একদিন যারে দেখেছিলাম গোধূলি আঁধারে
ননির ঘাটে কলসি যার কাঁচা বুকের পর,
নক্ষত্রের মতো ধীরে ধীরে হেঁটেছিল,
শিউলির পথে সাথে সাথে মোর সনে!
তারে পেয়েছিলাম শতমুক্তাধিক খুঁজে খুঁজে
মন্থন হৃদয়ের বনে হেমন্তের হিম ঘাসে,
যার লাগি মন দিশেহারা পাগলের ভেসে,
গভীর নয়ন কাটে কামিনীর ব্যথার শিয়রে!
যারে দেখে হৃদয় কেঁপেছিল থরথর করে
আর্ত কোলাহলে জলের মত চক্ষু শীতল স্নায়ু—
আজ মনে হয় জীবনের সব সংকট ঘুচে গেছে
রূপসীর মুক্ত ঝরানো কথার কৌতুকে!
দরদী সহমর্মি স্বভাবের ছায়া-কুহেলিকা
গগনের শাদা মেঘ যেন মোর চোখের পরে ভাসে,
পথেঘাটে বন্দরে নীলাচল কাশের ভীরে এসে
যার সুর কোনোদিন কেউ শুনে নাকো!
প্রেত মেঘের ঘোমটা তুলে চায় ফিরে ফিরে পিছু
নির্জন রাত্রিতারকার মত ভাবে চুপেচুপে কি যেন হায়?
লজ্জায় অন্তিম ঠোঁট চুকে যায় ধসে যায়
আবার টেনে দেই পুনরায় চাঁদমুখ খানী ডেকে!
সবই ছিল একদিন তারপর কবে তুমি
অই আকাশের নীলপরির মত অন্ধকারে ডুবে গেলে,
আমার হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত পৃথিবীর দোলাচালে
আজ পউষ নীরবতা বহিয়েছে কতোকাল ধরে!
সিজনের যত পাপড়ি ফুটে ফুটে ঝরে গেলো
পাতাঝরা ফাল্গুন কবে এসে চলে গেলো,
একদিন তবু ছিল কাছাকাছি সহচর
আজ তুমি ভুলে গেছ অতীত গুটিয়ে নিয়ে!
বেদনা উঠে ফুপিয়ে সমস্ত শরীর কাঁপিলে
ব্যথা আজ তিক্ততায় ভরা বুকে মোর,
সে কখন আলো ফুরিয়ে নেমে এলো অন্ধকার
জোনাকির শোকে পৃথিবীর প্রাণ ভেসে যায়!
কোথাও জীবনের দু’দণ্ড তৃপ্তি নাই
চৈত্রের ভরদুপুরের চাপে কলিজা পুড়ছে,
এখন মনের আকাশ কালিমালিপ্ত মেঘে বজ্রপাত
তুমি শুনো না? তুমি আজ বধির বধিরতা!
আমি চেয়ে রই এক একটা প্রতীক্ষার নিকট
মৃত্যুর মত ব্যথা পুষে কামনার হৃদয়ে,
জানি তুমি আসিবে না? আসিবার পথ হারায়ে ফেলেছ
মন যে তবুও মন কে শুনে কার কথা!
এই জীবনে চাই শেষ একবার দেখিতে তোমায়
দু’চোখের স্বাদ চাই একবার মিটাতে,
হৃদয়ের ভগ্নতরীতে যেই প্রেম মুছে গেছে
পুনরায় চাই পুনরুত্থান করিতে!
দিন আসে প্রতিদিন রাত্রি তারকা ফুরিয়ে
তুমি কেন আসো নাকো আধো-গোধূলির দেশে!