প্রিয় প্রণয়িনী,
রাতের মধ্যতায় তোমার রূপ-লাবণ্য মুখশ্রী
হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়ে মোহতন্দ্রা ভেঙে দিলো।
সংকীর্ণ জানালার পাশে নিরর্থক নারিকেল গাছের
মর্মর শব্দ কর্ণগোচর হলো। আঁখি তুলিয়া দেখিলাম
প্রদীপ্তি দীপশিখার তেজ হ্রাস আরম্ভ হইতে শুরু করিলো।
ঘোর অন্ধকারে তরলতা প্রবেশ করিলো মনে-মধ্যে।
তমসায় রাস্তার প্রহরী কুকুরগুলোও তন্দ্রায় অর্ধনিমিলিত
লোচনে ঘুমাচ্ছে। চারিদিকে নিরীক্ষণ করিয়া দেখিলুম,
নীড়হারা পক্ষীরাও তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হইয়া গিয়াছে।
এখন ঠিক মধ্যরাতের কাঁধে পরিয়াছে রাত্রি।
নিস্তব্ধতা গ্রাস করিয়াছে চারদিক। ইট-পাথরের রাজ্য
কোলাহলমুক্ত। আমি একা জেগে আছি,
মথার উপর মস্ত বড়ো জংশন। উষাদেবীর ট্রেন ধরিতে
গভীর অপেক্ষায় বোধশক্তিহীন হয়ে জেগে আছি।
দেখিতে দেখিতে প্রভাতবায়ুর সাথে অস্থায়ী উষাদেবীর
ট্রেনের ধবল বাসনে ঘোমটা টানিয়া নির্দিষ্ট গতিতে আসিয়া
গন্তব্যে পৌঁছাতে শুকতারার সাথে সন্ধি করিয়া
পূর্ব দিক হতে রজনীদেবীর স্টেশন অতিক্রম করিয়াছে
দিনমণির স্টেশনে আসিবার পথ পরিষ্কার করিয়া দিলো।
আমি নির্লিপ্ত লোচনে রজনীদেবীর স্টেশনের ভেতর
ফেলে আসা সেই হারিয়ে যাওয়া প্রেয়সীর মুখশ্রী দিকে
চাহিয়া ভাবিতেছিলুম,
উষাদেবীর মতো সরলা হইলে,রজনীদেবীর মতো রেশম হইলে,
দিনমণির মতো উজ্জ্বল হইলে,তুমি কখনো ছেড়ে চলে যাইতে না।
যন্ত্রণা মিশে গেছে বুকের পাজরে,
বুঝাতে পারিনি কতোটা মায়া রেখে গেছো।