিদ্ধ ধানে অঙ্কুর-৩
(স্বৈরাচারের নির্যাতন)

ঊনিশ 'শ বিরাশির মধ্য ফেব্রুয়ারি
চলে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন
গোটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
ফুঁসে ওঠে অকুতোভয় ছাত্রগণ।
কলাভবন চত্তরে স্লোগানে স্লোগানে
প্রকম্পিত স্বৈর সিংহাসন,
মিছিলের বাঁধভাঙ্গা জোয়ার
ছুটে দীপ্ত শপথে বলীয়ান।
সামরিক জান্তার সাথে আমাদের
দোয়েল চত্ত্বরে চলে রণ,
বাঁধ ভেঙ্গে মিছিল সচিবালয় পানে
ভয়ার্ত স্বৈর সেনা চালায় গুলি বর্ষণ।
সহসা লুটিয়ে পড়ে জয়নাল
রক্তাক্ত দেহ নিথর প্রাণ!
অগ্নি শর্মা হয়ে ওঠে সকলে
মানি নাকো স্বৈর শাসন।
বাড়তি স্বৈরাচার সেনা দল এসে
ঘিরে ফেলে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গন,
শহিদ লাশ নিতে টানাটানি
নিয়ে চলি সবে কলা ভবন।
গোটা চত্ত্বরে সেনা গাড়ি মহড়া
অবশেষে সূর্যসেন হল প্রাঙ্গন,
সশস্ত্র পুলিস সেনা  হানা দেয় সেখানে
ঠেকাতে  ছাত্র আন্দোলন।
যত বাড়ে নিশি কম্পিত ঢাকাবাসী
কী হবে এ যামিনী পোহালে!
কিন্তু রাতের আঁধারেই বন্দি হই
শহিদ লাশের সাথের সকলে।
আহা! কী ভারি মজা বন্দিদশা
দুধ-ভাত দিয়ে কত আদর!
দফায় দফায় নানা স্থানে নিয়ে
আমার ভাঙ্গে হাত কারো পাঁজর।
বন্দিদের পিঠে মানচিত্র আঁকে!
এখানে ক'দিন ওখানে ক'দিন
ক্ষুধার্ত সংগ্রামী ডরায় কাকে!
প্রাণ নাও  তবু গণতন্ত্র ফিরিয়ে দাও
উত্তরণে সামরিক কারাগার,
দিনে খাওয়া-দাওয়া চালায়!
রাতে ঠাসাঠাসি ব্লাকহোল আগার।
কিছুদিন চলে হেথা কত আদরে!
সারা অঙ্গ সাক্ষ্য দেয় তার,
বিরক্ত স্বৈর শাসক,সেনানিবাস বাইরে
নিত্য সহস্র জনতার প্রচন্ড ভিড়।
জারী হয় নতুন ফরমান
সাঁজোয়া যানে কতেক তুলে,
ভাবি আরো আদর রয়েছে বাকি!
না,সেনানিবাস বাইরে দেয় ফেলে।
যে যারে পারে জড়িয়ে ধরে জনগণ
তোমাদের কী করেছে ভাই!
অশ্রু সিক্ত কণ্ঠে  শুধাই তাঁদের
বলি আমাদের কিছু হয় নাই।
নিমেষে ভুলে যাই সব ব্যথা
ভাবি এরা কত যে আপন,
আমাদের তরে এত ভালোবাসা!
নাহি ভুলি কোনোদিন।
বন্ধ হল,মুক্তি পেয়ে ঢাকা ছাড়ি
আমার মৃত্যু খবরে মা শেষ শয্যায়,
পিতৃহারা বালকের স্নেহের আঁচল
রেখো বিধাতা তোমারই কৃপায়।
খেপুপাড়া লঞ্চঘাট থেকে
চড়ে এক মাল্লা নৌকায়—
ছুটে চলি গ্রামের বাড়ি পানে
পৌঁছে যাই সন্ধ্যায়।
নিঃশ্বাস যায়যায় হতভাগা জন্মদাত্রীর
শিয়রে দু'পাশে বসা দু'সহোদর
মেজভাই ডাকে মা!আসছে ছোট ছেলে
কোন্ মায়া বলে কানে পৌঁছে তাঁর!
অচেতন স্নেহের আঁচল সহসা জাগে
বুকে জড়িয়ে ধরে কত সাধনার ধন!
অস্পষ্ট শব্দ মুখে তাঁর
দু'কোল গড়িয়ে পড়ে অশ্রু প্লাবন।
পিতৃহারা সন্তানের শেষ অবলম্বন
ভূলোকে বেহেশত মোর জননী,
মম হেতু যদি হারিয়ে যেতো
ক্ষমা নাহি করতাম আপনি।
(চলবে)

  রচনাঃ ২৫ জুন, ২০২৪।