সেলিব্রেটিদের নিয়ে যেমন হরদম নতুন নতুন গসিপ সৃষ্টি হয় , তেমনি অফিসের বসদের নিয়েও নিত্যনতুন স্টোরি তৈরী হয় আর তাই নিয়ে চলে অহর্নিশ গালগল্প আর আড্ডা ।
অফিসের আড্ডা ক্যামন ? এখানে কারো সাথে আড্ডা দিতে গেলে খালি হাতে যাওয়া চলবে না , হাতে একটা ফাইল থাকা চাই , কিংবা নিদেনপক্ষে উচ্চ পর্যায় থেকে পাওয়া কোন চিঠির কপি । এই ধরুন , সচিব মহোদয় এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন যে , ----- শিরোনামে একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরী করে , ----- তারিখের মধ্যে যথাযথ কতৃপক্ষের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করতে হবে । হতে পারে সেই প্রকল্প দলিল প্রণয়নের সাথে আপনার সংশ্লিষ্টতা অতি সামান্য , তারপরেও আপনার অযথা ঘোরাঘুরি বসের নজরে পড়লে আপনি তো মাথা উঁচিয়ে কইতেই পারেন , কাজের জন্য এসেছিলেম স্যার কিনবা ম্যাডাম !
বেসরকারি বা করপোরেট অফিসগুলোতে আড্ডা চলে ক্যামন , এ বিষয়ে আমার কোন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই । তবে এসব অফিসের কাজের ধরনধারণ , ব্যাপ্তি , কমিটমেন্ট কিনবা ভালোমন্দ যাই বলুন না কেন তা বোধকরি সরকারি অফিস থেকে ঢের ঢের আলাদা । বেসরকারি অফিসগুলোতে বসের বা মালিকের বিরাগভাজন হলে এক কলমের খোঁচায় চাকুরী চলে যাবার ভয় থাকে , সরকারি চাকুরীতে তা নেই , নেই বললেই চলে । এক্ষেত্রে সবোচ্চ শাস্তি হল ‘বদলী’ । তবে এই বদলী যে খুব সহজ ব্যাপার তা না । এটা একরকম চাকুরী চলে যাবার মতোই ভয়ঙ্কর । পরিবার পরিজনের ভোগান্তি অতি নির্মম ভাবেই বাড়িয়ে দেয় , একটা অনভিপ্রেত বদলী অর্ডার ।
যা হোক ধান বানতে গিয়ে শিবের গীত গাইলাম । আড্ডার কথা কইতে গিয়ে বদলী ? কিন্তু একেবারেই যে আড্ডার সাথে বদলীর সম্পর্ক নেই , তা বোলব না । আছে ! অনেক আছে ।
ধরুন , ডাগর নয়না এক হরিনী মেয়ে অফিসে সদ্য সদ্য কাজে যোগ দিয়েছে । বস যেন ক্যামন ! কাজে ভালো , দক্ষ । তবুও তিনি ভালো না । কারণ মেয়ে কলিগদের অযথা হাকাহাকি ডাকাডাকি করেন । তাঁদের নিয়ে খোশ গল্প করেন । তাই তাঁকে নিয়ে এটা ওটা না কথা বাতাসে ভেসে বেড়ায় । তাই সাধু সাবধান !
নতুন মেয়েটিকে আপনার ভেবে সাবধান করে দেবার জন্য লাঞ্চের এক ফাঁকে শুরু হোল আড্ডা । ধরুন অন্য কোন এক কলিগের রুমে । এ ক্ষেত্রে মেয়ে কলিগই শ্রেয় !
মেয়েটির ধরনধারণ জানার জন্য প্রথমে হাল্কা প্রশ্ন করা হোল । বিবাহিতা না অবিবাহিতা । বাচ্চা আছে কি নেই । বর কি করেন । মাবাবা , ভাই বোন শ্বশুর শাশুড়ির ফিরিস্তিও দিতে হতে পারে । এতো সব প্রশ্ন করা কেন ? যাতে বুমেরাং হয়ে না যায় পরবর্তীতে তাই যাচাই কোরে নেয়া ! বলা তো যায় না , কার মনে কি আছে ।
বস সদয় থাকলে নাকি অনেক অনেক কিছু মেলে । দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণ , তা আপনার যোগ্যতা থাকুক না থাকুক ধারণের ! ইচ্ছে মতন সি এল। মেডিক্যাল ।
শরীর মাঝ অফিসে আলতো খারাপ লাগলে ছুটি । না বলে আগাম ছুটি , ফেঞ্চ লিভ ইত্যাদি ।
আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে চায়ের অর্ডার হয় । লাঞ্চ সারা হয়েছে তাই কেবলই চা। দশটা এগারোটায় এ ধরণের হাল্কা কিনবা ভারী আড্ডা বসলে চায়ের সাথে টা আসবেই আসবে ।
বসকে নিয়ে খুব ভাল কথা বা উক্তি এ ধরণের আড্ডায় খুব কম করা হয় । পদে পদে তাঁর দোষ ধরে হেসে ঊঠার একটা রেওয়াজ আছে । অবশ্য তাতে আড্ডাবাজদের দোষ যতনা , তার চাইতে বেশী দোষ ঐ বস নামধারী ব্যক্তির । তাঁর চারিত্রিক বড় কোন ত্রুটি হয়তো বা ধরা পড়েছে কারো চোখে আর তাইই পল্লবিত হোতে হোতে বিশাল আকার ধারণ করেছে । গসিপ মঙ্গার কলিগরা তা সানন্দে বক্ষে ধারণ করে গালগল্পে মেতে ঊঠেছে । মেয়েদের আড্ডায় পুরুষ সহকর্মীরাও অবলীলাক্রমে যোগ দেয় । কেউ কেউ নিত্য নতুন ইনফরমেশন যোগায় ।
এসব কিছুই না । আবার অনেক কিছুই । ফলাফল ভাল ছাড়া মন্দ না । যা হোক , অনেক বস এতই ভালো থাকেন যে , তাঁদের গুনোপণা নিয়েও আড্ডা চলে মন্দ না । আর তা সবাইকে উপরে ঊঠার তাগিদ যোগায় , ভাল কাজ করেই !
অফিসের আড্ডায় ঘুষ বা উপরি যাই বলুন না কেন , এসব নিয়েও কম কথাবার্তা চলে না । ঘুষ তো কেবল বিগ বস খান না - মেঝ ,সেঝ , ছোট , নোয়া বস মায় কর্মচারীরা পর্যন্ত তা অবলীলাক্রমে খেতে পারেন । তাঁদের ধন সম্পদের প্রাচুর্য , বাড়ী গাড়ী এসব নিয়ে জোর আলোচনা চলে । তবে ফলাফল শূন্য ! সব বস বা কর্মকর্তা বা কর্মচারী যে ঘুষ প্রিয় তা বোলব না , তবে মেয়েদের মধ্যে এই অন্যায় প্রবণতা অনেক অনেক কম !
রাজনীতি কিংবা অর্থনীতির বিষয় নিয়ে অফিসে যে আড্ডা চলে না তা তো নয় । কিন্তু তা চলে অত্যন্ত সাবধানে । এক ঘরানার মানুষগুলোর সাথেই । যখন যে দল ক্ষমতায় আসে , তাদের পক্ষে কথা বলার একটা প্রবণতা থাকেই সবার মাঝে । কিন্তু অনেক সময়ই তা প্রকট আকার ধারণ করে ।
অফিসে আড্ডার ছলে মুখ ফসকে মনের কথাটা , মানে সত্য কথাটা বলে ফেলে কেউ অজান্তে । ব্যাস ! তেলাপোকার তো আর কমতি নাই অফিস জুড়ে । এই বেফাঁস মন্তব্য ছিনিয়ে নিতে পা্রে আপনার মহামূল্যবান প্রাণ । তাই সাধু সাবধান অফিস আড্ডা ! তেলা পোকারা ঘুরছে ফিরছে অহর্নিশ , লাগিয়ে দেবে আপনার উচ্চারিত বানী সঠিক স্থানে ! তারপর কিল্লা ফতে !
তবে আড্ডা বা গসিপ বা গালগল্প যাই বলি না ক্যানো , অফিসে তা কম করাই শ্রেয় । তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই হয় বেশী । মুল্যবান কাজের সময় বয়ে যায় অকাতরে । পারস্পারিক সত্য মিথ্যে অনেক কথা অযথা পাখা মেলে আর তা ব্যক্তিগত কিংবা সমষ্টিগত কোন দিক থেকেই ভালো ফল বয়ে আনে না বলে আমার মনে হয় !
তবে কিঞ্চিত আড্ডায় দোষ নেই । চাটনি হিসেবে কাজ করে তা । আচার ছাড়া আহার বিহার সবই কেমন পানসে !