*
ওগো ধরণী কেন আজ তুমি দিলে হাজার
বছরের ধ্বনি মনে করিয়ে, সাঁজদ্বীপে স্মৃতি
গন্ধে ভেসে উঠে চেতনার নিঃসঙ্গ দিনগুলো;
জীবনের আজন্ম আর্তনাদ তব মিনুতি কন্ঠে
ডাকিতেছে মধুমিতা নিশীথের শয়ন রচিয়া
এই আরক্ত প্রভাতে ঘাসে আর ধানে অপূর্ব
দীক্ষায়, আমার আঙ্গিনা চাকচিক্য ঝলমলে!

*
ওগো ধরণী সেই মহা নেস্ত্র আহুতি শুনেছি
আপন দিপ্ত রূপে, জীবনের বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে
আমি তারে পাইনি চেতনার নীল সন্ধানে,
তোমার উজ্জ্বল প্রতীক্ষা মনে পরে যখন
দেখার অতিত যত গভীরতায় প্রকাশ পায়
অকালে কেন এই ক্রোধ যন্ত্রনায় ভাসিয়েছ
প্রবহমান নদীর মত চারিদিকে সৃজনের ঝর!

*
ওগো ধরণী সমাবেত প্রার্থনা আজ ডোর প্রান্তে
চিরকাল নিজ প্রাতে স্বপ্ন প্রদীপ জ্বালিয়েছি,
আলোর অন্তিম মুখ দেখবো বলে, অবিচলিত
সম্মুখে দেখি থরথরে ক্ষুর্ধাত অতিথি আমার
দুয়ারে দাঁড়িয়ে বিদীর্ণ গর্জনে মূর্তিময়ী বলিল
মধুমিতার অন্তহীন কথাগুনো কান পেতে সে,
আমার হৃদয় আক্রোশ বেদনায় ফেটে গেল!

*
ওগো ধরণী যুগ যুগান্তর ধরে সেই আদিগন্ত
প্রেম জন্ম নিলো একদিন, নীরব নিস্তব্ধ ঝর
বইতেছে তৃণ খসে হৃদয়ে চেয়েছিনু বলিল
অন্তর্যামীর সব কথা লক্ষ্মীপেঁচার সাথে একা,
কিন্তু অঙন ছাড়ি সেই পেঁচা কখন গিয়াছে
আমি জানি না? সীমাহীন দূর থেকে কুয়াশার
অস্থি ভেরি, বুঝি এখানেই পথ শেষ তাহার!

*
ওগো ধরণী এ সুখের আমিত্বকে প্রাণ থেকে
কবে দিয়েছি বিধেয় করে তারে পাইনি বলে,
যুগের মরিচীকা ঘনিয়ে এসেছে তিমির কূলে,
শীর্ণ আর্শীবাদে আকাশ সাক্ষী করি তাহারে
লইয়াছি বরন করে, অশ্বত্থের ধরা ছোঁয়ায়
এখন নাই তার সেইসব রেখে যাওয়া স্মৃতি,
কেঁপে উঠে বুক ধরফর করে পারি না ভুলিতে!

*
ওগো ধরণী তোমার ওই নিত্য স্বরূপ দিয়েছিল
স্রষ্টা একদিন, তারপর তুমি ভেসে চলো চক্ষুর
দিশারীতে। আমি সেই প্রতিক্ষনে চেয়ে থাকি
মহাকালের ঐক্যজনকে দৃষ্টি অগোচর নিঃশব্দে,
জীবন বহুদিন থেকে গেছে নীরালায় নিশ্চুপে
করিনি তার যত্ন, তারই ভেদির প্রেম অপ্রমের
যত মর্মকথা লাগিয়াছে শরীরে প্রতিটি স্তম্ভে!

*
ওগো ধরণী তুমি আর সে ব্যথার আত্মাকে
জাগিও না নিদ্রা থেকে, বিশ্ব মরুবালুর ভিতর
চাপা পড়িয়াছে তার দেহখানি কতদিন যাবত্
শয়নে স্বপনে খুঁজিয়া মরি আজো তাহা ভুল
ফিরিবার পথ বন্ধ অস্তিত্ব মুছিয়া গেছে মেঘে,
আজো যাহা আছে যাহা নাই সবি যাবে মাটির
পূর্ণ করতলে মিশে আমরা সবাই চলে যাবো!