আমাদের যদি অনেক বড় একটা পৃথিবী থাকতো,
অনেক সময় থাকতো, আমরা ভাবতাম একে অপরকে
কীভাবে কাছে টেনে নেওয়া যায়।
ভালোবেসে প্রাণের গহীনে আবদ্ধ করে রাখা যায়।
তবে আমাদের দূরত্ব বাড়লেও কোনো সংকীর্ণতা মনের মাঝে থাকতো না।

আমরা একে অপরের জন্য অসীম সময় অপেক্ষা করতাম।
সম্রাট নেবুচাদনেজার তার সম্রাজ্ঞীর জন্য যেভাবে
ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান নির্মাণ করেছিলেন,
ঠিক তেমন করেই আমি তোমার জন্য
আমার হৃদয়ে একটা সিংহাসন তৈরি করতাম।

তুমি ভালোবাসার পিরামিড তৈরি করে
চাষ করতে সুবাসিত ফুল;আমি সব বাঁধা ভেঙে,
নিষিদ্ধ চুক্তি ভঙ্গ করে ফিরে আসতাম
মৌমাছির মতো সদ্য ফুটন্ত ফুলের মধু খেতে।

আমি তাকে ভালোবাসতাম
পিরামিড সৃষ্টির দশ বছর আগে থেকেই,
আর তুমি আমার ভালোবাসাকে প্রত্যাখ্যান করতে
পৃথিবী ধ্বংসের আগ পর্যন্ত।

আমার এই ভালোবাসা ক্রমশ বাড়তো চক্রবৃদ্ধিহারে।
আমি তোমাকে আমার হৃদয় সিংহাসনে
কল্পনার অতলে বসিয়ে
তোমার কাজল কালো চোখের, মুখের, বুকের,
স্ত*নের, না*ভীর, তোমার সর্বাঙ্গের পূজা করে
কাটিয়ে দিতাম জনম জনম ভরে।

তোমাকে পাওয়ার জন্য সাধনা করতাম যুগের পর যুগ।
আমার অপেক্ষার প্রতিধ্বনি তোমার হৃদয়ে ধনুকের মতো পৌঁছাত।
তখন তুমি রাধার মতো পাগল হয়ে
চোখেমুখে ভালোবাসার কামনা অনুভব করে
শেষ পর্যন্ত আমার সম্রাজ্ঞী হওয়ার জন্য
বিশাল সম্রাজ্যের সীমানা প্রাচীর ছেদ করে
এসে পৌঁছাতে আমার হৃদয়ের টানে।

প্রিয়তমা,
আমার এই হৃদয় শুধু তোমারই পাওয়ার যোগ্য।
কারণ এর চেয়ে কমে কখনো তোমাকে ভালোবাসতামই না।

কিন্তু আমার কর্ণে ধ্বনিত হয় সময়ের ডানা যুক্ত রথ,
চিলের মতো ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছে
সংকীর্ণ গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকা সময়ের আয়ুকাল।

অপেক্ষার প্রহর ফুরিয়ে যাচ্ছে, হয়তো এই ধরিত্রীপুরে
তোমার দেখা আর পাবো না।
জ্যামিতির টপোলজির মতো
মার্বেলের পাথরে মুড়ানো এই অপেক্ষার টান
তোমার কাছে পৌঁছাবে না, এটা জানি।
আমার ভালোবাসা হলো স্বর্ণালংকারের চেয়েও দামি।

তোমার এই মুখশ্রী রূপ
কবরের কিটপতঙ্গ ভোগ করবে।
তখন আমার সারাজীবনের কামাকাঙ্ক্ষা ধূলায় মিলিয়ে যাবে।
তোমার কুমারিত্ব নষ্ট করবে কবরের পোকামাকড়।
কবর নিরিবিলি স্থান, সেখানে পোকামাকড় ছাড়া
আর কেউ তোমাকে করবে না প্রণয়-আলিঙ্গন।
সময় আমাদেরকে দূরত্বের পরিধি দিয়ে আলাদা করেই দিলো।
আমাদের আর দেখা হলো না।