বন্ধনা করি নক্ষত্রের রাতে— ঘুম নাহি
আসে চোখে কভু একফোঁটা আধও
থাকি তবু চোখ বুজে কতোবার।
সজিনার আকাশে ফুটিয়াছে কত তাঁরা
জোছনা পরিয়াছে জানালায় জানালায়
আমার শরীর তাই নিয়ে করে খেলা!

আমাকে পেতে কতোবার এলো জোছনা
আবার খেলা করে চলে গেলো—
নক্ষত্রের আকাশ থেকে চুপেচাপে।
জানি আমি একদিন তুমিও এরকম খেলা
করিয়াছ কতোবার— আমারে নিয়ে তিরিশ বছর।
বন্ধনা করি নক্ষত্রের রাতে শয়নেস্বপনে!

হে আমার জীবন মরণের সাথী মনসরঙিনী
ফুরিয়ে গেলো কতো অবধি দেখা নাই তোমার।
আর কি পাবো নাকো এ জীবনে দেখা
চির জনমের জীবন মরণ আমারই।
কোথায় গেলা গো রয়ে দুশ্চর দেউলে
ওগোল পাতার কোন বনে প্রিয়া মোর!

খুঁজি গো কতো কান্তার জুড়ে ধূসর পাখির মতো
মানিছে না মন কাঁদে গো এ প্রাণ;
ধরা নাহি দিয়া গেলা তবুও বেড়াই খুঁজে।
নিভে যায় চিরতরে কখন আমার প্রদীপ
স্মরণ করি নক্ষত্রের রাতে জেগে জেগে
হয় নাকো শেষ যেন এ রাত কতো রাত!

নির্জন নিঝুম দ্বীপের পারে এইখানে
কতো মায়াবিনী চোখের মতো তোমার চোখ;
এলে পরে দেখিতে এই ঘাস যেন তুমি
ঘাসের শরীরে শুয়ে থাকি আজীবন;
যত প্রেম দিয়েছ আমারে তুমি—
কতো ছবি সংকল্প জগতে আঁকিয়াছি আমি!

আমি যদি কখনো গিয়েছি দূরে চলে
রাখিয়া গিয়েছি হৃদয় পিঞ্জর তোমার কাছে;
যতো ফুল দিয়েছি গুঁজে কানে
বুঝি আজ এই ফুল গিয়েছে শুকিয়ে;
তোমারে ভালোবাসি নক্ষত্রের রাতে প্রিয়
প্রেম অপ্রেমের কথা ভুলে গিয়ে আজ!

এ বুকে একবার যদি এসে দেখিতে তুমি
কতো সুখে আছি আমি তুমিহীন;
রহিলে তুমি গোপনে আমারে ফেলে হায়
হৃদয় কাঁদে গো মোর— তোমারও কি কাঁদে;
কবে গেছে চলে সবাই এঁকে এঁকে ছেড়ে
পরে আছে জন-নির্জন শূন্য বন!

আজ করিয়াছি অনুভব ক্ষণে ক্ষণে ক্ষণে
কতো ব্যথা রয়ে গেলো অগোচরে;
তোমারে চুম্বন করিয়াছি কতো করিয়া
ভালোবাসিয়া তোমার ঠোঁটে আমার ঠোঁট;
সেই নিঃশ্বাস স্মৃতি আনি ফিরিয়ে
পেঁচার রাতে কুড়িয়ে কতোবার হায়!

জানি আমি এ-ই রাতে ভাঙিবে তোমার ঘুম
অন্য কেউ চুম্বন করিয়া কতো ভালোবেসে আহা;
রাত্রি জাগিয়া কল্পনা সারথি’র গান গেয়ে যাব
প্রভাতে কতো রাতজাগা পাখিরা আসিবে দুয়ারে;
দেখিবো না তোমারে আমি এ-সবের ভীড়ে
প্রেমের ব্যথা গো বড়োই বিষাদের ব্যথা আজ!