নন্দন পুরের প্রবীণ গোপাল উদরান্ন আয় তার,
নুয়েছে কাকার দেহখানা হায় টানিতে বংশ ভার।
গিয়াছে আয়ু তটিনীর কূলে রাখিল জীবন পাল্লা,
একনামে তারে চিনিত সবাই নন্দ গোপাল মাল্লা।
দুইটি পুত্র পোষণে তাহার পারেনি কিছুই গড়ে,
বাঁধিত আশা আনিবে বাছা বিলাশ কুড়িয়া ঘরে।
এমনি একদিন সুখ লগনেই ইহজীবন তার ঘুচে,
ভাবিল গোপাল হাড়ভাঙা দুখ গিয়াছে বুঝি মুছে।
সহসা করে বড় ছেলে তার মিছিলে হারায় প্রাণ,
ঘনঘোর আসি ঝড়েরবেগে নামিল শোকের বান।
গিয়াছে ভেঙে নন্দ গোপাল উঠিলো মাথায় হাত,
গোপালের কপাল খণ্ডে প্রলয় নিয়াছে দুঃখ সাথ।
ছোট বাছা তার মাকে শুধায় কাতরী কন্ঠস্বরে,
দেহখানি মা বড্ড ব্যাথায় গা পুড়িছে মোর জ্বরে।
পীড়িত সন্তান বুকে নিয়া মা রাত্রি জাগিছে কত,
মোমবাতি মানে মন্দিরেতে নুয়াইয়ে মাথায় নত।
বড়পুঁত মরে মিছিলে গিয়া কমেনি মুটেও জ্বালা,
রুগ্ন ছেলের বসিয়া কিনারে নানা ভাবনার ঢালা।
একনিমিষেই রুগ্ন ছেলের গিয়াছে থামিয়া শির,
কাঁদনে ঝরিছে গাছের পাতা বহিছে নয়ন নীর।
পীড়নের তরে আকাশ ভরে কাঁদিয়া উঠিল মায়,
বেহুশের ঘোরে বৃদ্ধ বাবা লুটিয়া পড়িল পায়।
বড় আদরের সোনারে তোরা রইলি নারে কেহ,
পর-পর করে চলে গেলি সব মাটিতে রাখি দেহ।
বিস্ময়ে সব হতবাক কিছু বুঝিয়া উঠার আগে,
ক্ষুধা তরে কাতরায় গোপাল তরণী নিয়া ভাগে।
হঠাৎ তটিনী উঠিল দুলিয়া কালবৈশাখী ঝড়ে,
এক লহমায় মরিল ডুবে লাশ হইয়া ফের ঘরে।