ঝরো-ঝরঝর বাদল দিনে গবাক্ষের পাশে এসে,
আসিছে কাহার বিরহী বংশী রোদন সুরে ভেসে।
কাহারা শুধিল ছলকে আজি অস্ফুট মম কানে,
কাহার লাগি বিরহী-পীড়ন উথলা আজি প্রাণে।
অগ্রে গহনে বৃক্ষশোভিত তরুবীথিকায় ঢাকা,
আর্দ্রীকৃত উদ্বয়ী আঁধারে গিয়াছে ডুবিয়া পাখা।
অবিশ্রান্ত বহিছে শ্রাবণী- পীড়িত নীরদ ঢল,
বিলাপ করে নভে আজিকে নয়নে ঝরিয়ে জল।
বিমূঢ়-বেদনা যামিনী-নিশি অশান্ত আজি প্রাণ,
চিত্ত উপবন বিগলিত গিয়া অভিমানে খানখান।
যাহার বক্ষে ললিত প্রসূণ অধরে গিয়াছে ফোটে,
বিমলা তনু সাজানো আজি অরুণাভ করপুটে।
সায়ংকালের হওন ভানুর গমন বিদায় বেলা,
দেখিছি তাহারে ব্রহ্মার সনে বেহুঁশে করে খেলা।
গোধূলি প্রীতির পুষ্প মাখি দিয়াছি তাহার পায়,
উজাড় করিয়া রাখিল বাঁধি আঁচোরের মমতায়।
ক্ষণিক তরে নিঠুর অবনী করিছে তাহারে গ্রাস,
মরমে পাঁজর গিয়াছে ভাঙিয়া নির্মম পরিহাস।
ব্যথাতুর হৃদয় যামিনী যাপন ক্রন্দন তব আজি,
তাহার বিলাপে বসিছে কাঁদি মাঠঘাট তরুরাজি।
চারিদিকে জড়ো তুফান বায়ু ভাঙিছে মনোঘর,
নাহিরে সহায় মগডাল আজি নিঃশেষে হল পর।
পীড়িত বায়ুর দম ছাড়িয়া আমারি পাঁজর পরে,
ছলো-ছলছল আঁখি ক্রন্দন অকালে পুষ্প ঝরে।