এক মাল্লার নৌকা—২
—অধ্যক্ষ দেলওয়ার হোসেন

যাতায়াতে নানা সমস্যা
সদ্য স্বাধীন দেশে,
আদি বাড়ি যাবার তরে
নৌকায় চড়ি অবশেষে।

কলাপাড়ার ডালবুগঞ্জ থেকে
পটুয়ার মুরাদিয়া পানে,
ক'ভাই মিলে কেরায় নৌকায়
লাগে যত দিনে।

আগুনমূখার উর্মী দোলায়
দুলছি ছুঁই ছুঁই যুব কালে!
কখনো জল আছড়ে পড়ে
চলন্ত নায়ের কোলে।

অন্যরা সব বয়সে বড়
নিশ্চলে আছে শুয়ে।
মাঝির সাথে বলছি কথা
এটা-ওটা  নিয়ে।

দুরন্ত উদ্যত তারুণ্য ক্ষণে
নদীর তান্ডব লীলা,
নির্ভয়ে যাপন করি
মাঝির সাথে কাটাই বেলা।

ভাটার টানে স্রোতের তোড়ে
নৌকা  নাহি এগায়
চাচাতো ভাই কিনারে নামে
গুন টা কাঁধে লয়।

পড়ন্ত বেলায় নদী বক্ষে
ঝিলমিল তরল সোনা
যামিনীতে চাঁদ মামা
ঢালে রূপোর কণা।

রূপোর আলোয়ে স্নাত হয়ে
পৌঁছায় পাটুয়া বাটে,
রাত যাপন তরে হেথা
নৌকা বাঁধে ঘাটে।

ঊষালগ্নে  বৈঠা ধরে মাঝি
চালে গলাচিপা'র পথে
জোয়ার পেয়ে চলছে নৌকা
হাল ধরে শক্ত হাতে।

হেথায় এসে নামে মাল্লা
চটের থলে নিয়ে,
তাঁর সাথে আমিও নামি
দেখতে উৎসুক হয়ে।

সওদা করে ফিরে এসে
রান্না, খাওয়া সেরে,
এক মাল্লার নৌকা আবার
সামনের পানে ছাড়ে।

সেহাকাঠী খালের ঘাটে
রাত যাপন শেষে,
পটুয়াখালী ভিড়ায় নৌকা
কেনাকাটার আশে।

পিতৃ জন্মভূমে মুরাদিয়া
পৌঁছায় শেষ বিকেলে,
আত্মীয় স্বজন বাড়ির ভেতর
খুশিমনে নিয়ে চলে।

সারা পথে বড়রা সব
কত আদর করে,
এটা দেখায় ওটা দেখায়
খেতে দেয় সোহাগ ভরে।

পথের মাঝে দেখছি অনেক
এক বৈঠার মাঝি,
যন্ত্র যুগে হারিয়ে গেছে
পুরানো ঐতিহ্য নাহি খুঁজি।

  রচনাঃ০৮ জুন, ২০২৪।