শোনো প্রাণোচ্ছলে ভরপুর প্রবল চাঞ্চল্য হে যুবক
শোনো হে রমণী- লাজুকময় সময়ের নব ষোড়শী,
আজ যে লাল সবুজ রঙিন বস্ত্রে সেজেছো তোমরা,
যে উচ্ছ্বসিত হাসির প্রফুল্লে মেতে উঠেছ মূহুর্তে।
গতিময় রিক্সার উন্মুক্ত বায়ুতে আজ যে আনন্দের বন্যায় ভেসেছ মনে বীজ অঙ্কুরে খই তোমাদের কত গল্পের। মানিব্যাগ আর বুক পকেটে তোমাদের স্বকীয় যত স্বদেশী কাগজের মুদ্রা।
হে তরুণ তোমাদের বাসভূমির সম্মুখস্থ ও উদ্বাস্তু হতে উদ্ধার করেছে যে নাগরিকীয় জাতীয় পরিচয়পত্র, তোমাদের প্রদেশ ভূখণ্ডহীন হওয়া থেকে পেয়েছিলে গাঢ় সবুজের যে পাসপোর্ট, যার জন্য অকাতরে শোনিত ঝরিয়েছিল যারা, হয়েছে আত্মহারা - ওদের কথা কি মনে পড়ে?
মনে পড়ে কি! আজ এই ভূমি, এই লাল-সবুজের মানচিত্র যাদের জন্য পাওয়া! যেদিন স্বদেশ আমার ছিল পরতন্ত্র, মাংসাশী শকুনের কতৃক ক্ষতবিক্ষত- সেদিন আমার বুলি, আমার সাংস্কৃতি, আমার অস্তিত্ব ছিল হায়েনা-শকুনের গ্রাসে,পীড়ন নিপীড়নে
ছিল মাঠের কৃষক,বালু শ্রমিক, নিঃস্ব জনসাধারণ।
মনে পড়ে? পাষণ্ড পিশাচের আগ্নেয়াস্ত্র,রাইফেল, অশুভ মেশিনগানের কবলে নিথর হয়েছিল ঘুমন্ত টেক্সিওয়ালা, মোড়ে শুয়ে থাকা ফুটফুটে পথশিশু, শিক্ষাঙ্গনের তেজী উদীয়মান তরুণ আর নিস্পৃহ নির্দোষ জনতার উপর রুধির বন্যা ভাসিয়ে লাল করেছিল আমার এই ভূখণ্ড?
ভয়াল সেই সময়ে বৈরী'র মুখোমুখি হয়ছিলো বাংলার নির্ভীক অকুতোভয় সূর্য অপত্য'রা,
উম্মাদে বৈরী'র বুলেটের সম্মুখে পেতে দিয়েছিল বিশাল বক্ষ, ক্ষতবিক্ষত হয়ে জীবনকে গুটিয়ে দিয়েছিল ডিনামাইটে।
যাদের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বন্ধী রেখে করেছিল নির্মম অত্যাচার, কদর্য অশিষ্ট নির্যাতন, যে জননী তার জঠরের অপত্য'কে দিয়েছিল বলি, যে অসহায় পিতার চোখের সামনে বুলেটের আঘাতেই ছিন্নবিচ্ছিন্ন হওয়া তার তনয় এর খুলি।
আমার অন্তঃসত্ত্বা বোনের উদরে বেয়নেট দ্বারা খণ্ড খণ্ড করেছিল আগত জাতকের কোমল দেহ,
যাদের শোনিত, অশ্রুপাত, অপরিসীম বিসর্জনে লাল সবুজের এই কেতন, এই স্বদেশ, এই বস্ত্র, মহা উল্লাসে ভোগী আমাদের স্বকীয় মা-মাটির সুবাস।
হে তরুণ তোমরা জানো কি? আজ যে মাটিতে তোমাদের চরণচিহ্ন, ভুলে যেওনা ঐ রেণু ধূলোয় মিশে আছে অজানা অজস্র লাখো শহীদের হাসিমুখ, নিরন্তর ঘুমিয়ে আছে এই স্বাধীন মানচিত্রের আনাচে কানাচে, ঠাঁই দিও তাদের, রেখে দিও তোমাদের মনের মনিকোঠায়।