সকালে ঘুম থেকে উঠেই
শোরগোল পড়ে যেত,
কে আগে বাথরুমের দখল নিতে পারে!
তারপর
ঐ একটু নমো নমো পড়াশোনা
সেরে খোলা কলতলায় স্নান,
সবাই একসাথে!
কোনোরকমে ডাল-ভাত-ডিমভাজা ঠুঁসেই
চোঁচা দৌড়,
আজ বুঝি প্রথম ক্লাসটা গেল!
বিশাল হলঘরের ভেতর গমগমে প্রোফেসর
কিসব যেন বলে যায় অনর্গল,
আমার দু’চোখ জানালার বাইরে
সবুজ দিগন্তে সাদা গোরু-কালো চাষা-
ডানহাত কবিতার পাতায় আলতো।
ক্লাসের ফাঁকে কলেজের বাথরুমে
বন্ধু-সিনিয়রদের সাথে
আমেজ বিড়িতে লম্বা টান
আর প্রোফেসরদের বাপ-বাপান্ত!
কখনো-সখনো কোনো পিরিয়ডের
চোরকানাচে বন্ধুদের সাথে
রসালো চিরকুট বিনিময়,
কখনো আবার প্রেমিকার সাথে,
তবে সেগুলো বড্ড মিয়ানো …
কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যেতে হবে
বা প্রোফেসরদের অন্যায়-আবদারে
রুখে দাঁড়াতে হবে?
আমাকে পাওয়া যেত সামনের সারিতে।
কলেজ শেষে প্রেমিকার সাথে
সাইকেলে চেপে বহুদূর রাস্তা,
দু’পাশে সারি সারি গাছ,
নিজেকে রাজেশ খান্না মনে হত!
মেসের ঘরে ফিরেই সিঙ্গাড়া-মুড়ি,
তারপর সবাই মিলে ঘুরতে বেরোনো,
আজ এ গ্রাম-কাল সে গ্রাম ...
সেখান থেকে সোজা মন্দিরের দালানে
গ্রামের ছেলেদের সাথে ক্যারাম পিটানো,
বা-হাতে উদাসীন বিড়ি,
আমার বেশ নাম ছড়িয়েছিল!
রাতে মেসের ছাদে এনতার মাতামাতি,
কিছু গাধা আবার পড়তেও বসতো-
খাওয়া-দাওয়া শেষে সিগারেট হাতে
এর-ওর পিছনে লাগতে লাগতে
কখন যে রাত জড়িয়ে আসতো
ঘুমচোখে বুঝতেও পারতাম না ...
এভাবেই একটা বছর,
পুরো একটা বছর পর যখন
বাবার সাথে বাক্স-প্যাটরা নিয়ে
নিজের শহরে ফিরছিলাম,
বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠেছিল!
নিজেকে বুঝিয়েছি বারবার
জীবনটা এরকমই,
কত কত মুখ-কত হাসি কান্না
শেষে সবাইকেই শূন্যে ফিরতে হয়,
মিলিয়ে যায় সবকিছু চোখের পলকে,
আর কখন যেন নীরবে
নেমে আসে লম্বা কবিতার যবনিকা ...