১)
শুনছো তুমি?
আমার হৃদপিণ্ড আগুনে জ্বলছে
আকাশে উড়ছে যন্ত্রণার কালো ধোঁয়া;
আট বছরের মধুর সম্পর্ক
বিষে কোরবানি হতে চলছে।
আরো বলছি?
ওরা তোমায় কোনোদিন মেনে নিভে না
দরকার হলে টুকরো টুকরো করে
গঙ্গার জলে আমায় বিসর্জন দিবে!
কিন্তু প্রিয় আমি যে তোমাকে ছাড়া
বাঁচবো না— তুমি তো জানো?
তৃষ্ণার্ত কাকের মত ছটফট করছে
শুকিয়ে গেছে আমার হৃদয়।
জীবন অঙ্গার হবে পুড়ে পুড়ে
যদি তোমায় হারাই!
বলছিলে তুমি—
ধুদ শাদা হাতে লেখা শেষ চিঠিতে আমায়,
সখি জীবন মানেই কষ্টের দোদুল্যমান নিঃশ্বাসে ভরা।
যুগে যুগে বাস্তবতা তা দেখিয়েছে,
লক্ষ্মীটি আমার—
তোমার কিছুই হবে না।
সখি ওরা বলছে ওরা আমায় মেনে নিভে না
হয়তো আমি ওদের যোগ্য হইনি।
সবাই সব কিছুর অধিকার রাখে না
দুইটা জীবন বৃথাই ধ্বংস করে দিবো।
বিরহের রাঙা অস্ফুট বেদনায়
আমার চক্ষু ধসে যাবে,
থেকে যাবে তোমার স্মৃতি ভাণ্ডার
শুধু আমার নিথর দেহটা
পরে রবে পৃথিবীর পারে!
২)
সখি মোর—
তুমি যখন নীল সমুদ্রের দেশে হারিয়ে যাবে
তখনো ভেসে রবে তোমার মুখ রাত্রি তারকায়।
কেন যে আমরা প্রেমে পরেছিলাম
ওরা চায় দুইটা আত্মা জবাই করতে
জীবস্মৃতি প্রাণ কবরে ধূলোয় ডেকে দিতে
নির্মম মানুষরা যত সহজে আস্ত হৃদয় ভেঙে দেয়
তত সহজে জোড়া লাগাতে পারে না!
চিন্তা করিও না
চার আঙ্গুলের কপালে যা লিখা তাই হবে,
মনে যদি প্রশান্তি আসে
একমুঠো ভালোবাসা প্যাকেট করে পাঠিয়ে দিও,
সাথে দিও কৃষ্ণচূড়ার রক্তাক্ত ফুল।
মনে থাকে যেন
তোমার প্রেমিক শুয়ে আছে
বিরহে ক্ষত-বিক্ষত হওয়া মৃত্যুর উৎসবে!
দিন আসে রাত্রি ফুরিয়ে
একই পৃথিবীর একই নিঃশ্বাসে ধেয়ে
তারই স্তরে আমাদের হৃদয়!
সন্ধ্যার পাখি ঘরে ফিরে
জলা মাঠ ছেড়ে উল্লাসে।
হৃদয় স্তব্ধ: সুখ নাই তাহাদের মত।
তোমাকে আমি ভালোবেসেছি—
তোমার মত প্রেমিকার ছোঁয়া কয়জনে পায়,
জীবনে চলার পথে—
জানি, তোমাকে পাবো না
দুরাশার মেঘ ফুরায়নি
তবুও আশায় বিদ্যমান অন্তর!
৩)
সখি নিঃশ্বাসে ভারি হয়ে গেছে পৃথিবী
আর পারি না ধম নিতে আটকে যায় ভিতর
তুমি যেন ম্লান নক্ষত্র, যার মুখ দেখে—
ঘুমিয়ে যাই ফসলের নিবিড় দেশে।
কখনো সখনো মনে হয় তুমি ডাকছো
ঘুমের মধ্যে আমাকে দূর থেকে
কান পেতে আমি শুনি স্পষ্ট সে ধ্বনি।
মানব মরে গেলে যেমন কাঁদে তার এতিম সন্তানেরা
কত সহস্র জল ঝরে যায়
আকাশে বাতাসে ভেসে যায় মেঘের মতন
আমারো ঠিক তেমনটি হয়েছে
তুমি সখি কাছে থাকলে বুঝতা
কষ্টের বোঝা কত ওজন এ বুকে!
আমি ভালোবাসি তোমাকে
আমার পৃথিবী জুড়ে তুমি।
সব ব্যথা সয়ে যাব তোমার পানে—
প্রেমিক যখন হয়েছি
বিস্তীর্ণ একটা বটগাছ হয়ে ছায়া দিবো
অগ্নিকুন্ডের কোনো নিক্ষিপ্ত তাপ
অনুভব করতে দিবে না,
যতদিন আমি আছি বেঁচে!
৪)
তোমার পরিবার যা বলে মেনে নাও
আমায় নিয়ে ভেব না
এমন কিছু করে বসো না
চির জনমের মত তোমায় হারিয়ে ফেলি দূর থেকেও।
তোমাকে পাওয়ার অনেক আশা,
সখি মোর যদিও সেই স্বাদ ভবে পূর্ণ হবে না
বেঁচে থাকুক আমাদের ভালোবাসাটুকু
স্মৃতির রঙিন পাতায় লিপিবদ্ধ—
আমি আর অন্যের কবিতায় তোমায় খুঁজবো না
আমার নিজের কবিতায় এবার খুঁজবো তোমায়!
আমাদের হৃদয় দুটো আজ ভীষণ অসুস্থ
চার দেয়ালের ভিতর বন্দি তুমি
আমি পরে আছি নিথর দেহটা নিয়ে।
তোমার অন্তরে জ্বলছে উপচে পড়া যন্ত্রণার আগুন
সে আগুনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি অসহায় আমি।
জানি, সব কিছুই ঠিক হবে
কালো মেঘ কেটে গিয়ে একদিন
ফিরে পাবে প্রাণ মানুষের হাতে মানুষ
যখন অন্ধ সমাজ গড়ে দিবে আলোর সমাজ
এই পৃথিবীর কাছে!
৫)
যে মধুর স্বপ্নগুলো আমাদের ছিল
তা অস্বপ্নেই থেকে যাবে;
যেই ঘর বানাবো বলে আশা দেখেছি
ভেঙে গেল মেঘহীন ঝরে!
আমাদের জীবন ব্যবস্থাও পাল্টে যাবে
একদিন সব আলো ফুরালে;
হবে না কোনোদিন আর দেখা
আমাদের সোনালী দিনগুলোতে।
৬)
অর্জুনের গায়ে ঠেস দিয়ে বসে আছি
ধূসর আকাশের দিকে;
হৃদয় নিঃসঙ্গ চিল—
যেন আজ সব গান ভুলে গেছি
সুর নাই গানে তার।
সখি কোনোদিন কি আমরা ভেবেছিলাম
এই মহা দুর্দিনের কথা?
টিকটিকির মত আওয়াজ দিয়ে
সময়ের শাদা কালো বুক চিরে
শুকনো লাটির মত হৃদয় ভেঙে দিতে।
আমরা হারিয়ে যাব স্মরণ করতেই
বুকটা ধূপগুড়ি দিয়ে উঠে।
অইদিকে রাস্তায় শোনা যায়
লক্ষ্য লক্ষ্য বিপুল জনতার ভীড়।
হৃদয়ে নাই প্রেম—
নিভে গেছে সব আলো
আমাদের রুষ্ট থেকে!
সখি তুমি হবে অন্যের বধূ
লাল শাড়িতে সাজবে তুমি
আমার সমাধির বুকে পারা দিয়ে।
কিন্তু আমাদের আবার দেখা হবে
কোনো এক রাস্তার মোড়ে
হাজার হাজার জনতার গভীর মিছিলে দাঁড়িয়ে!