বৃষ্টিতে থইথই চারিদিকে সমস্ত চট্টগ্রাম‚
মনের ভিতরে কাহারে গোপন করে‚
অবসন্ন হৃদয় নিয়ে বাসায় ঘুঙুট হয়ে আছি।
নীলিমায় যেন চক্ষু ভুলানো যায় নাকো‚
সমস্ত চৌদিক ছেয়ে গেছে কেশ মেঘে
অপার সৌন্দর্যে মাতিয়েছে শ্রাবণের প্রকৃতি
এই মুষলধারে বৃষ্টিতে গুনগুনিয়ে শোভা পায় গীত‚
মনে পড়ে কোনো এক মহিলার সাথে মধুর সম্পর্ক।

মাতাল প্রেমিক যদি পুনরায় খুঁজে পায়‚
হারিয়ে যাওয়া তাঁর সেই মানুষীরে‚
সন্ধ্যার আঁধারে ধবল বকের মতো যেই
প্রজাতির মতো ক্লান্ত পাখনায় ভিজে ভিজে‚
একদিন হয়েছিলো চোখের আড়াল।
যদি আজ তারে ফের কুড়িয়ে পাওয়া যেত
অচেনা পথের রেখায় অথবা কুয়াশার ভীড়ে‚
লোমহর্ষ বেদনা ঝেড়ে মুছে হৃদয়ে টেনে।

জানি কয়েক শতাব্দীর বিরহ আনন্দে উঠবে নেচে‚
জরাজীর্ণ দেহ ফিরে পাবে অস্তিত্বের দেশলাই‚
অশ্বত্থের ক্লান্ত শাখা যেমন শিশিরের ছোঁয়া পেয়ে
সাতসকালে জেগে উঠে তীব্র গতিতে
তেমনি জেগে উঠবে আমার অবসন্ন হৃদয়।
যেই দিনগুলো তাঁর কেটেছিল অতীত মর্মাহত
চক্ষে তার অতৃপ্তির লেগুন লেগে থাকতো
বুঝি সবই নবরূপে জড়ো হতো একসাথে আবার।

বৃষ্টিতে থইথই চারিদিকে সমস্ত চট্টগ্রাম‚
চট্টগ্রাম যেন আজ সমুদ্রের জলে রূপ নিয়েছে।
কোথাও কোথাও রাস্তাঘাট‚ দোকানপাট ডুবে গেছে
জনজীবনের ভোগান্তির দুর্যোগ বাড়িতেছে
সব মিলিয়ে এক করুণ শহরের দুর্দশা।
কিঞ্চিৎ ছিটেফোঁটা বৃষ্টি কখনো সখনো ঠাণ্ডা বাতাসে
ধেয়ে আসে শরীরে অথবা জানালায় স্বাদ চুষে
কবেকার ওলোট-পালোট স্মৃতির কথা দেয় মনে করিয়ে।

সেই মানুষীর গভীর ধ্যানে নেশাতুর হয়ে পড়ি।
শৈশবে এরকম বৃষ্টির দিনগুলোতে‚
চাতক পাখির মতো কতো কথা ফুরিয়েছে দু’জনার
কখন সময় গড়িয়ে দুপুর এসেছে নেমে
তাঁর সাথে কেটে গেছে ঢের রূপকথার গল্প‚
রাত্রিগুলি খুব মেশামেশি করে রক্ত কণিকায়‚
বারবার ফিরে আসে পিছনের পুরনো যুগের কথা
চরমভাবে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন আমি এই।

আজও আমি গভীর পলকে ছুটে যাই‚
খুঁজে চলি পথে পথে প্রজাতির উদ্ভব চোখে
না পাওয়া সেই অব্যক্ত তরুণীর পানে‚
যার কাছে রয়ে গেছে এ জীবনের ঢের হিসাব
না বলা অসংখ্য বুকচাপা কথারগুলি।
তবু মুহুর্তের মধ্যে সমস্ত চিন্তাভাবনা এক পাশে রেখে
মনরে বুঝাই ঘুঙট ব্যথা বুকে চেপে
ভেসে গেছে সেই— এই বৃষ্টির মতোন ক্রমাগত।

দেহের ভিতরে ভাসছে অসংখ্য অগণিত
আকাশের তিল ঠাঁই মেঘের ন্যায়‚
আমার হৃদয়েও জমেছে বিরহের মেঘ‚
পরাজিত সৈনিকের যেমন ভেঙে যায় চেহারা যুদ্ধে
তেমনই আজকাল এমনই দশা বিবস্ত্র বাস্তবতায় মাখা
না পারি কাউরে বুঝাতে দেখাতে—
তারই বিচ্ছেদে আমারও হয়েছে সেই দশা
কোথাও যে সান্ত্বনা নেই আজ এই পৃথিবীর ‘পর—

মৃত হৃদয় একখানা যন্ত্রণায় করিতেছে ছটফট
দেখি এ চোখে অমাবস্যার মধ্যরাতে
ছিন্নভিন্ন ঝোপঝাড়ে জোনাকির স্রোতে
অনাদিকালের বিষন্নতা ইতস্তত কাঁটাগুল্ম‚
আহা চক্ষে তাঁর তৃষ্ণার কতো অভাব।
কলমির গন্ধভরা জলে একঝাঁক হাঁস মাতিয়েছে
কখনো সখনো আমারও এমন স্বাদ পেতে ইচ্ছে হয়
তবুও দেহের ভাড় কার কাছে রাখি আমি?

আমি কি অসুস্থ হয়ে পড়েছি?
একরোখা মনোভাব আমাকে ছিন্নভিন্ন করে তুলছে?
শরীরের উত্তেজিত আড়মোড়া ভেঙে গেছে নাকি?
এ পৃথিবীর আলো বাতাসে আমি নতুন করে জেগে উঠবো
এমন প্রশ্নসিগ্ধ আত্মক্রয়ে ভাবিয়ে তোলে বারবার।
আমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবো
কিন্তু আসলে তাঁর বিপরীত ঘটছে দিনদিন‚
চোখে-মুখে বিষণ্নতা জেগে থাকে সারাক্ষণ।

জানি আমি বেসামাল বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম থইথই চারিদিকে
রোজ নিয়ে আসে পুরাণ কাহিনীর জগত‚
তুমি কেমন আছো? আজকাল জানতে খুব ইচ্ছে হয়
তবুও আমাদের সেই স্বাদ এখন নেই।
ঘরবন্দী জানালার পাশে চেয়ে চেয়ে আমি ভাবি—
ভালোবেসে ষোলআনা নাগরিক না হয়ে
পথে পথে প্রজাতির ফুলের উদ্ভব হতাম
জীবনের রঙ হয়তো বা আরও সুন্দর হতো!