মনের উপর পুরনো আতঙ্ক রোজ ছড়ায়ে পড়িতেছে
নগর বন্দর সব কিছুই যেন ঝিমোচ্ছে—
আমার চোখের পরে নিভে গেছে আলোটুকুন,
সর্বস্ব হারিয়ে আজ আমি একা পৃথিবীর পথে!
জীবনের গতিবেগ ক্রমেই হ্রাস পেয়েছে,
নীলিমায় নীলিমায় কেশ মেঘের হাতছানি!

অইসব সবই জমেছে আমার দু’চোখের কোনায়,
হঠাত্ হঠাত্ সবকিছু অন্ধকার বানিয়ে,
অজস্র বর্ষণ ঝড়িয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে যায়,
হয়তো বা সে অথবা তাহার স্মৃতি জাগিয়ে তুলে,
যেখানে একদিন স্বপ্ন বুনেছিল জোছনায় রাতে,
পউষের উঠানে খড়কুটো বিছানো তারই শিয়রে!

কল্পনার দিন সব ভেসে আসে বাতাসের মত,
সমস্ত শরীরের আড়মোড়া ভেঙে পরে বিষে আঘাতে,
আহত অক্ষত হৃদয় সান্ত্বনার আশ্বাস খুঁজিতেছে,
চারদেয়ালের মধ্যে কতোকাল ধরে একটুখানি।
মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে এক একবার বিধ্বস্ত আত্মা,
এইসব ব্যথা বেদনা নিয়ে তিলে তিলে বেঁচে থাকা!

এর থেকে ঢের ভালো মৃত্যু মৃত্যুর কবরে চিরনিদ্রায়!
পৃথিবীর সমস্ত অসুখ আমার হৃদয় গহ্বরে
পৃথিবীর সমস্ত ধকল বয়ে যায় দুমড়েমুচড়ে!
একদিন তারাভরা নক্ষত্রের নীচে যেই সুখ ছিল
আজ সেই আকাশের নীচেই সব বিষাদের ছাই।
আমি ভুলে যেতে চাই মৃত সব অতিতের ইতিহাস!

তবুও জেগে উঠে ভাদ্রের মেঘের মত ছড়ায়ে,
পুরনো সে স্মৃতি মনের আকাশে সমস্ত আকাশে!
আজ ছাব্বিশটি বছর গড়িয়ে গেলো নিমিষেই,
আমার হৃদয়ের ব্যথা তবুও কই ঘুচিলো,
তুমি সিন্ধু সিন্ধুর মত বিশাল অস্তিত্ব নিয়ে
আজো তুমি এই পৃথিবীতে রয়ে গেছ অকাতর!

যদিও আমিও আছি বেঁচে বহুকাল ধরেই
তবে সেটা মৃত লাশের মতন ভূয়সী ধরায়,
ভালোবেসে মরে গেছি- চলে গেছি নির্জনে আমি,
বেলা শেষে চেয়ে থাকি কাবেকার প্রেমিকের নিকট,
জানি আমি তবুও জানি দেহের গন্ধ ধুয়ে মুছে,
এই নবীন নক্ষত্রের নীচে আসিবে না কোনোকালেই!

ছিন্নভিন্ন হৃদয় খসে গেছে কাহার আঘাতে
হয়তো বা সদ্য ফুলের মতো জীবন তার—
কোনোদিন ফুটিবে না ধরনীর বুকে আবেগ ভেসে,
এখন রাত্রি রাত্রির মুখ জোছনায় নক্ষত্রে ভাসিতেছে!
একদিন তবুও সেই মুখ আমার চক্ষে ছিল!
হ্যাঁ, সেই মুখ স্পষ্ট মনে পড়ে আজ বারংবার!

তারপর কখন নিভে গেছে আমার আকাশ থেকে!
হে সমুদ্র সমুদ্রের জল, তিতে ফেনার ঘোলাট
তোমার বুকের পরে নামিতেছে বৃষ্টি বৃষ্টির ছিটেফোঁটা
নারী পুরুষেরা স্বপ্নের মতো ভিজিতেছে এইখানে!
কিন্তু আমার হৃদয় মরুর মত শুকিয়ে গেছে কবে!
আমার অসুস্থ হৃদয় জেগে থাকে বিষন্নতায়!

আজ এই পৃথিবীর কিছুই ভালো লাগে না,
কেবলই মনের ভিতর টনক নড়ে দীর্ঘনিঃশ্বাসে,
আমি একা এই পৃথিবীতে আমি শুধুই একা,
আমার কেউ নেই কোথাও কেউ নেই জীবনের,
বেসামাল পূর্ণিমায় আমার চোখে জেগে আছে পৃথিবী,
অন্ধকার জঙ্গল থেকে ভেসে আসছে ডাহুকের সুর!

মাতাল বাতাস খেলিতেছে আমার শরীর নিয়ে!
তবুও আমি একা, একদণ্ড স্বস্তির নিঃশ্বাস নেই!
তুমি ফিরে আসো তোমার মাতাল পাগলের কাছে,
যে পাগল একদিন পাগলের মতন ভালোবেসেছিল!
যদিও পৃথিবীতে একদিন ছিলাম তুমি আমি পাশাপাশি
তারপর কবে তবুও দু’জনার হৃদয় ছিঁড়ে গেল!