গত কয়েকমাস বাংলা কবিতার আসর থেকে সাময়িক বিরতি নিয়েছিলাম। এর পিছনে তিনটি কারণ ছিল, ১। আসরের কিছু মানুষের প্রতি অভিমান, যেটা সময়ের সাথে সাথে কমে গেছে, ২। ব্যস্ততা, সেটাও এইসময় কিছুটা কম এবং ৩। নিজের দৌড়টা একবার দেখা।

             তৃতীয় কারণটা আমাকে অনেক অভিজ্ঞতা দিয়েছে। জার্মান ভাষাটা শিখছিলাম অনেক মাস ধরেই। পাগলামির বশে একটা কবিতাও লিখে ফেলেছিলাম ঐ ভাষায়। কবিতাটা এক জার্মান মহিলার কাছে পাঠাতেই তিনি ফেসবুকে অনলাইনে বসে মাত্র দু-তিন মিনিটে সেটাকে নির্ভুল করে দিলেন। অপর এক জার্মান ভদ্রলোককে বিষয়টা জানাতেই তিনি আমাকে একটা জার্মান পত্রিকার ই-মেল অ্যাড্রেস দিয়ে তাতে লেখাটি পাঠানোর পরামর্শ দিলেন। লেখাটি পাঠালাম। সিলেক্ট হয়েছে জানতে পেরে মনে হয়েছিল বিশ্বজয় করেছি! এর আগে এক গ্রীক ভদ্রমহিলা কিছুটা স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই আমার একটি ইংরাজী কবিতা ঝাড়পোঁছ করে দিয়েছিলেন। এক আইরিশ ভদ্রলোক বরাবরই কবিতার বিষয়ে আমায় দরাজ হাতে সাহায্য করে থাকেন।
              
                 তো বিষয়টা হল এখানেই, এই ক্ষেত্রে বাঙালী কবি-সাহিত্যিকেরা কিন্তু খুবই সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। নামী লিখিয়েরা নিজেদের বাজার ধরার জন্য নানান ছল-কৌশল করার সাথে সাথে প্রতিভাবান নতুনদের লেখা যাতে দাঁড়াতে না পারে তার ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখেন। অনেক সময় ব্যাপারটা একেবারেই নোংরা পর্যায়ে চলে যায়। কিন্তু কিছু করার নাই। এভাবেই চলে আসছে, এভাবেই চলবে, এটাই সিস্টেম। বাংলাদেশে কিন্তু এই ব্যাপারটা ততটা নাই বলেই আমার মনে হয়। কলকাতা এবং তার সংলগ্ন এলাকার সাহিত্যিকেরা কোনো সময়েই মফস্বলের লেখকদের স্বীকৃতি দেননা। আজ আমরা যতই মডার্ন বা পোস্ট-মডার্ন ঘরাণার কবিতা লিখি, তার মানসিকতাটাকে আমরা নিজেদের মধ্যে তৈরী করতে ব্যর্থ, পড়ে রয়েছি সেই মধ্যযুগেই। সেই কবে পড়া একটা গল্পের মত এখনো আমরা কাঁকড়ার মত নিজেদের পা টেনে নামিয়ে দিতেই ব্যস্ত। আর এখানেই বিদেশী লেখক-সাহিত্যিক-কবিরা আমাদের থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। একে-অপরের পিছন কামড়া-কামড়ি না থামানো অবধি বাঙালীদের যতই প্রতিভা থাকুক, আমরা বিদেশীদের নীচেই থাকবো।