কোভিড-১৯
রিপন রায়

যদি পারো আমার মাকে একটু দেখতে দিও
সঙ্গে আনতে বলো এক মুঠো দুধ ভাত।
সে ছাড়া এই দুনিয়াতে আমার কেউ নাই
আমি ভেবে ভেবে কেদেছি সারাটি রাত ।
শেষ খাওয়া খেয়ে যাবো মাকে দেখব অপলক
কলিজা ফেটে কান্না আসবে জলে ভাসবে চোখ।
তোমরা যখন আমাকে এনেছিলে অ্যাম্বুলেন্স করে
আমার বাবা-মা, ভাই-বোন, দিদি প্রতিবেশী আরো কত
কেঁদেছিল জড়াজড়ি করে আমাকে স্পর্শ ছাড়া
তখন ডাক্তার বাবুর প্রেসক্রিবশন ছিল শুধু শান্তনা
কোভিড-১৯ তখন ঘরে ঘরে দিয়ে যায় মৃত্যুর মহড়া ।

ভেবে---
পরাণ ফেটে যায় উতলা হয় পৃথিবীর রূপ দর্শনে
জলে স্থলে অন্তরীক্ষে  তার সবটাই রইল পড়ে ।
আশৈশব বন্ধু সুলভ কেটে গেল যে গ্রাম গায়
শত সহস্র স্নেহ প্রীতি মাখা আছে মোর কায়ায়।
বট বৃক্ষের ছায়ায় খেলেছি কত পুতুল খেলা
পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেলে কেঁদেছি জড়িয়ে তোমার গলা।

আর ভালো লাগে না একাকী দিবানিশী
তুমি ছাড়া আমি একা এক জনমানবহীন
বাইরের আলো দেখতে যাবার শক্তি ও নেই ।
নার্স ডাক্তার বাবুরা দূর থেকে এক পলক দেখে যায়
দেখে যায় নির্বাক দর্শকের মতো অসহায়ত্বের চোখে ।
গায়ে জ্বর প্রচন্ড গলা ব্যথা শুষ্ক কাশী নাকে সর্দি
কেউ নেই আশে পাশে  কেউ আসে না ধরতে কাছে
আমি আজ নাকি তাদের কাছে হয়ে গেছি ছোঁয়াচে।
ছুঁই ফুটছে কে যেন আবার চুরি দিয়ে খোচাচ্ছে গলে
অসহ্য যন্ত্রণা ছটফট করছি  এই বুঝি প্রাণটা গেল চলে।
পৃথিবীর সমস্ত মায়া মোহ লোভ লালসা দাম্ভিকতা
মূহুর্তের মধ্যে হারিয়ে গেল- সমস্ত অর্থ বিত্ত আজ মূল্যহীন ।

ভাবি--
সময় বুঝি এবার ফুরিয়ে গেল নিভে এল দিনেশ
রবো না আর এ ধরায় -কার মায়ার ছলনে।
আমার মায়েরে ভালো রেখো গো বসুমতী
যেমনে রেখেছিলে তুমি  তোমার পথ চলনে।
জানি আর হবেনা দেখা কখনো  তাঁর সাথে
কোমল হাতের স্পর্শ পাবো না আর জনমের মত
প্রাত স্নান হবেনা কভু আমার শ্রীনদীর জলে
প্রভু ভালো রেখো পৃথিবীর মানুষ তবুও ক্ষমার ছলে।