স্বপ্নের বাসর ঘর

বাসর রাতে বউকে দরজার আড়াল থেকে বললাম..'বউ টুকি।' বউ আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। আহা কতদিন পর একটা বিয়ে করলাম। আজ বিড়াল মারব সুযোগ পেলে খরগোশও মারবো৷ বউকে আবারো বললাম....

আমি:-বউ টুকি...!

মিম:--এত পুংটামি না করে খাটে আসুন।

আমি :কি আজব! একটু ইয়ার্কিও করতে পারবনা? এখানে পুংটামির কি আছে? আর তাছাড়া নতুন বউ আমায় কেন এসব বলবে। আমি দ্রুত পায়ে খাটে গিয়ে বসলাম। বউ ঘোমটা টেনে বসেছে। লাল বেনারসি শাড়িতে বউকে একদম লাল পরির মতন লাগছে। মন চাচ্ছে খুশিতে বউয়ের হাত ধরে কিছুক্ষণ নাচি৷ নাচতে নাচতেই নেপচুন চলে যাই। আমি গলা খাঁকড়ি দিয়ে বললাম....

আমি--এভাবে ঘোমটা টেনে কেন বসেছো?

মিম-আমার লজ্জা করে।

আমি--আজ থেকে আমরা স্বামী-স্ত্রী, এতে লজ্জার কি আছেগো?

মিম-ইসস তাই বলে লজ্জা পাবনা।

আমি আর কথা বাড়ালাম না, আলতো করে বউয়ের ঘোমটা টেনে তুলে দিলাম৷ বউ মাথা নিচু করে আছে। আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেলো....

আমি-মাশাল্লাহ! কি সুন্দর!

মিম--ধ্যাত এভাবে বলবেন না।

আমি-এত সুন্দর কেন তুমি? সৃষ্টি কর্তা যেন তোমায় নিজ হাতে বানিয়েছেন।

মিম--আমার কিন্তু লজ্জা লাগছে।

ঠিক তখনই দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হলো। আমি ভ্রু-কুচকে তাকালাম। আজবতো কে দরজা টোকায়। আমি বিরক্তি নিয়ে দরজা খুললাম। বাইরে আমার নানি দাঁড়িয়ে আছে। বললাম....

আমি--কি হয়েছে?

নানি-কি করছিস?

আমি--হাডুডু খেলছি।

নানি-রাগ করিস কেন?

-আমি-আজ আমার বাসর রাত, তুমি এসে জিজ্ঞেস করছো কি করি রাগ হবেনা?

নানি-ধূর গাধা, বাসর করার মতন বাসর করলে ১ ঘণ্টাই হয়। সারারাত বুঝি করতে হয়?

নানির এমন কথা শুনে মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে। বুড়ি এতরাতে এসেছে এসব বলতে। আমি বললাম....

আমি--উল্টাপাল্টা কথা বলবেনা। তুমি যাওতো।

নানি-ইসসস নতুন বউ পেয়ে যেন সহ্য হচ্ছেনা।

আমি খট করে দরজা বন্ধ করলাম। এগুলোর কোন মানে হয়? ফাজিল নানি। আমি মুচকি হেসে আবার খাটে চলে আসলাম। বউ বলল....

মিম--নানি কি বলল?

আমি-কিছুনা বাদ দাও। চলো শুরু করি...?

মিম--কি?

আমি-না মানে বাসর রাতে কি করে?

মিম--আমি কি জানি নাকি? আপনিই বলুন।

আমি-আচ্ছা চলো একটু গল্প করি।

মিম--কি গল্প?

আমি-এক দেশে ছিল এক ব্যক্তি। তার বড় ছেলের নাম হলো ফাহিম৷ সে জন্মগতভাবে সিঙ্গেল ছিল। একদিন হুট করে তার বিয়ে হয়ে যায়, তারপর তারা বাসর রাতে....

ঠকঠক....আবার দরজায় টোকা পরলো। কেমনডা লাগে৷ বউয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি সে মুচকি মুচকি হাসছে। অস্ফুট স্বুরে বলল....

মিম-যান দেখুন কে এসেছে।

আমি--এত বিরক্তি ভালো লাগেনা।

মিম-ইসস এত বিরক্ত হয়েননাতো। আরো অনেক রাত পাবেন।

আমি--আজতো বাসর রাত।

মিম-আমাদের প্রতিটি রাতই বাসর রাত।

আমি বউয়ের কথায় লজ্জা পেলাম। মাথা চুলকোতে চুলকোতে দরজার কাছে গেলাম। দরজা খুলতেই দেখলাম নানা দাঁড়ানো। এটা কোন ধরনের মশকরা। আমি বললাম....

আমি--তোমার আবার কি হলো? এত রাতে কি চাও?

নানা-তোকে দেখতে আসলাম।

আমি--দেখো উল্টাপাল্টা বকবানা।

নানা-আসলে একটা কাজে এসেছিলাম।

আমি--বলো কি কাজ?

নানা-একটু হাগতে যাব।

আমি--মানে...?

নানা--টয়লেট যাব হাগতে তুই একটু আমার সাথে চল।

আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমার আজ বাসর রাত আর আমাকে বলছে তারসাথে হাগতে যেতে। এটা কোন লেবেলের ঠাট্টা৷ আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই নানা বলল....

নানা--আরে সবাই ঘুমিয়ে পরেছে, প্লিজ একটু চলনা।

আমি-আমি পারবনা, আর এতে আমার যাওয়ার কি আছে?

-নানা-আমার ভয় করে। তুই বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবি।

আমার মাথা ঘোরা শুরু করলো। বউয়ের দিকে তাকিয়ে আবুল মার্কা হাসি দিয়ে বের হলাম। নানা টয়লেটের দিকে যাচ্ছে, বদনা আমার হাতে। আহারে, বদনা হাতে বর৷ কি এক্টাবস্থা। এদিকে আধাঘণ্টা হলো নানা টয়লেট থেকে বের হয়না। আমি কিছু বলারও সাহস পাচ্ছিনা। আরো ১০ মিনিট কর নানা বের হলো। বলল....

নানা--তোর হাগু পেলে হাগু করে আয়, বাসর করার আগে এসব করা জরুরী।

আমি-এসব অসভ্য কথা বলবেনাতো নানা।

নানা--হাহা, রাগ কেন করিস।

আমি কিছু না বলে চলে আসলাম। এটা নিশ্চয়ই নানা নানির ষড়যন্ত্র। তারা পেয়েছে কি। আমিতো তাদের বাসর রাতে কোন ডিস্টার্ব করিনি। মনেমনে ইচ্ছে মতন গালি দিয়ে রুমে আসলাম। বউ দেখি বসে আছে আগের মতই। গয়না খুলে ফেলছে। আমি খাটে গিয়ে বসলাম। বললাম....

--তোমার হাত দুটো ধরতে পারি?

বউ হাত বাড়িয়ে দিলো। আমি বউয়ের ফর্সা হাত দুটো ধরলাম। কি সুন্দর নরম হাত। এই হাতদুটো ধরেই সারাজীবন কাটিয় দিতে ইচ্ছে করছে। বউ বলল....

মিম--ঘুমাবেন না?

আমি-ঘুমানোর জন্য কি এতবছর পর বিয়ে করছি?

মিম--বুঝলামনা।

আমি-সারাজীবনই তো ঘুমালাম, আজ না ঘুমোলে হয়না?

মিম--উহু হয়না, শুয়ে পরুনতো। আর আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোবেন বুঝলেন।

বউ শুয়ে পরলো। আমি বউকে জড়িয়ে দিলাম। সে আমার উপর গা এলিয়ে দিলো। আমি আরেকটু শক্ত করে তাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলাম। এতটা শান্তি আগে জানলে ছোট বেলায়ই বিয়ে করতাম৷ তারপর কয়েক ডজন বাচ্চা নিয়ে বাসা থেকে পালিয়ে নোয়াখালি গিয়ে আবার বিয়ে করতাম হা হা হা। আমি ভাবতে থাকলাম...আমাদের সুন্দর সংসার হবে এখন। খুনসুটি, ঝগড়া চলবে আমাদের। আমাদের বাচ্চা হবে, আমাকে বাবা বলে ডাকবে। আমি বাজার থেকে ফিরে আসব, ছেলে বলে, বাবা আমার জন্য কি এনেছো? আমি মুচকি হেসে....

আচমকা পাছায় ব্যাথা অনুভব করলাম। ধরফর করে উঠলাম ঘুম থেকে। আমার বউ কই বাচ্চা কই? আম্মা লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বললাম....

আমি--বউয়ের সামনে মারলে কেন?

আম্মা-কিসের বউ?

আমি--আমার বউ কই? পাশেইতো ছিল, গেল কই?

আম্মা-ফালতু বকলে আবার বারি খাবি। এত বেলা করে ঘুমাতে ঘুমাতে তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে।

আমি--ধুরর সারারাত তো পাশেই ছিল, আজ আমাদের বাসর রাত।

আম্মা ঠাসস করে বারি মারলেন। আমি হতবাক হয়ে গেলাম। তারমানে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখলাম। বউ টউ কিছুই নাই সব ফাউ! বুকটা হাসফাস করতে লাগলো। আশেপাশে তাকালাম আসলেই বউ নাই৷ সিঙ্গেল মন মানেনা। একেতো সিঙ্গেল তার উপর এমন স্বপ্ন দেখানোর কোন মানে আছে? স্বপ্নও আজ আমাদের মন নিয়ে খেলে। ধুররর...!
.
.