যৌবন কেবলই নরম ঘাসের শিশির হতে
পৃথিবীর পানে জাগিয়েছে—
জীবন বহি আনিয়াছে
গাঙচিল শালিকের মতো স্বাধীনতা,
কোথাও বাঁধা নেই, মানা নেই
ইচ্ছে হলেই দিতে পারি পাখা তুলে
সোনালী আকাশের রূপালি শস্যের ভিতর গা ভাসিয়ে,
হৃদয় চুরি করে নিয়ে গেছে উত্তারের বাতাস,
সবখানে অম্লান আনন্দ পাখি কলরব,
আজ কোনো ব্যখা নাই অশ্রুহীন হাসি।
সভ্যতার বিষাক্ত অন্ধকার উতরিয়ে
কখন আলোর সন্ধান পেয়েছি মানব সভ্যতার ঘরে
পৃথিবীর সব সুখ কৃষকের ছোট্ট ঘরে
পৃথিবীর সব আনন্দ এইখানে লেগে আছে
ধানের সুমহান গন্ধে ভরে যায় প্রান!
ওগো ধরনী তুমি কত সুন্দর
তোমার বুকের পরে আমি পাড়া দিয়ে হাঁটি।
তুমি করো নাকো অভিমান,
নিত্য নতুন যান্ত্রিকের জন্ম দিয়ে
এগিয়ে চলিয়াছ আরেক সভ্যতার দিকে।
যদিও তোমারও আয়ু কেবলই ফুরিয়ে আসিয়াছে
সব শেষ হবে, সব ধ্বংস হবে
মানুষ কঠিন কঠিনতর রোগে আক্রান্ত
বিষে জর্জরিত হবে
কোথাও চিকিৎসা নেই,
মরনব্যাধি চারিদিকে গ্রাস করিবে,
মৃত লাশের গন্ধে আকাশ বারি হবে,
জানি, সেইদিন আসিবে খুব শীঘ্রই
ওখানে আকাশ নীল, আমার যৌবনের মতো
তবুও চিরকাল আকাশ নীল রবে না,
সবই শেষ হবে, শেষ হতে হয় বলে।
দেখেছি ভোরের নব্য শিশিরের নীর,
দেখেছি আঙিনার পরে বুলবুলি পাখিটারে,
দেখেছি এখানে চাঁদের মত গোল সবুজ জাম্বুরা,
দেখেছি বুড়ো-বুড়িদের ক্লান্ত প্রানের অট্ট চিত্কার,
এখন তারা কেউ নেই সবাই মরে গেছে
তোমার স্মরণে তুমি বিস্ময়
কত চাহনির নিষ্ফল কেটে গেছে
পেয়েছ পাওনি আকাঙ্ক্ষারা ভেঙে গেছে।
এখানে অন্ধকারে সব নির্ভীক
জোছনায় আলো নামে তবুও চক্ষে কুয়াশা!
সজনে তর্কিত কুয়াশা
লয়েছি টেনে বুকে কুড়িয়ে
চাই পৃথিবীর পথে অনন্তকাল বাঁচিতে
সে স্বাদ কেবলই দুরাশা মাত্র।
কবরের পরে যেই পৃথিবী রয়েছে
রয়েছে যে অগাধ ঘুমের নির্লিপ্ত বিছানা!
যদি সেই বিছানায় ঠাঁই পাই
জীবন সার্থক এ যৌবন কেটে গেলে পর—
জানি এ জীবন নীরবিন্দু দুর্বাঘাস
নব্য শিশিরের যৌবন।
প্রানে যে সঞ্চিত যৌবন খরিদ করেছি,
চিরন্তন সারবস্তুর সাময়িক মাত্র,
শেষ হলে পর মৃত্যুদূত,
গোপনে আসিবে কেউ পাবে না টের,
হায় শোক শুরু হলো বুঝি,
এখানে কালে অকালে ঢের মানুষ শুয়েছে
তারা আজ গভীর ঘুমে অচেতন,
আপনজনরা ছেড়ে গেছে ভুলে গেছে,
সহস্র আত্মাকে ভৌতিক বানিয়ে,
একদিন সবাই চলিয়া যায় নীরবে,
আল্লাহর ডাকে সারা দিতে হয় বলে,
আপন ঠিকানা বিক্রিত করে পরজগতে,
তুমি শোনোনি আমি শুনেছি সবাই শুনেছে।
হে মানব সভ্যতা অশ্বারোহীর দল
মৃত্যুরে যে আমি ভালোবাসি।
কারন তার কাছেই যে যেতে হবে,
দিতে হবে ধরা স্রষ্টার চিরসিধান্ত
সমস্ত পৃথিবীর অট্টহাসি নিভে যাবে অন্ধকারে!
একটি যৌবনের সমাপ্ত হতে চললো
শরীরের উত্তেজিত সব রক্ত নিস্তেজ হতে চললো,
জীবনের অম্লান আনন্দ গুলো হারিয়ে যেতে লাগলো,
আজ নয় পঞ্চাশ হয়তো বা সত্তর বছর পড়ে!