কুসংস্কার রীতি
অজ্ঞতা থেকে উদ্ভূত কুসংস্কার
অযৌক্তিক কোন অভ্যাস,
অজানা থেকে পাওয়া ভয়
ভাগ্যতে ইতিবাচক বিশ্বাস।
যুগে যুগে চলা অদ্যবধি
এমন কিছুর অনুশীলন,
মূর্খতার চাদরের ঢাকা
সমাজ পরিমন্ডলে আবর্তন।
পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পূর্বে
ডিম খাওয়া ভীষণ বারণ,
কলা খেলে যাত্রা নাস্তি
পথিমধ্যে আশঙ্কা কু-ঘটন।
কোলে তুলে আনতে হবে নব বধূ
স্বয়ং দুলা করবে বহন,
নব বধূকে শ্বশুরবাড়ি
বসতে দেবে কোমল থান।
নরম থাকবে বউয়ের মেজাজ
শান্ত রবে বউ আজীবন,
বিড়াল হত্যার দন্ড স্বরূপ
দিতে হয় আড়াই কেজি লবণ দান।
খেতে নাই জোড়া গলা
জন্ম নিবে যমজ সন্তান,
নক চুল রাতে কাটা নিষেধ
মোরগ জবাই না করবে ভাই-বোন।
রাতে না ফেলো ময়লা পানি
তাতে সংসারে ধরে ভাঙ্গন,
পিছন থেকে না ডাক দিও
ঘর থেকে বের হওয়ার ক্ষণ।
আঁকাবাঁকা হয় শিশুর দাঁত
ইঁদুর গহুরে দুধ দাঁত যদি না ফেলন।
ব্যাঙ ডাকলে বৃষ্টি নামে
রাতে বাঁশ যাবে না কাটন,
রাতে গাছের পাতা ফল ছেঁড়া
এসব কিছু অশুভ লক্ষণ।
ঘর থেকে অশুভ যাত্রা
যদি বিধবার চোখে চোখ পড়ন,
দারিদ্রতা ধেয়ে আসে
ঘরের চৌকাঠে পাতলে আসন।
বিধবা নারী সাদা কাপড়
অবশ্যই তার বরাদ্দ বসন,
অমঙ্গল আনে ডেকে
ভাঙ্গা আয়নায় চেহারা দরশন।
ডান হাতের তালু চুলকালে
আসবে টাকা আসবে ধন
বাঁ হাতের তালু চুলকানো
বিপদ আসার সম্ভাবন।
নতুন বস্ত্র পরিধান পরে
তাকাতে নেই পেছন,
ছেঁড়া গামছা ছেঁড়া গেঞ্জি
যাবে নাকো সেলাইকরন।
না জ্বালালে আসবে বিপদ
খালি ঘরে সন্ধ্যায় দীপন,
নিশিকালে সূঁই-সূতা
দিতে নাই কোনো স্বজন।
গর্ভবতী নারীর মানা
জবাই করা বা কাটন-কোটন,
যাত্রাকালে খালি কলসি দেখা
অশুভ ঘিরে ধরে যখন তখন।
শিশু শরীরে বাঁধলে লৌহ খন্ড
দূর হবে শয়তান দুষ্টু জ্বীন,
দীর্ঘ আয়ু পাবার তরে
প্রথম সন্তান বিয়োগে দ্বিতীয়ের কান ফোড়ন।
হাত থেকে পরে যদি থালা বাসন
ভাবে আসবে বাড়ি মেহমান,
ইষ্টিকুটুম পাখির ডাকে
সহসা আসবে আত্মীয়-স্বজন।
তিন রাস্তার মোড়ে বসতে মানা
আশঙ্কা রয় বংশের পতন,
কাকের ডাক বিপদের পূর্বাভাস
কারো মৃত্যুভয় জাগে ডাকলে শকুন।
আসলে ঢেকুর খাওয়ার কালে
তখন কেউ করে তারে স্মরণ,
যদি খায় পাতিলে ভাত
জন্ম নিবে মেয়ে সন্তান।
দাঁত উঠতে বয়স বাড়লে
সাত বাড়ি থেকে চাল আনয়ন
কাক খাওয়াবে নিজে খাবে
করতে হবে নিজে রন্ধন।
নগদ বিক্রি না হয় প্রথম
সকালে খুলে যদি দোকান,
বাকিতে বিক্রয় করা হলে
বাকি চলবে সারাদিন।
বদ নজর এড়াতে ঝাড়ু জুতা টানালে
কমবে নাকো খামারে ফলন,
চুন না বলে দই বলতে হয়
রাতে কাউকে দিতে চুন।
দা-কাঁচি ডিঙ্গিয়ে গেলে
সেলাম না করা ক্ষতির কারণ,
দুঃখ আসবে মনে করে
হঠাৎ বাঁ চোখে লাগে কাঁপন।
মৃতের বাড়িতে তিন দিন
জ্বালানো যাবে নাকো উনুন,
ঢেকির উপর বসে ভক্ষণ
বউ মারা যায় আছে বচন।
স্বামীর জন্য মঙ্গল বহে
স্ত্রীর নাকফুল পরিধান,
স্বামীর অমঙ্গল ডেকে আনে
মুখে বললে নাম কোনোক্ষণ।
নতুন জামাই না করলে বাজার
একপদ দিয়ে চলবে ভোজন,
নববধূ শশুর আলয়ে
অন্তত: থাকবে আড়াই দিন।
দু 'পায়ের প্রাণি জবাই নিষেধ
কোরবানির ঈদের লগন,
মাছের কাঁটা গলায় বিঁধলে
বিড়ালের পা ধরার আছে কানুন।
এলাকা ভেদে নানা রীতি
কুসংস্কারে ভরা প্রচলন,
শিক্ষার হার বাড়ন্ত যুগে
এখনো অন্ধবিশ্বাস গোঁড়ামি ধারণ।
বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অধুনা ভুবন ;
অনেক খানে নেই সূর্য কিরণ।
রচনাঃ২৭ জুলাই, ২০২৩।