চলছি গন্তব্য, কিন্তু প্রচন্ড বিষণ্নতা হৃদয়ে
এক একবার মনে হয় মৃত্যুর মত যন্ত্রনা আমার
সমস্ত শরীর জুড়ে চেপে বসেছে!
লঞ্চের ছাঁদে এসে দাঁড়িয়েছি
চৌদিকে শশীর আবছা তিমির!
দূরের উপকূলে ঘুটিঘুটি দেখিতেছি প্রদীপ,
নদীর পানি যেন বিশ্রামে নাই!
সমস্ত ব্যর্থতারে মাটি দিয়ে
আজ আমি চট্টগ্রামের পথে
হৃদয় কাঁদো কাঁদো রাত্রির শীতার্ত প্রান্তরে।
এখন জীবন মানে স্রোতের ঢের ভাটা,
স্থির স্থিরতা নাই কোনো দিকে,
এগোচ্ছে তুম্র গতিতে রাত্রির উজানে লঞ্চ
কোথাও কি দু’দণ্ড শান্তি স্থবিরতা আছে,
নাকি সবই পরে আছে আমার মনের মতোন,—
স্বপ্নরা রেখেছে হৃদয় অবরোধ করে!
হৃদয় আমরা আজও তাঁকে ভালোবাসি
পৃথিবীর সেই ছোট্ট ঘরের মেয়েটিকে
যাদের কিছু নেই— আছে শুধু অব্যক্ত কষ্ট,
রাত্রি পাতার মত নীরবে ঘুমিয়ে যায়
কেউ পায় নাকো সে কন্যারে টের!
বলেছে মোরে বাসনার বশিভূত বানী
শুনেছে কান উঠানে খড়ের অন্ধকারে!
জীবন স্থিতিশীল সামষ্টিক নয়‚—
সত্যের সন্ধানে তবুও মানুষ,
তোমার মুখখানি এখনো ভাসে
ভেলা হয়ে যেন মোর চোখের পরে!
অনেক যুগ যুগান্তরের অবসান হবে!
পৃথিবীর দারুচিনি দ্বিপ্নের ভিতর সেই ঘাসের জন্ম
আবার কালের বিবর্তনে ধরা দিয়ে
মরিবার হল যার স্বাদ রৌদ্রে পুড়ে পুড়ে,
হয়তো পুনরায় সে জেগে উঠবে নব্যদ্বিপে,—
ঢের পরিক্রমা কেটে যাবে জীবনের থেকে
তারপর ফিরে এসে বসবো তোমার মুখোমুখি!
কাল সেদিনের রাত বেশ চমৎকার ছিল!
জোছনায় যেন আমাদের প্রাণ জেগেছিল!
আজও সেই জোছনার পুনরাবৃত্তি
একটুও জ্যোতি কম নেই তার
সমস্ত মেঘনা আলোয় আলোকিত!
আমার অবলঙ মন চাদরের দেয়ালে আবদ্ধ
ভীষন ভীষনতর অসুস্থ মেঘনার স্যাঁতসেঁতে হাওয়ায়
কাহার রাজত্ব মৃগতৃষ্ণায় কল্পনায় উড়ে
পৌষের রাঙা বিকেলের ওইসব পাখিদের মত!
ভালোবাসি তবুও ভালোবাসা ঝরে গেছে
আমার এ হৃদয়কে বিতৃষ্ণা করে!
ফিরে এসে জানি পাবো না
হৃদয়ে দুয়ার ভাঙার আর্তনাদ
তুমি শুনবে না— কিছুতেই শুনবে না
এখানে রাত্রির লঞ্চে ঢের মানুষ মানুষীরা শুয়ে আছে,
সিঁড়িতে সিঁড়িতে মানুষের গেঁদারিং,
কেউ কথা বলে আপনজনরে কাছে টেনে,
কারু হাতে মুখে সিগারেটের ধোঁয়া
যেন এইসব আগন্তুকদের কোনো চিন্তা নেই!
তবুও একটি রাত বয়ে আনুক শান্তি,
আমাদের সকলেরই সমাবেত প্রার্থনা,
একটি রাত চাই শান্তিময় রাত!
জীবনের সমস্ত অম্লান কষ্টগুলো ভুলে!
এইরাত বড়োই মায়াবিনী!
চারিদিকে নিশুতি নেমে এসেছে!
বুকে আমার থরথরানি মত জর্জরিত ব্যথায়!
ধীরে ধীরে বাতাসের তীব্র গতিতে—
শরীরের হাড্ডি মাংস যেন একাকার হয়ে যাচ্ছে
লঞ্চের চাঁদ ক্রমেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে
লোকজন সব নীচে নেমে যাচ্ছে!
কেউ বা বক্সের ভিতর ঢুকে পড়ছে,
সমস্ত ফ্লোর একতিল খালি নেই
কানায় কানায় পূর্ন ডালা বিছানার পর!—
রাত্রির লঞ্চ পূবালী এক
মেঘনার জল ছিঁড়ে খুঁড়ে一
উদ্দাম বেগে চলিতেছে মৃদু জোছনায়!
আমার হৃদয় আকাশে আকাশে
আমার হৃদয় নক্ষত্রে নক্ষত্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে!
প্রেম তুমি তবু দূর কতদূরে পরে আছ
আমি একাকী এই রাত্রির তরে!
হয়তো রাত্রি শেষ হবে
নদীপথ ফুরিয়ে নব্য দিবসের সূচনা হবে!
কাল থেকে ব্যস্ত নগরীর ধূলোময়লা
ল্যাম্পপোস্টের তাঁরে অজস্র কাকের সমাগম,
যানবাহনের শব্দে হৃদয় অত্তালিতা হুন হবে!
মিশে যাবো পুরনো শহরের দেহে,
আমি তবুও জেগে রবো তোমার পানে!
জানে কি এই গভীর আকাশ,
জানে কি নক্ষত্র সে তাঁরা,
অমিয় পৃথিবীর দুদস্ত জোছনার প্রাণ
আমি তারে ভালোবাসি মেঘনার নদীতে
যেই পানি ধরে অতখানি চিরকাল!
আমি আবার ফিরে চাই সেই গ্রাম,
ফিরে চাই শাপলার মত মৃদু ঠোঁটে ফুটে থাকা
ছোট্ট ঘরের জন্ম নেওয়া মেয়েটিকে!
ফিরে চাই আরেকটি রাত্রির মুখ
প্রেমের পশরা গেয়ে জেগে উঠবো
ভোরের আলোর মত ধীরে ধীরে কখন—
রাঙা মেঘের উপর দেহটারে ভাসিয়ে দিয়ে!